বেকার চালকদের লাইসেন্স করতেও অনিশ্চয়তার শঙ্কা

কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:২১ | প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:১৮

মাসব্যাপী ট্রাফিক আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা কর্মসূচির সময় ধরপাকড়ে বেকার হয়ে পড়েছে পরিবহণ শ্রমিকদের একটি বড় অংশ। আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন ভিন্ন পেশায়। এত দিন বিনা লাইসেন্সে মোটরযান চালিয়েছেন এমন চালকরা ধর্ণা দিচ্ছেন নতুন লাইসেন্সের জন্য। তবে টাকা খরচ করে লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি পাবেন কি না- অনিশ্চয়তার শঙ্কা আছে তাদের মধ্যে।

রাজধানীর স্বল্প দূরত্বের জনপ্রিয় দ্রুতগতির গণপরিবহণ লেগুনা। মূল সড়কে লেগুনা চলবে না ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এমন নিষেধাজ্ঞায় মুখে এই বাহনটির রুট ছোট হয়েছে। কোথাও কোথাও একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বেকার হয়েছে বিনা লাইসেন্সের লেগুনা চালকরা।

গাড়ির কাগজ নেই, নেই চালকের লাইসেন্স। এমন গণপরিবহনের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে মামলা ঠুকেছে ডিএমপি। কাগজপত্রের বড় ধরনের ত্রুটির জন্য ডাম্পিং স্টেশনে পাঠানো হয়েছে বাস, মিনিবাস, লেগুনা।

মামলা, জরিমানা থেকে বাঁচতে রাজধানীর অর্ধেকের বেশি লেগুনা এমনিতেই রাস্তা থেকে উঠে যায়। আটিবাজার থেকে নিউমার্কেট রুটে চলাচলকারী লেগুনার সংখ্যা ৪০টি। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে এই রুটে এখন ২০টির বেশি লেগুনা চলছে না।

একই ভাবে সড়কে লেগুনার সংখ্যা কমে এসেছে মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, নিউমার্কেট, গাবতলি, বেড়িবাঁধসহ পুরো রাজধানীতে।

আটিবাজার থেকে নিউমার্কেট রুটের লেগুনাচালক জহির বলেন, 'জাগো লাইসেন্স নাই, তারা তো গাড়ি চালাইতে পারতাছে না। গাড়ি নিয়া বাড়াইলে পুলিশ ধরে, মামলা দেয়। সারাদিন খাইটা কামাইব ২ হাজার টাকা, জরিমানা দিব চাইর হাজার। এর লাইগা অনেকেই বইসা আছে।'

ট্রাফিক বিভাগের সমালোচনা করে এই চালক বলেন, 'লেগুনায় অধিকাংশ ড্রাইভারের লাইসেন্স নাই এইডা সবাই জানে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না কইরা হুট কইরা অভিযান। সবারই তো বউ-পোলাপান আছে। এরা চলবে ক্যামনে।’

এত দিনের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন অনেক লেগুনা চালক ও লেগুনা সহকারী। তাদের একজন শফিক। গণপরিবহণ চালানোর লাইসেন্স না থাকায় বেড়িবাঁধ সড়কে ভ্যানগাড়ি চালান তিনি। এই পথে লেগুনা ও মিনিবাস কমে গেছে পরিবহন সংকটে অনেক যাত্রী ভ্যানগাড়িতে চড়ছেন। তাদের বহন করছেন এই লেগুনা চালক। ঢাকাটাইমসকে শফিক বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ। কিন্তু পেট তো মানে না। পরিবার আছে। যা পাইছি তাই করতাছি।‘

শফিক আরও জানায়, এই লাইনের আরও অনেকে যে যা পার কর। কয়েকজন নাকি সন্ধ্যার পর গাড়ি নিয়া বের হয়। তাতে যে টাকা আয় হয়, গাড়ির জমা দিয়ে তেমন কিছু থাকে না।

শফিকের সঙ্গে ভ্যানগাড়ি চালানোর কাজে যোগ দিয়েছে ভোরের আলো মিনিবাস পরিবহনের সহকারী হাবীব।

মাসব্যাপী অভিযানে টনক নড়েছে অনেক চালকের। যাদের লাইসেন্স নেই তারা লাইসেন্সের চেষ্টা করছেন। যাদের লাইসেন্সের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে, তারা নবাইয়নের জন্য যাচ্ছেন বিআরটিএতে।

চালক মো. ইউসুফ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আগে বিআরটিএর যে অবস্থা ছিল, এখন তেমন নাই। আমার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ, রেনু (নবায়ন) করতে দিছি। দালালের হাতেই দিছি। আগের মতো ঝামেলা নাই। একজনরে লাইসেন্স করাইয়াও আনছি। ১১ হাজার টাকা খরচ হইছে।’

এত টাকা খরচ করে অনেকে লাইসেন্স করতে চাচ্ছেন না। তাদের দাবি, তিন হাজার টাকার লাইসেন্স পেতে ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়। এই টাকা জোগাড় করা অনেকের পক্ষে কঠিন।

এ ছাড়া অনেকের অনিশ্চয়তার ভয়ে আছেন, বিশেষ করে লেগুনার চালকরা। এত টাকা খরচ করে লাইসেন্স নেয়ার পর যদি সরকার লেগুনা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।

অধিকাংশ লেগুনা, বাস ও মিনিবাস চালক ভাড়ায় গাড়ি চালান। অনেক গাড়ির কাগজ ঠিক নেই। এত অনিশ্চয়তার বিপরীতে লাইসেন্স তৈরীর কথা ভাবতে পারছেন না বিল্লাল, মাসুদ, খাইরুলদের মত গণপরিবহণ চালকরা।

(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :