বন বিড়ালে ৬০ কুমিরছানা খাওয়ার ‘গল্প’

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:২৫ | প্রকাশিত : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:০৭

সুন্দরবনের করমজল পর্যটন এলাকায় অবস্থিত বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের চৌবাচ্চায় থাকা লোনাপানির ৬০টি কুমির ছানার সন্ধান মিলছে না। বনবিভাগ প্রথমে এসব কুমির চুরি হয়েছে বলে দাবি করলেও এখন বলছে তা বন্যপ্রাণীর পেটে গেছে। ঘটনার পর বনবিভাগ ক্যামেরা ট্রাপিং শুরু করলে বিষয়টি ধরা পড়ে বলে তাদের দাবি।

বনবিভাগ জানায়, ওই ক্যামেরায় বনের একটি কালো ডোরাকাটা বনবিড়াল শনাক্ত হয়।

রবিবার রাতে ওই বিড়ালটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে দাবি বনবিভাগের।

তবে অভিযোগ রয়েছে, বনবিভাগের লোকেরা কুমিরছানা পাচার করে প্রথমে চুরি ও পরে বনবিড়ালের গল্প বানিয়েছেন। বিড়াল কুমিরছানা ধরে নিয়ে যাচ্ছে- এমন স্থির ছবি বা ভিডিও সাংবাদিকরা দেখতে চাইলে কর্মকর্তারা তা দেখাতে পারেন নাই। এমন কি তারা যে স্থির ছবি দেখিয়েছেন তা বিড়ালটিকে মারার পরের। এতে অনেকের মনে সন্দেহ- একটি বিড়াল ধরে সেটিকে গুলি করে মেরে ছবি তোলা হয়েছে।

কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বন্দ্বের জেরেই কুমিরছানা গায়েব হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে বলে জানা যায়।

এই কুমির চুরির ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে তাদের এক কর্মচারী (লস্কর) মাহাবুব আলমকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বনবিভাগ। গঠন করে তদন্ত কমিটি। করা হয় চুরির মামলা।

সেসময় তদন্ত কমিটির প্রধান পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. মেহেদীজ্জামান জানিয়েছিলেন, বনবিভাগের লস্কর মাহাবুব আলম ও অস্থায়ী শ্রমিক জাকির হোসেন এই কুমিরগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। লস্কর মাহাবুবের সহযোগিতায় জাকির এই কুমিরগুলি পাচার করেছে বলে তার প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে বলে সেসময় তিনি দাবি করেছিলেন।

গত ২৯ জানুয়ারিতে প্রথমে ৪৩টি কুমির ছানা হারিয়ে যাবার বিষয়টি বনবিভাগের নজরে আসে। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে চৌবাচ্চায় রাখা আরও ১৭টি কুমির নিখোঁজের খবর পায় বনবিভাগ। তারা কুমির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান করতে বসায় ক্যামেরা ট্রাপিং।

করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রোমিও নামে একটি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের দুইটি মা কুমিরসহ ২১৭টি বাচ্চা কুমির রয়েছে।

এছাড়া ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার জলোচ্ছ্বাসে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে ছোট-বড় ৬১টি কুমির পানিতে ভেসে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাইরের কিছু বড় প্রাণী ১৮টি কুমিরের বাচ্চা খেয়ে ফেলে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বিকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুইটি চৌবাচ্চা থেকে ছয়মাস বয়সী মোট ৬০টি কুমির ছানার সন্ধান মিলছে না। এরমধ্যে ছয়টি মৃত, আঠারোটির শরীরের বিভিন্ন অংশ পাওয়া গেছে। নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে বনবিভাগ বিপাকে পড়ে। ৫ ফেব্রুয়ারি নতুন করে ১৭টি কুমির ছানা নিখোঁজ হলে এর কারণ খুঁজতে বসানো হয় ক্যামেরা ট্রাপিং। ওইদিন রাতেই ক্যামেরা ট্রাপিংয়ে বনের একটি চিতা বিড়াল ধরা পড়ে।

এই বিড়ালটি কুমির ছানাগুলোকে হত্যা করে তার নিজের খাবার করেছে। বন্যপ্রাণীটি হিংস্র হওয়ায় তাকে দূর থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

গত ২ ফেব্রুয়ারি কুমির ছানাগুলো চুরি হয়েছে দাবি করলেন এবং চুরির ঘটনায় একজনকে শাস্তি দিলেন কেন তা জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি। তবে তিনি বলেছেন কুমির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তদন্তে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এখনো তদন্ত করছে।

এই কমিটি দুই কর্মদিবসে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা তদন্তের জন্য আরও সাতদিন সময় চেয়েছে।

বিলুপ্ত প্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি।

(ঢাকাটাইমস/০৬ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :