পরোপকারী রবিউলের শেষ ইচ্ছা পূরণ হবে তো?

মঞ্জুর রহমান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ জুলাই ২০১৭, ১৩:৪৩ | প্রকাশিত : ০১ জুলাই ২০১৭, ০৮:৫১

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার খবরে ছুটে গিয়ে প্রাণ হারানো পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল করিম ছিলেন একজন পরোপকারী মানুষ। নিজের সুখ, স্বাচ্ছন্দ নয়, সমাজের পিছিয়ে পড়া, দুর্দশাগ্রস্থ মানুষদের জন্য তিনি চেষ্টা করেছেন সাধ্যমত। গড়ে তুলেছিলেন প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল। পরিকল্পনা করছিলেন একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ার। কিন্তু একটি মৃত্যু এই স্বপ্ন আপাতত থামিয়ে দিয়েছে।

রবিউল নিহত হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করায় তারা সন্তুষ্ট। কিন্তু শোকাহত এই পরিবারের চিন্তা এখন রবিউলের একটি শেষ স্বপ্নকে ঘিরে। তা হলো রবিউলের নিজ হাতে গড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত বিশেষায়িত বিদ্যালয়টি আবাসিক করে সেখানে একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ।

রবিউলের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, সরকার, প্রশাসন এগিয়ে আসলে রবিউলের শেষ স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। রবিউলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে পরিবারের এই আহ্বান যেন সামনে চলে এসেছে।

গত বছরের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। পরে ভেতরে তারা ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। সংবাদ পেয়ে জিম্মিদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মানিকগঞ্জের সন্তান রবিউল করিম। এ সময় জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন তিনি ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আহমেদ।

রবিউল করিমের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসুচি হাতে নিয়েছে তার হাতে গড়া ‘ব্লুমস’ বিদ্যালয়ের কার্যকরী কমিটি ও এলাকাবাসী।

গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রামে রবিউলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বড় ছেলে সাজিদুল করিম বারান্দায় খেলা করছে। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘরের দোতলা থেকে ১১ মাসের মেয়ে রায়নাকে কোলে নিয়ে নেমে আসেন তার স্ত্রী উম্মে সালমা। পরে বাবা হারানো একমাত্র সন্তানের আবদারে ভাই, বোনের খেলার গাড়িটি পেছন থেকে ঠেলতে শুরু করেন রবিউলের স্ত্রী। স্বামী হারানোর কষ্ট নিয়ে সন্তানদের সব ইচ্ছা পূরন করে চলছেন তিনি। কারণ যে কাজটি হয়তো স্বামী করতেন এখন বাধ্য হয়ে তাকেই সেই কাজ করতে হচ্ছে।

খেলা শেষে মাকে টেনে ঘরে নিয়ে যান ছেলে সামিউল করিম সামি। ঘরে বসেই সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন উম্মে সালমা।

কেমন আছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দুঃখ আছে কিন্তু কষ্ট নেই। আমি হারিয়েছি একজন ভাল বন্ধু। যে বন্ধুর সঙ্গে আমি সবকিছু শেয়ার করতাম। আর আমার মনে কষ্ট এই কারণে নেই, কারণ আমি একজন শহীদের স্ত্রী।

উম্মে সালমা বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন ও সরকার রবিউলের মৃত্যুর পর যেভাবে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছে বা এখনো করছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। সব সময় পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে আমাদের মনে কোন ধরণের কষ্ট বা ক্ষোভ নেই।’

সকারের কাছে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন আছে-বলেন রবিউলের স্ত্রী। সেটা কী-জানতে চাইতেই তিনি বলেন, ‘রবিউল করিমের ইচ্ছা ছিল তার হাতে গড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্মিত বিশেষায়িত বিদ্যালয়টি আবাসিক করে সেখানে একটি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করা। রবিউল না থাকায় আমাদের পরিবারের পক্ষে এটা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই সরকার আমাদের পাশে দাঁড়ালে তার ইচ্ছাটা পুরণ হতো।’

রবিউলের স্ত্রীর জন্য চাকরির ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার মা বলেণ, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণ হলে স্বামী হারানো উম্মে সালমা মানসিকভাবে ভাল থাকবে।’

রবিউলের ছোট ভাই সামসুজ্জামান শামস জানান, তার ভাইয়ের হাতে গড়া বিশেষায়িত স্কুলটিতে বর্তমানে ৪১জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। রবিউলের মুত্যুর পর তার বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বন্ধু, চাকরির ক্ষেত্রে শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিদ্যালয়টির পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।

শামস বলেন, রবিউল করিমের শেষ ইচ্ছা ছিল প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় আবাসিক করে সেখানে গরিব, দুঃখী ও সমাজের অবহেলিত বয়স্ক মানুষদের জন্য একটি বৃদ্ধাশ্রম করা। কিন্তু এখন তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বাড়ির দোতলায় গিয়ে দেখা যায় কান্না করছেন রবিউলের বৃদ্ধা মা করিমুননেছাকে। তিনি বলেন, ‘একটা বছর হলো সন্তানের সঙ্গে কথা হয় না। এই কষ্ট বুঝাবার নয়। অনেক সন্তান মা, বাবার আগে চলে যায়। কিন্তু আমার সন্তানের মৃত্যুটি অন্যরকম।’

রবিউলের মৃত্যুবার্ষিকীতে কর্মসূচি

রবিউল করিমের প্রথম মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে শনিবার দিনব্যাপী নানা কর্মসুচি হাতে নিয়েছে তার হাতেগড়া বিশেষায়িত স্কুলের কার্যকরী কমিটি ও এলাকাবাসী। বিকনিং লাইট অরগানাইজেশন অব ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি (ব্লুমস) এর সভাপতি জি আর শওকত বলেন, দিনব্যাপী এই কর্মসুচির মধ্যে থাকবে শোক র‌্যাব, রবিউল করিমের কবর জিয়ারত ও তার জীবনীর উপর আলোচনা সভা।

(ঢাকাটাইমস/০১জুন/বিইউ/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :