যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

উ. কোরিয়ার উপর কি প্রভাব পড়বে?

সদর উদ্দীন লিমন
| আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:৫৭ | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:৫৩

গত ২৪ সেপ্টেম্বর নতুন করে আটটি দেশের উপর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই তালিকায় রয়েছে উত্তর কোরিয়া, ইরান, সিরিয়া, শাদ, ইয়েমেন, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ভেনেজুয়েলা।

আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা আদেশ কার্যকর হবে। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে যেকোনও দেশের শরণার্থীদের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত ২৯ জুন থেকে শুরু করে ১২০ দিন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৭ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে মোট সাতটি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের উপর সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা আদেশ জারি করেন। এই তালিকায় ছিল ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, সুদান, ইয়েমেন ও সোমালিয়া।

কিন্তু মার্চে আরেক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই তালিকা থেকে ইরাককে বাদ দেয়া হয়। এবারের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে সুদান। নতুন করে যুক্ত হয়েছে উত্তর কোরিয়া, শাদ ও ভেনেজুয়েলা। এই আটটি দেশের মধ্যে অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও শুধু ভেনেজুয়েলার ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন। ভেনেজুয়েলার সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উত্তপ্ত বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যকার উত্তেজনা। এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা। গত ৩ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এরপর থেকে ওয়াশিংটন-পিয়ংইয়ং দ্বন্দ্ব আরও প্রবল হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন পাল্টাপাল্টি ‘নোংরা’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন কিম জং উনকে ‘পাগল’ বলে উল্লেখ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ডটার্ড বা ভীমরতিগ্রস্ত বৃদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছেন কিম জং উন।

বলতে গেলে বয়সে কিম জং উন একেবারেই তরুণ। তার বর্তমান বয়স ৩৩ বছর। ‘বেবি ফেস’। অর্থাৎ, চেহারা একেবারেই ‘বালক সুলভ’। অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান বয়স ৭১ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থাৎ, প্রজন্মের বিবেচনা করলে ট্রাম্প-উনের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। তবে, রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে দু’জনেরই মিল হচ্ছে একটা জায়গা। সেটা হচ্ছে, নিজের দেশকে রক্ষা করা এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রে উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর এখন আলোচনা হচ্ছে যে, আসলে এই নিষেধাজ্ঞা উত্তর কোরিয়ার উপর কতটুকু প্রভাব ফেলবে। অনেকেই বলছেন, এর কারণে আসলে উত্তর কোরিয়ার উপর কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ, এমনিতেই উত্তর কোরিয়ার নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রে খুবই কম ভ্রমণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন না কূটনীতিকরা। সুতরাং, উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে কোনও সমস্যা নেই।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে পড়েছি যে, চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর কোরিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চেং শিয়াওহে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার উপর এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব হতে পারে ‘খুবই সীমিত’।

উত্তর কোরিয়া বিষয়ে আরেকজন বিশেষজ্ঞ চীনের লিয়াওনিং একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের লু চাও বলেছেন, ‘বাস্তবিকভাবে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। এটি হচ্ছে এক ধরনের প্রোপাগান্ডা’।

অনেকেই আবার বলছেন, এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আসলে উত্তর কোরিয়াকে ভয় দেখানোর জন্য নয়। এর পেছনে আরকেটি কারণ রয়েছে। সেটি হচ্ছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ যে দেশগুলোর উপর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা করেছে তার কারণে ট্রাম্প প্রশাসন প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়েছে। সেই সমালোনা থামাতেই ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পেছনে যে বিষয়টি প্রধান হিসাবে দেখাচ্ছেন সেটি হচ্ছে, নিরাপত্তা। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমেরিকাকে নিরাপদ করাটাই আমার প্রধান উদ্দেশ্য’। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধের প্রধান বিষয়টি হচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার। অর্থাৎ, উত্তর কোরিয়াকে যদি যুক্তরাষ্ট্র হুমকি হিসাবে দেখে তাহলে সেই হুমকি তো আসছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিতর থেকে নয়, বাইরে থেকে। সুতরাং, এখানে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা কি আসলে কোনও কাযর্কর পদক্ষেপ হতে পারে?

লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :