পদ্মা সেতু ঠেকাতে চক্রান্তকারী খুঁজতে কমিশন কবে?

মহউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:০৫
অ- অ+

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের স্বপ্নের এই স্থাপনা নির্মাণই বানচাল করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এই প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ারও তিন বছর পর কানাডার আদালতে করা এক মামলার রায়ে এই দুর্নীতি চেষ্টাকে ‘গালগপ্প’ বলা হয়েছে। আর এই রায়ের পর বাংলাদেশের উচ্চ আদালত সরকারকে এই চক্রান্তের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে কমিশন গঠনের নির্দেশ দেয়। কিন্তু একাধিকবার সময় বেঁধে দেয়া হলেও সেই কমিশন গঠন করা হচ্ছে না।

পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তির বিষয়ে মিথ্যা গল্প সৃষ্টিকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে সবশেষ গত ২ আগস্ট কমিশন গঠন করে এ সংক্রান্ত তথ্য আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ৩০ দিনের মধ্যে সেই তথ্য দেয়ার কথা ছিল মন্ত্রিপরিষদ সচিবের। কিন্তু দেড় মাসেরও বেশি সময় পার হলেও কমিশন গঠনের এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘এখনো সেই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে এটি নিয়ে আইনমন্ত্রণালয় কাজ করছে। এটি এখনো হাইকোর্টে আছে। শুনানি হয়নি। আদালত চূড়ান্তভাবে নির্দেশনা দিলে আমরা উদ্যোগ নেব।’

জানতে চাইলে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই।’

এর আগে গত ২০ মার্চ পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা কাহিনি সৃষ্টির নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারী কারা এবং তা তদন্তে কমিশন গঠন হয়েছে কি না- তা ৭ মের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সেদিন প্রতিবেদন না পেয়ে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে নতুন তারিখ দিয়েছিল।

পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা কাহিনি সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে একটি কমিশন বা কমিটি গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। একই সঙ্গে রুলে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় কেন আনা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়।

রুলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, যোগাযোগ সচিব ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়।

একই সঙ্গে ‘ইনকুয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬’ অনুসারে কমিশন বা কমিটি গঠনে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা ৩০ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ইউনূসের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান, বিচার দাবি’ শীর্ষক একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এটিসহ কয়েকটি দৈনিকের প্রতিবেদন নজরে এলে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এ আদেশ দেন।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য চুক্তি করেও পরে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে তা স্থগিত এবং পরে বাতিল করে। পরে তাদের বাদ দিয়েই নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ তদারকির পাঁচ কোটি ডলারের কাজ পেতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মীরা ২০১০ ও ২০১১ সালে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে মামলা হয়েছিল কানাডার আদালতে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত চলতি বছর ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মামলার তিন আসামিকে খালাস দেন।

রায়ে বিচারক বলেছেন, এ মামলায় প্রমাণ হিসেবে যেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গাল-গল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ তোলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ এবং এতে বাংলাদেশিরাও জড়িত ছিলেন। সম্প্রতি সংসদে তিনি বলেন, হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আটকে ছিলেন নোবেলজয়ী বাংলাদেশী মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল।

পদ্মা সেতু নিয়ে জটিলতা

১৯৯৮ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ই পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সে সময় তারা কাজ তেমন আগাতে পারেনি। ২০০৯ সালে দলটি আবার ক্ষমতায় আসার পর এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ এগিয়ে দেয়। আর এতে সবচেয়ে বেশি টাকা দেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের।

২০১০ সালের জুলাইয়ে সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দরপত্র মূল্যায়ন করে পাঁচ দরদাতাকে বাছাই করা হয়। তবে বিশ্ব ব্যাংক তা ঝুলিয়ে রাখে। এরপর সংস্থাটি দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে অর্থায়ন তুললে অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।

বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১০ সালে নিজেরা তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ সম্পর্কে নিজেদের তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে (আরসিএমপি) অনুরোধ জানায়। ওই অনুরোধে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডায় এসএনসি লাভালিনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে রমেশ শাহ ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে আদালত জানায়, বিশ্ব ব্যাংক চারজন বেনামী তথ্যদাতার বরাতে কানাডার আদালত আরসিএমপির কাছে অভিযোগ পাঠায়।

বিশ্বব্যাংক তখন এই প্রকল্প থেকে সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে সরিয়ে দেয়াসহ নানা দাবি জানায়। কিন্তু সরকার শুরু থেকেই বলে আসছিল এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

তবে বিশ্বব্যাংক তার দাবিতে অটল ছিল। পরে ২০১২ সালের ৩০ জানুয়ারি গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে এই প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার কথা জানায় বিশ্বব্যাংক।

এই প্রকল্পে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটির ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। উন্নয়ন সংস্থা এডিবিসহ আরও বেশ কয়েকটি সংস্থারও অর্থায়নের কথা ছিল। চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ায় অন্য সংস্থাগুলোও সরে যায় এবং পরে সরকার নিজ অর্থায়নে সেতুর কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ হয়ে গেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আগাচ্ছে সরকার।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/এমএম/ডব্লিউবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গাজীপুরে চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪  
১৮ দিন বন্ধের পর ঢামেক খুলছে শনিবার
আগামী রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে: সংবাদ সম্মেলনে প্রেস উইং
১১৩ কোটি টাকাসহ সাইফুল আলমের ৫৩ ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা