২৬ বছর পর সংস্কার হচ্ছে জাবির অমর একুশে ভাস্কর্য

বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিমূলক ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অমর একুশে ভাস্কর্য। ভাষা শহীদদের স্মরণ ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ধারণ করা এই ভাস্কর্যটির অবস্থান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২৬ বছর আগে নির্মিত এই ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা আসলেও অযত্ন, অবহেলা, সুষ্ঠু তদারকি আর সংস্কারের অভাবে যখন বিলীন হতে চলেছে মহান ভাষা আন্দোলনের স্মারক এ ভাস্কর্যটি। তখনই টনক নড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ পরিবেশন এবং ব্যক্তিগতভাবে বারবার অবহিত করার পর অবশেষে এই প্রথমবারের মতো সংস্কারের পথে ভাস্কর্যটি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে অবস্থিত এই ভাস্কর্যটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। এর পুরো ব্যয়ভার বহন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সম্প্রতি শিল্পী জাহানারা পারভীনের সঙ্গে আলোচনার পর তার তত্ত্বাবধায়নেই ভাস্কর্যটি সংস্কার করা হচ্ছে বলে ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই সম্পত্তি। এটি দেখাশোনা করা আমাদেরই দায়িত্ব। আমরাও অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম ভাস্কর্যটি সংস্কার করার। কিন্ত অর্থ সঙ্কুলান না হওয়ায় আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। এখন নিজস্ব অর্থায়নেই আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করছি, এটি তার আগের রূপে ফিরে আসবে।
সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে ভাস্কর্যটির স্থপতি শিল্পী জাহানারা পারভীন বলেন, অনেকদিন ধরেই ভাস্কর্যটি সংস্কারের বিষয়ে কথা চলছিল। পর্যাপ্ত অর্থ যোগান দিতে না পারায় এতাদিন সংস্কার কাজ শুরু করা যায়নি। এখন প্রশাসনের উদ্যোগে এবং আমার তত্ত্বাবধানে কয়েকজন প্রশিক্ষিত শ্রমিক দ্বারা সংস্কার কাজটি পরিচালিত হচ্ছে। তবে এখনো পর্যাপ্ত পুরো অর্থ সঙ্কুলান না হওয়ায় এখন শুধু মূল স্কাল্পচারের কাজটি করা হচ্ছে। সংস্কার কাজটি সম্পূর্ণ হতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।
নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ধারণকারী ভাস্কর্যটি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সাধারণ শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার ভাস্কর্যটির মেরামতের দাবি জানিয়ে আসছিল।
প্রশাসনের উদ্যোগকে সাধুবাধ জনিয়ে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আতিক বলেন, আমি মনে করি- মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্যটিকে অবহেলা করা মানে ভাষা শহীদদের অবহেলা করা। অযত্ন অবহেলায় এভাবে ভাস্কর্যটি হারিয়ে যেতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে এর দায় যেমন আমরা এড়াতে পারব না, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এড়াতে পারবে না। প্রশাসনের এ ধরনের উদ্যোগে আমরা আনন্দিত।
১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রধান সড়ক ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে শিল্পী জাহানারা পারভীনের নকশার ভিত্তিতে ‘অমর একুশে’ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থায়নে ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছিল।
(ঢাকাটাইমস/২৪অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)

মন্তব্য করুন