পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুন রূপে সাজছে গজনী

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৮:৫৫

পর্যটনের আনন্দে, তুলসিমালার সুগন্ধে এই স্লোগানে শেরপুরকে দেশে ও বিদেশে ব্র্যান্ডিং করার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে, আসন্ন পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জেলার সীমান্তবর্তী গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রটি নতুন রূপে সাজাতে শতাধিক শ্রমিক দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতেই দ্রুত গতিতে চলছে উন্নয়ন কাজ। অন্যদিকে অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রটির পাশেই বন বিভাগের ন্যাশনাল পার্ক স্থাপনের প্রস্তাবে এর গুরুত্বও বেড়ে গেছে বহুগুণ।

পর্যটকরা দাবি করেছেন, নান্দনিক এই অবকাশ কেন্দ্রের আশপাশে আবাসিক হোটেল গড়ে তোলা হলে ভ্রমণের পরিপূর্ণ তৃপ্তি পেতেন তারা।

অন্যদিকে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনকে বিলাস বহুল ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগে হোটেল, মোটেল স্থাপনে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৯৩ সালে শেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদারের উদ্যোগে শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতীর কাংশায় গজনীর পাহাড়ি বনাঞ্চলের ২৭০ বিঘা জমিতে এ অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এই অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রটি ২০১৪ সালে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে পর্যটক শূন্যতা দেখা দেয় এই কেন্দ্রটিতে। অপার সম্ভাবনাময় এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে দেশ ও বিদেশের পর্যটকদের সামনে নতুন করে উপস্থাপন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন।

এরই ধারাবাহিকতায় গত এক বছর যাবত শতশত শ্রমিক দিনরাত এক করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন স্থাপনা ও ভাস্কর্য মেরামতের কাজ শুরু করে। ইতোমধ্যে ডায়নোসর, বাঘ, হাতি, দোয়েল, ঈগলসহ ১৪ প্রকার ভাস্কর্যের রংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ময়ুর, কাঠবিড়ালি আর বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ভাস্কর্য নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রে এবার যোগ করা হয়েছে চিড়িয়াখানা। সেখানে রাখা হয়েছে বিরল প্রজাতির মুরগি, বানর, মেছোবাঘ, হরিণ, সজারু, লজ্জাবতি বানর, বিলুপ্তির তালিকায় থাকা গন্ধগকুল, ঈগল, পেঁচা, টিয়া, তোতাসহ ১২ প্রজাতির পাখি। এছাড়া শেরপুর সম্পর্কে পর্যটকদের অবহিত করতে কেন্দ্রে খোলা হবে ব্র্যান্ডিং কর্নার।

গাজীপুরের সালনা থেকে আসা কবিতা খানম ও তার স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা আসফাক বলেন, প্রকৃতির এমন অপার সৌন্দর্য একদিনে অবলোকন করা সম্ভব না, রাত যাপনের জন্য প্রয়োজন হোটেল, মোটেল আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা।

ঢাকা থেকে আসা ফটোগ্রাফার নাঈম ইসলাম বলেন, ভোরেই গজনীতে এসে পৌঁছেছি। সারাদিন ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কখন যে বেলা শেষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। এখানে ভালোভাবে থাকার এবং খাবারের ব্যবস্থা করা হলে সুবিধা হতো। আশেপাশে কোন হোটেল না থাকায় কষ্ট করে হলেও শেরপুর শহরে পৌঁছাতে হবে। তিনি এই পর্যটনকেন্দ্রে উন্নতমানের হোটেল নির্মাণের দাবি জানান।

বিভিন্ন ধরনের রাইডার, কৃত্রিম জলপ্রপাত, শিশু পার্ক, লেক, ক্যাবলকার নির্মাণের কাজ রয়েছে শেষ পর্যায়ে, চলতি ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখে কেন্দ্রটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক কাজের তদারকিতে থাকা জেলা নাজির রফিকুল ইসলাম ও গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের পরিকল্পনাবিদ হারুণ অর রশিদ।

অন্যদিকে অবকাশ কেন্দ্রটির পাশেই বন বিভাগের ন্যাশনাল পার্ক স্থাপনের প্রস্তাবে এর গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে বহুগুণ বলেন ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল্লা আল মামুন।

চিড়িয়াখানার ইজারাদার ফরিদ আহমেদ বলেন, পর্যটন কেন্দ্রে এবার নতুন সংযোজন করা এই চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, মেছোবাঘ, লজ্জাবতি বানরসহ অন্যান্য জীব-জন্তু আনা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন কেন্দ্রে নতুন নতুন ভাস্কর্য নির্মাণ হওয়ায় এবার ব্যবসায়িকভাবে তিনি লাভবান হবেন বলে জানান। এই রকম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন গাড়ির স্ট্যান্ডের ইজারাদার আব্দুল হাই।

পর্যটন কেন্দ্রের নিরাপত্তা কঠোর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ট্যুরিস্ট পুলিশ চেয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম।

পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনকে বিলাস বহুল ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণের জন্য ঝিনাইগাতীর কাছেই ১৫ বিঘা জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সেই হোটেল থেকে সরাসরি ঢাকা যেতে ব্যবস্থা রাখা হবে অত্যাধুনিক বাস সার্ভিস। এর পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ হোটেল, মোটেল স্থাপন করতে চাইলে তাদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :