রাজশাহী সিটির ২১-২২ ওয়ার্ড

ডিজিটাল ওয়ার্ডের অঙ্গীকার প্রার্থীদের

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ২৫ জুলাই ২০১৮, ০৮:৪৩

রাজশাহী সিটি নির্বাচনের আর মাত্র ছয় দিন বাকি। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচন ততই জমে উঠছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি বাদ নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাই। তারও বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কাকে ভোট দেবেন এ নিয়ে হিসাব কষছেন ভোটাররাও। বর্তমান কাউন্সিলর এলাকার জন্য কী করেছেন, নতুনদের দায়িত্ব দিলে কী করতে পারবেন- এসব নিয়েই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে আলোচনা। প্রার্থীরাও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিতে। নগরীর ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীরা নাগরিক সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ডিজিটাল ওয়ার্ড গঠনের।

নগরীর শিরোইল, খুলিপাড়া, বাস্তুহারাপাড়া ও সাগরপাড়া বল্লভগঞ্জসহ আশপাশের কয়েকটি মহল্লা নিয়ে ২১ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এখানে ভোটার সংখ্যা ৭ হাজার ৮৫৫ জন। কাউন্সিলর পদে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। তারা হলেন- বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা নিযাম উল আযীম (মিষ্টি কুমড়া), সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা এস শহিদ আহমদ বাদল (ঘুড়ি), বিএনপি সমর্থক হাসিবুল হক (ঠেলাগাড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান রেবু (রেডিও)।

এ ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নিযাম উল আযীম ২০০২ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তিন দফা এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১৫ জুন থেকে পরবর্তী ১৬ মাস তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ সময় কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করায় ওয়ার্ডটির উন্নয়নে ভ‚মিকা রয়েছে। তবে তা প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে ভোটারদের।

এ নিয়ে জানতে চাইলে নিযাম উল আযীম বলেন, আমি এলাকার উন্নয়নে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করেছি। এলাকার রাস্তাঘাট এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে আমার ওয়ার্ডের সর্বোচ্চ উন্নয়ন হয়েছে। শুধুমাত্র এই সময়ে আমি এ ওয়ার্ডের উন্নয়নে সাড়ে আট কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি।

তিনি বলেন, অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চাই। এ জন্য আমার সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকার সুর্য্যকণা উচ্চবিদ্যালয়টি আমি পরিপূর্ণভাবে ডিজিটাইজড করতে চাই। এছাড়া ওয়ার্ডটিকে ডিজিটাল বেষ্টনির মধ্যে আনার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ইচ্ছা আছে। ভোটাররা যদি আমাকে আগামীতে নির্বাচিত করেন তাহলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ একটি মাদকমুক্ত ওয়ার্ড উপহার দেয়াই হবে আমার অঙ্গীকার।

এ ওয়ার্ডের আরেক শক্তিশালী প্রার্থী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি এস শহীদ আহমদ বাদল। এরশাদ পতনের পর ৯ বছর কমিশনার ছিলেন। তিনি বলেন, কমিশনার থাকাকালে এলাকার যে উন্নয়ন করেছি তা পরে আর হয়নি। গত নির্বাচনে ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করে আমাকে হারানো হয়েছিল। তবু আমি এলাকার মানুষকে ছেড়ে যাইনি। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে ভর্তি করতে সহায়তা করেছি। বেকারদের চাকরি নিয়ে দিয়েছি। বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থেকেছি। তাই আশা করছি, ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবেন।

এছাড়া এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি সমর্থক হাসিবুল হক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান রেবুর নামও ভোটারদের আলোচনায় রয়েছে। তবে তারা ধারণা করছেন, এবার এ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর নিযাম এবং সাবেক কমিশনার বাদলের মধ্যেই ভোটযুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে খুলিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা কারিবুল হক বলেন, সব প্রার্থীকে বিচার-বিশ্লেষণ করেই তিনি ভোট দিবেন।

নগরীর কুমারপাড়া, আলুপট্টি ও সাগরপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি মহল্লা নিয়ে ২২ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৬১২ জন। কাউন্সিলর পদে লড়ছেন তিনজন প্রার্থী। তারা হলেন- বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল হামিদ সরকার টেকন (ঘুড়ি), ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা পারভেজ রিপন (ঠেলাগাড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদরুল আমিন (মিষ্টি কুমড়া)।

আব্দুল হামিদ সরকার টেকন ১৯৯৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বেই ওয়ার্ডটির রাস্তাঘাট, ড্রেনসহ অবকাঠামোগত সব ধরণের উন্নয়ন হয়েছে। টেকনের রয়েছে পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য। তার ভাই ডাবলু সরকার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অন্য ভাইয়েরাও আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের মহানগর কমিটির নেতৃত্ব পর্যায়ে রয়েছেন।

টেকন বলেন, দীর্ঘ দুই যুগ কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করছি। একসময় এ ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার ছিলো বেহাল দশা। এখন সেগুলো নেই। কিছু এলাকায় সামান্য জলাবদ্ধতা এবং ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট রয়েছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন পরাজিত হবার পর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। এ কারণে গত পাঁচ বছরে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক কাজ করতে পারিনি। আগামীতে নির্বাচিত হলে নাগরিক ভোগান্তি সম্পূর্ণভাবে দূর করব। ডিজিটাল ওয়ার্ড হিসেবে এলাকাটিকে গড়ে তুলতে চাই।

আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা পারভেজ রিপন। তিনি বলেন, ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করলে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় হবে নাগরিক অধিকার আদায়ের কেন্দ্র। কাউন্সিলর হিসেবে যা দায়িত্ব পাব, সব সততার সাথে করে যাব। ওয়ার্ডের পদ্মাপাড়ে এখনও উন্নয়ন হয়নি। আমি সে এলাকা বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলব। গড়তে চাই একটি ডিজিটাল ওয়ার্ড। আশা করছি, সাধারণ ভোটাররা আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।

আগামী ৩০ জুলাইয়ের সিটি নির্বাচন নিয়ে এলাকার ভোটাররা বলছেন, বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ সরকার টেকনের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নেই। এলাকায় তিনি জনপ্রিয়। আর বিএনপি নেতা মির্জা পারভেজ রিপন প্রথম ভোট করছেন। তার ব্যাপারেও ভোটাররা চিন্তা-ভাবনা করছেন। তবে দলীয় প্রভাবে এখানে বর্তমান কাউন্সিলরই এগিয়ে থাকবেন।

ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/আরআর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :