মানবিক এক সিএনজিচালক

বোরহান উদ্দিন
  প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:০৫| আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:২৭
অ- অ+

রাজধানীতে অনেক সিএনজি অটোরিকশা চলে। এর মধ্যে ব্যতিক্রম দুলাল চন্দ্র দাসের সিএনজি অটোরিকশাটি। কারণ পেছনের দিকটাতে তাকালে চোখ আটকে যাবে মানবিক কিছু শব্দ দেখে। আর ভেতরের দিকে নজর দিলে তো চমকে উঠবেন যে কেউ। একটি সিএনজিতে এতগুলো প্রয়োজনীয় জিনিস থাকতে পারে সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না।

অটোরিকশার পেছনে দুলাল চন্দ্রের নাম ও ফোন নম্বর দিয়ে লেখা আছে, ‘গরিব ও অসহায় রোগীদের জন্য ফ্রি যাতায়াত’। মাঝখানে লেখা, জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেতের অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি ও কেয়া কসমেটিকসের পক্ষ থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত’। আর অটোরিকশার ভেতরে আছে ছোট্ট একটি ফ্যান, আয়না-চিরুনি, পাউডার, টিস্যু বক্স, এয়ার ফ্রেশনার, ছোট্ট প্যাড, মোবাইলের চার্জার, সাউন্ড বক্স, নেলপলিশ, মোবাইল ট্যাব ও ডায়েরি।

গতকাল দুপুরে দুলাল চন্দ্র দাসের সঙ্গে দেখা রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে। রাস্তার পাশে নিজের অটোরিকশাটি রেখে বাইরে হাঁটছিলেন। হঠাৎ পেছনের লেখাগুলোতে চোখ আটকে যায়। হাতে থাকা ফোন দিয়ে কয়েকটা ছবি তুলতেই পাশে এসে দাঁড়ান দুলাল চন্দ্র।

প্রতিবেদকের সঙ্গে অল্প সময়ের আলাপে উঠে আসে তার এমন উদ্যোগের পেছনের কাহিনি। জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদিতে’ যাওয়ার গল্প। অটোরিকশার ভেতরে রাখা নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র রাখার বিষয়ও।

তিন সন্তানের জনক দুলাল চন্দ্রের বাড়ি সাভারে। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে থাকেন রাজধানীর গাবতলীর ঋশিপাড়ায়। বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে ও এক ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আরেক ছেলে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে মাত্র।

কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৭ সাল থেকে দুলাল চন্দ্র এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে বেবিটেক্সি চালালেও ২০০০ সাল থেকে তিনি সিএনজি অটোরিকশা চালাচ্ছেন। শুরুতে দশ বছর ভাড়া চালালেও ২০১১ সাল থেকে নিজের অটোরিকশা চালান তিনি। পরে নিজের মনের মতো করে সাজিয়েছেন তিন চাকার এই বাহনটি। অনেক সময় সিএনজির ছাদ আর পেছনের পর্দা কেটে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। তাই নিরাপত্তার জন্য অটোরিকশার ছাদে লাগিয়েছেন লোহার নেট। রাস্তায় জ্যামে বসে থাকলে রোদের তাপে কষ্ট লাগবে, এর জন্য ছাদে সিলভার পেপার লাগিয়েছেন। কয়েক হাজার টাকা খরচ করে নিজের আয়ের উৎস অটোরিকশাটিকে সাজিয়েছেন দুলাল।

গত বছর দুলাল চন্দ্রের এমন সেবার কথা জানতে পেরে ডাক আসে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে। সেখানে তাকে পুরস্কার হিসেবে কেয়া কসমেটিকসের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় এক লাখ টাকা। পুরস্কারের টাকার সঙ্গে আরও টাকা লাগিয়ে কিনেন একটি অটোরিকশা।

অন্য সিএনজির চালকরা যেখানে নানা অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন সেখানে গরিব রোগীদের ফ্রি সার্ভিস দেওয়ার চিন্তা কেন- প্রশ্ন ছিল দুলাল চন্দ্রের কাছে। বললেন, ‘২০০০ সাল থেকেই আমি এই চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে যখন মালিকানা গাড়ি চালাতাম তখন খুব বেশি সেবা দেওয়া যেত না। যখন নিজের গাড়ি হলো তখন থেকে নিজের মতো করে কাজ করতে পারছি।’

পেছনের গল্প তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এক সময় আমি অনেক গরিব ছিলাম। আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গাবতলীর বাসা থেকে শ্যামলী শিশু হাসপাতালে কাঁধে করে নিয়ে আসি। কোনো গাড়িচালক আসতে রাজি হননি। ওই সময় থেকে সিদ্ধান্ত নিই সুযোগ পেলে যারা আমার মতো গরিব আছে তাদের সাহায্য করব। অনেক কষ্টে সিএনজিটা কিনেছি আমি। এখন সাধ্যমতো গরিব, অসুস্থ মানুষের সেবা করছি।’

দুলাল বলেন, ‘আমি চাই, যারা অসুস্থ অথচ অসহায় তারা যেন ফোন দেয়। তারা ফ্রি সার্ভিস পাবে। আমি চাই, অসহায় মানুষগুলো যাতে আমাকে বেশি করে পায়। আমি তাদের সেবা দিতে চাই।’

প্রতি মাসে গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন তার কাছ থেকে এই সেবা পাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে আমার পরিবারের সদস্যদের কোনো রাগ নেই। তারা সবাই খুশি। অন্যদের সুখের কথা চিন্তা করে তারা একটু কষ্ট স্বীকার করতেও প্রস্তুত।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ড. ফয়জুল হককে বিএনপি থেকে বহিষ্কার
অতিরিক্ত সচিব আরিফুজ্জামানসহ ৩ জনকে ওএসডি
যশোরে পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবক খুন 
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অর্ধ বার্ষিক বিজনেস রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা