হস্তশিল্পে দারিদ্রতা দূর বগুড়ার কয়েক হাজার নারীর

নিজস্ব প্রতিবেদক
 | প্রকাশিত : ০৯ মে ২০১৯, ১৫:৪৩

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ২০ গ্রামের কয়েক হাজার নারী হস্তশিল্পের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন। হাতে বিভিন্ন নান্দনিক জিনিস তৈরির মাধ্যমে নিজেদের দারিদ্রতা দূর করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সাহায্য করছেন তারা। তাদের তৈরি জিনিস বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হওয়ার কারণে এমনটি সম্ভব হয়েছে।

হস্তশিল্পী এসব নারী বাড়িতে বসেই বিভিন্ন ধরনের ঝুড়ি, ফ্লোর ম্যাট এবং মাদুর তৈরি করে এই সফলতা অর্জন করেছেন।

এই অঞ্চলে ছয়টি কোম্পানি এই কাজ পরিচালনা করে। তাদের থেকেই তালপাতা, কাশ ফুল এবং পাটের সুতাসহ বিভিন্ন কাঁচামাল সংগ্রহ করেন। তা দিয়ে চাহিদামতো জিনিস তৈরি করে বিক্রির পর কাঁচামালের অর্থ ফেরত দেন তারা। এতে করে অতিরিক্ত মূলধনেরও প্রয়োজন হয়না।

এই কোম্পানিগুলো উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ছয় হাজারের বেশি নারীকে কাঁচামাল সরবরাহ করেন। ইউনিয়নগুলো হলো- ভবানিপুর, গারিদাহ, কুসুম্বি এবং সীমাবাড়ি। এর মাধ্যমে এসব নারী অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বি হয়ে উঠেছেন।

হাপুনিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মহিলারা বাড়ির অন্যান্য সদস্যের নিয়ে ঝুড়ি তৈরিতে ব্যস্ত। গ্রামবাসী জানান, বাড়ির সমস্ত কাজ শেষ করে তারা অর্থ উপার্জনের জন্য এই কাজ করছেন।

ঘরের সব কাজ শেষ করেও প্রত্যেক হস্তশিল্পী মাসে সাড়ে তিন হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন। যিনি যত বেশি অর্ডার শেষ করতে পারনে তিনি ততবেশি অর্থ উপার্জন করে থাকেন।

একই গ্রামের রিকশা চালক আব্দুর রশিদ সম্প্রতি ইটের বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তিনি এই বাড়ি তৈরিতে অবদান রাখার জন্য স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। আব্দুর রশিদ বলেন, আমার স্ত্রী, পুত্রবধূ, মেয়ে সকলে বাড়িতে হাতে জিনিস তৈরি করে। তারা তিনজন মিলে মাসে ২০ হাজারের বেশি আয় করে।

হাপুনিয়া গ্রামের আরেক বাসিন্দা নার্গিস আক্তার (৩৭) জানান, তিনি মাসে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করেন। তিনি বিডি ক্রিয়েশন নামের একটি কোম্পানিতে গত দশ বছর ধরে কাজ করছেন। বিডি ক্রিয়েশন ওই ছয়টি কোম্পানির একটি। নার্গিস জানান, গ্রামের ৯৫ ভাগ মহিলারাই এই কাজের সঙ্গে জড়িত।

জোসনা বেগম (৩৫) নামের এক নারী বলেন, তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন এসব জিনিস তৈরি করা শিখেছেন। এখানের মহিলারা ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরির জন্য যায় না। গ্রামে বসেই প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে।

বিডি ক্রিয়েশনের এরিয়া ম্যানেজার রারিদ হাসান বলেন, আমাদের পাঁচ শতাধিক বাড়িতে বসে কাজ করে এমন হস্তশিল্পী এবং ফ্যাক্টিরিতে কাজ করে এমন ২০০ হস্তশিল্পী রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই নারী। বাড়িতে বসে যারা জিনিস তৈরি করে তারা আমাদের থেকে কাঁচামাল নিয়ে পরে পণ্য তৈরি করে আমাদের ফেরত দেয়।

তিনি জানান, এখানে এ বিষয়ে কাজ করে এমন ছয়টি কোম্পানি রয়েছে। সেগুলো হলো- সান ট্রেড, ক্লাসিক্যাল হ্যান্ডমেড প্রডাক্টস বিডি, ঢাকা হ্যান্ডক্রাফ্ট, এএসকে হ্যান্ডিক্রাফ্ট, ক্রাফ্ট ভিলেজ এবং ক্রিয়েটিভ বিডি। এই কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র বগুড়া থেকে মাসে দুই কোটি টাকার বেশি পণ্য উৎপাদন করে।

বিডি ক্রিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা আহমেদ পিয়াস বলেন, তারা দুই শত বিভিন্ন ধরেনর পণ্য বগুড়া থেকে উৎপাদন করেন এবং এগুলো অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাজিল, পর্তুগাল, সুইডেন, ডেনমার্ক, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেন।

তিনি বলেন, আমরা অর্ডার পাওয়ার জন্য জার্মানির একটি ও হংকংয়ের দুইটি মেলায় অংশগ্রহণ করেছি। সেখানে বিশ্বের বড় বড় ক্রেতারা অংশগ্রহণ করেন।

এক হাপুনিয়া গ্রামেই ছয়টি কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে- দুইটি বিডি ক্রিয়েশনের, তিনটি ক্লাসিক্যাল হ্যান্ডমেড এবং একটি সান ট্রেডের।

ক্লাসিক্যাল হ্যান্ডমেড এর প্রোডাকশন ম্যানেজার রবিউল হাসান বলেন, গ্রামের প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে প্রায় দুইশ জন করে হস্তশিল্পী রয়েছেন। এই অঞ্চলে প্রথম হস্তশিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৮০ সালে। কাঁচামালের সহজলভ্যতা এবং হস্তশিল্পী পর্যাপ্ততার কারণে প্রতি বছর এটি বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব হস্তশিল্পের কাঁচামালের বেশিরভাগ উপাদানই পাশের গ্রামগুলো থেকে এবং জমুনা নদীর চর থেকে আসে।

ঢাকা টাইমস/০৯মে/একে

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :