গরুর পাথর খাওয়া এবং রুপপুরের বালিশ রুপকথা!

ওবায়দুর রহমান
| আপডেট : ২১ মে ২০১৯, ১৩:৩৭ | প্রকাশিত : ২১ মে ২০১৯, ১৩:১১

তোমার কাউ হটাও! তোমার কাউ পাথর খায়!! তোমার কাউ ভালো না!!! প্রেক্ষাপট-ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক পুনঃর্নিমাণ। সময়কাল ১৯৮৮-৯১ সাল হবে। যথারীতি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান কোম্পানি হুন্দাই, তারা কাজ করছে অবিরাম।

#স্হানীয়ভাবে যারা জনবল ও মেটেরিয়াল সাপ্লায়ার হিসেবে কাজ করেছে তারা প্রতিনিয়ত বোকা বানানোর চেষ্টা করেছে প্রকল্পে কর্মরত কোরিয়ার নাগরিকদের।

#কোরিয়ানদের একটা সমস্যা ছিল তারা ইংরেজি বলতে পারতো না আবার বাংলাও বলতে পারতো না। ফলে দোভাষীরা যা বুঝাতো তখন তাদের তাই বুঝতে হত।

#দেখা গেল পিয়নকে ৫০০ টাকা দিয়েছে সিগারেট কেনার জন্য সে ১০০ টাকার সিগারেট কিনে বাকি টাকা মেরে দিয়েছে।

#এরকম একটি কথিত গল্প ছিল মাগুরা অঞ্চলে রোডে কর্মরত ছিলেন তাদের মুখে মুখে। ওই এলাকায় যারা পাথর সাপ্লাই দিচ্ছে তারা পাথর পরিমাপের জন্য রাস্তার ধারে পাথর ডিভি করে রাখতো। তারপর পাথর পরিমাপ করে বুঝিয়ে দেয়ার পরে রাত্রে আবার ওই পাথরে সাপ্লায়ারের লোকেরা সরিয়ে ফেলতো। পরে কোরিয়াররা বলতো রাত্রে এখানে পাথর ছিল তা কোথায় গেল ‘তখন সাপ্লায়ার এর লোকেরা বলতো " (Cow Eat stone) গরুতে পাথর খেয়ে ফেলেছে।’

# এরকম কয়েকদিন করার পরে কোরিয়ান ইঞ্জিনিয়ার বলেন তোমার কাউ নিয়ে এসো, কেমন করে কাউ পাথর খায় দেখবো।

# তখন বাঙ্গালি বুদ্ধি প্রয়োগ করে, পাথর সাপ্লায়ারের লোক ডিভি করা পাথরের উপর ধানের কুড়া আগে হতে ছিটিয়ে দিয়ে তার উপর চিটাগুড় দিয়ে রেখেছিল।

# যথারীতি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোরিয়ান নাগরিক আসলেন এবং সাপ্লায়ার এর লোক তখন দুটি গরু (কাউ) এনে পাথরের উপর বেঁধে রাখলেন। গরু যথারীতি পাথরের উপর কুড়া এবং চিটাগুড় চেটে চেটে খাচ্ছে। তাই দেখে সাপ্লায়ারের লোক বলছে দেখ গরু ( কাউ) পাথর খাচ্ছে। বাঙালির কথা বিশ্বাস করে তখন কোরিয়ায় লোক বলতে থাকেন ‘তোমার কাউ হঠাও, তোমার কাউ ভালোনা, তোমার কাউ পাথর খায়’ (সে তার দেশীয় ভাষায় বলতে থাকে)।

#এভাবেই তখন আমাদের দেশের কিছু অসাধু মানুষ কোরিয়ানদের বাংলা ভাষা বা ইংরেজি ভাষা না জানার জন্য অনেক ঠকিয়েছ। তারপর থেকে কোরিয়ানরা প্রকল্প এলাকায় মনিটরিং বৃদ্ধি করে পরবেক্ষণ করেন বাঙ্গালিরা তাদের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। সেই থেকে তারা তাদের কাজ নিজেরা করতো এবং টাকা পয়সার বিষয়েও অনেক সতর্ক হয়ে যায় এবং বাঙ্গালি দেখলেই বলতো আলিবাবা’

# রুপপুরের রুপালী বালিশের রুপকথার জন্য। #রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন নির্মাণকেন্দ্রে কর্মরত রাশিয়ার নাগরিকরা ও ইংরেজি পড়তে ও বলতে পারেনা বিধায় ওখানে কর্মরত এক শ্রেণির লুটেরা ওই বিদেশি নাগরিকদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছে পণ্যের উল্টোপাল্টা মূল্য দেখিয়ে।

# এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প। যার আনুমানিক খরচ ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা।

# দাতা সংস্থা এখনো এই প্রকল্পে অর্থ ছাড় দেয়নি। এখানে যা কিছু ব্যয় হয়েছে তা জিওবি ফান্ডের টাকা হতে।

# সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও পত্রপত্রিকা একটি ভাউচার এর ছবি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে একটি বালিশের মূল্য দেখানো হয়ছে ৫৯৫৭ টাকা এবং ক্যারিং কষ্ট দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা!!

# আলোচিত বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন। কোর্ট এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন।

# ঘটনা সত্যি কি মিথ্যা জানি না। তবে সম্প্রতি ঈশ্বরদীতে গিয়েছিলাম। স্থানীয় কয়েকজন অধিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি স্থানীয়ভাবে যারা সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করছে তারা প্রকল্পের যথাযথ মান বজায় রাখতে পারছে না। এবং কিছু উল্টোপাল্টা কাজ হচ্ছে।

# আমাদের মিডিয়া তথা সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ঘটনা ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। তাই বলি কি আমাদের দেশের কিছু মানুষের অতিমুনাফার বলি যেন না হয় দেশের সবচেয়ে এই বড় প্রকল্প। বিদেশি সংস্থা যেন বিশ্বাস ভঙ্গের বেদনায় নীল না হয়। যেহেতু এই প্রকল্পে খরচকৃত টাকা আমাদের শ্রমে ঘামে অর্জিত তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং স্বচ্ছতার দাবি করছি।

# পরিশেষে বলতে চাই দেশের ইতিহাসের সবচাইতে বড় প্রকল্প যা বাস্তবায়ন হচ্ছে রাশিয়ার অর্থায়নে (ঋণে) এবং কারিগরি সহায়তায়। উক্ত প্রকল্প অপারেশন পরিচালনা করবেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। তাই স্থানীয় যারা এই প্রকল্পের সঙ্গে আছে তাদের শুধু মুনাফার কথা চিন্তা না করে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প যাতে টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে ইতিহাসে স্থান পায় সেদিকে নজর দেয়া। বিদেশি দাতা সংস্থা ও নির্মাণ সংস্থার নিকট হতে মানসম্মত যুগোপযোগী টেকসই কাজ বুঝে নেয়া। আমরা আশা করি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। একইসঙ্গে প্রকল্প এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ও পেশাজীবী সংগঠনের কাছে অনুরোধ আপনারা এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সব সময়ে মনিটরিং করুন এবং খেয়াল করুন যাতে কেউ কোন ফাঁকিবাজি না করে। কারণ এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের সঙ্গে আপনাদের আগামী ভবিষ্যৎ জড়িত আছে। যদি টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় তাহলে এর সুবিধা দেশবাসীর সঙ্গে আপনারাই বেশি ভোগ করবেন আর প্রকল্প বাস্তবায়ন যদি দুর্বল হয় তাহলে এর সুদূরপ্রসারী ক্ষতি যেটা হবে সেটাও আপনারা প্রকল্প এলাকার মানুষই বেশিই ভোগ করবেন। অতএব প্রকল্পের ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আপনাদেরই আপনাদের ভবিষ্যতের জন্য।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :