ধর্ষণের পর আত্মহত্যা

আসামিদের হুমকিতে বর্ষার পরিবার

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০১৯, ১২:৪২
স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষা (ফাইল ছবি)

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় গত ২৩ এপ্রিল অপহৃত হন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষা। অভিযোগ ওঠে, সহপাঠীর সহায়তায় অপহরণের পর বর্ষাকে ধর্ষণ করে প্রতিবেশী বখাটে মুকুল হোসেন। এ নিয়ে অভিযোগ করতে গিয়ে অপমানিত হন বর্ষার বাবা।

থানায় আইনি সহায়তা না পাওয়ার পর থেকে বর্ষাকে নিয়ে বিভিন্ন লাঞ্ছনা-গঞ্জনা শুরু হয়। মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য আর একপাক্ষিকভাবে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে দায়ী করায় বিষিয়ে ওঠে বর্ষার তারুণ্যেভরা মনও। যা সইতে না পেরে গত ১৬ মে চিরকুট লেখে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে বর্ষা।

বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ২৩ এপ্রিল অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনায় থানায় করা অভিযোগ বর্ষার আত্মহননের পর মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। পরে ১৭ মে আত্মহত্যার ঘটনায় আরেকটি মামলা করা হয়। দুই মামলায় আসামি করা হয় ১৫ জনকে। এর মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আর যথাযথ আইনি সহায়তা না দেওয়ায় মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেনকে প্রত্যাহার করার পর সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।

ঘটনার পর প্রশাসনের সাড়া পাওয়ায় বিচার পাবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন মোহনপুরের বিলাপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান। তবে ঘটনার তাৎক্ষণিকতা শেষ হতে না হতেই বর্ষার পরিবার পড়েছেন নতুন বিপাকে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে গ্রামে ফিরে হুমকি-ধমকি আর কটু কথায় অতিষ্ঠ করে তুলছেন ভুক্তভোগী পরিবারটিকে। মেয়ে হারানোর বেদনা কাটিয়ে না উঠতেই আসামিপক্ষের হয়রানি ও হুমকি-ধমকিতে ভয়ে আছেন বর্ষার পরিবার।

বর্ষার বাবা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মেয়েটি মারা যাওয়ার পর থেকে আমার পুরো পরিবার দুঃখ-কষ্টে ভেঙে পড়েছে। সংসারের কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়ার বল-শক্তিও কারও নেই। সংসার-ই চলছে না বলা যায়। অথচ আজ বাদে কাল ঈদ! মনে হচ্ছে- মেয়েটি বুঝি ঈদে সবার সঙ্গে আনন্দ করবে।’ মান্নান বলেন, ‘এ রকম কষ্টের মধ্যে বর্ষার আত্মহত্যার ঘটনায় দোষী যারা, সেসব আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে গ্রামে এসেছে। আসামি ইদ্রিস, রহমান, ইসাদুল, মকবুল ও সাইফুরের পরিবারের লোকজন আমাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, আমার আরও দুই মেয়ে রয়েছে। তারা বাড়ির বাইরে গেলেই বিভিন্ন কটু কথা বলছে এবং অশোভন আচরণ করছে। ফিরে এসে মেয়ে দুটো কান্নায় ভেঙে পড়ছে। আর কতো বুঝিয়ে রাখব ওদের। আমরা যাতে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যায়, সেই জন্য কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। আমি নিরুপায়, কী করব কিছুই বুঝছি না।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম বলেন, স্কুলছাত্রী বর্ষার আত্মহত্যার ঘটনার পর পুলিশ গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি তদন্ত করছে। গোয়েন্দা পুলিশ মামলা দু’টির তদন্ত করছে। মামলার তদন্ত কাজও বেশ এগিয়েছে।

ইফতেখায়ের আলম বলেন, আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়েছে। তবে আমরা বর্ষার পরিবারের কোনো সদস্য যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছি। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে।

প্রসঙ্গত, আত্মহত্যার আগে স্কুলছাত্রী বর্ষা লিখে যাওয়া চিরকুটে উল্লেখ করেন, একটা মেয়ের কাছে তার মান-সম্মানটাই সবচাইতে বড়। আমি আমার লজ্জার কথা সবাইকে বলতে বলতে নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেছি। প্রতিদিন এসব পর পুরুষের কাছে বলতে বলতে। আর পারছি না! অপরাধীকে শাস্তি দিলেই তো আমার মান-সম্মান ফেরত পাব না। তাই আমাকে ক্ষমা কর।

ঢাকাটাইমস/৩জুন/আরআর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :