বিমা শিক্ষায় বিমাকারীর করণীয়

বাংলাদেশে বিমা শিল্পের উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার বিমা খাতের উন্নয়নের জন্য জাতীয় বিমা নীতি ২০১৪ প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমান জাতীয় বাজেটেও বহুমুখী বিমা ব্যবস্থার চালুর অঙ্গীকার করা হয়েছে।
২০১৮ সনে বাংলাদেশে লাইফ বিমা ব্যবসায় চলমান পলিসির সংখ্যা এক কোটি এবং নন-লাইফ ২৮ লাখ।লাইফ বিমায় ২০১৮ সনে মাত্র ১৮ লাখ গ্রাহক নুতন পলিসি ক্রয় করেছে। জাতীয় বিমা নীতিতে বাংলাদেশের সকল জনগণকে এবং সম্পদকে বিমার আওতায় আনার রূপকল্প রয়েছে। বাংলাদেশে পরিবহনের সংখ্যা ৩৫ লক্ষ অথচ মটর বিমার পলিসির সংখ্যা ১৬ লাখ। আমাদের দেশে কৃষি বিমা, পোল্ট্রি বিমা, গবাদিপশু বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমাকে জনপ্রিয় করা যায় নি। এটি খুব হতাশার বিষয় যে, এখনও সরকারি-বেসরকারি বহুতল ভবনের বিমা করা হচ্ছে না।
বিমার পেনিট্রেশন মাত্র ০.৫৫% অথচ জাতীয় বিমা নীতি ২০১৪ এ সরকার ২০২১ সালে পেনিট্রেশন ৪% অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে বিমা গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের জনগণের বিমা শিল্পের প্রতি আস্থা না থাকার অন্যতম কারণ হিসেবে বিমা শিক্ষার অভাব এবং বিমা দাবি পরিশোধে দীর্ঘসূত্রতাকে চিহ্নিত করা যায়। আবার বিমা শিক্ষা না থাকায় দাবি সংক্রান্ত অভিযোগ যথাযথ না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ ও বিমাকারী উভয়কেই বিব্রত হতে হয়।
এখনও জনসাধারণ বিমা পলিসি/পরিকল্পের সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারে না। বিমা পলিসিসমূহের প্রস্তাবপত্র এবং বিমা চুক্তিপত্র খুবই জটিলভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। একজন শিক্ষিত লোকের পক্ষে সহজে বিমা পরিকল্প সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব হয় না। বিমার ধারণা স্পষ্টীকরণে প্রতিটি বিমাকারীর দায়িত্ব রয়েছে। বিমা সম্পর্কে সহজ ও স্বচ্ছভাবে ধারণা প্রদান করতে সক্ষম হলেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্য বিমাসহ সম্পত্তির বিমা করবে।
সুখের সংবাদ হচ্ছে কোন কোন কোম্পানি বিমা পলিসি অন-লাইনে বিক্রয় করছে যেখানে মোবাইল এ্যাপ্সের মাধ্যমে প্রিমিয়াম গ্রহণ এবং দাবি পরিশোধ করছে।
বীমার পেনিট্রেশন বৃদ্ধিকল্পে প্রত্যেক বিমাকারীকে বিমা ও বিমা পরিকল্পসমূহ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা এবং দাবি পরিশোধ বিষয়ক ভিডিও ক্লিপ তৈরী করে স্ব স্ব ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করতে হবে। ভিডিও ক্লিপে নিম্ন লিখিত বিষয়সমূহ থাকতে হবে:
• বিমা কী এবং কেন প্রয়োজন;
• বিমার করলে কী কী সুবিধা;
• বিমা করার ধাপসমূহ কী কী;
• প্রিমিয়াম কী;
• মোট বিমা অংক কী;
• প্রিমিয়ামের হার কীভাবে নির্ধারণ হয়;
• বিমা পরিকল্প কী;
• লাভজনক/অলাভজনক/টার্ম পরিকল্প কী;
• আপনার প্রতিষ্ঠানে কী কী পরিকল্প রয়েছে;
• বিমা চুক্তি কী;
• বিমা প্রস্তাব কী;
• বিমা চুক্তি করতে হলে বিমা গ্রাহককে কী কী তথ্য ও কাগজপত্র দিতে হয়;
• বিমা গ্রাহককে কী কী বিষয় যাচাই করতে হয়;
• প্রিমিয়াম কেন বিনিয়োগ করা হয়;
• এজেন্ট কী এবং এজেন্টের কাজ কী
• সার্ভেয়ার কী এবং কী কাজ করে;
• বিমাকারী কীভাবে বিমা দাবি পরিশোধ করে;
• বিমাকারী কখন গ্রাহককে বিমা দাবির সাথে বোনাস প্রদান করে;
• তামাদি পলিসি কী এবং কেন তামাদি হয়;
• পলিসি তামাদি হলে গ্রাহকের কী ক্ষতি;
• সার্ভাইভাল বেনিফিট এবং পেইড-আপ পলিসি কী;
• কম্প্রিহেন্সিভ ও থার্ডপার্টি মটর ইন্স্যুরেন্স কী এবং কোনটির কী কী সুবিধা রয়েছে;
• রিইন্স্যুরেন্স কী এবং এর সুবিধা কী;
• বিমা দাবি প্রাপ্তির আইনগত অধিকার কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়;
• বিমা দাবি প্রাপ্তির জন্য গ্রাহককে কী কী করতে হবে;
• ন্যায্য বিমা দাবি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিশোধ না করলে বিমাকারী কী হারে সুদসহ দাবি পরিশোধ করবে;
• ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক প্রতিকারের জন্য কোথায় কোথায় অভিযোগ দাখিল করবে; এবং
• বিমাকারীকে তার প্রতিষ্ঠান হতে প্রদত্ত প্রত্যেক পলিসি/পরিকল্পের সুবিধাসমূহের বিস্তারিত স্পষ্ট বর্ণনা করতে হবে।
বাংলাদেশের সকল বিমা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে বিমা পলিসির সহজ বর্ণনার ব্যবস্থা করা হলে বিমা গ্রাহকের সংখ্যা বাড়বে এবং জনগণও বিমা পলিসি ক্রয় করে বিব্রত হবে না এটি প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।
লেখক: যুগ্ম সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

মন্তব্য করুন