ধনী আমেরিকাতেও দারিদ্র্য

সুলতানা রহমান
  প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৯, ১১:১৩| আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০১৯, ১৭:২০
অ- অ+

দু’টি শিশু ম্যানহাটানের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফ্রুটস্ন্যক্স বিক্রি করছিলো। তাদের বয়স নয় দশ বছর হবে। পথচারীদের কাছে গিয়ে বলছিলো-তার কাছ থেকে এক ডলারে এক প্যাকেট ফ্রুট স্ন্যাক্স কিনলে যে আয় হবে তা দিয়ে সে ‘স্কুল সাপ্লাই’ কিনবে।

গ্রীষ্মের দুই মাস ছুটি শেষে সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের স্কুলগুলো খুলছে। ‘ব্যাক টু স্কুল’ এর জন্য সব দোকানে এখন সেলও চলছে। স্কুল সাপ্লাই কিনতে পাঁচ শ থেকে এক হাজার ডলার লেগে যায়। শিশু দু’টি বলছিলো-তার বাবা-মা দুজনই পঙ্গু এবং বেকার। তাদের পক্ষে স্কুল সাপ্লাইয়ের অর্থ জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই তারা পথে নেমেছে। শিশু দুটি কতটা সত্য বলছে সেই প্রশ্ন মনে জাগতেই পারে! তবু এও চরম সত্য যে দুটি শিশু পথে পথে ঘুরছে!

এমন দৃশ্য এখন নিউইয়র্কের পথে পথে খুব একটা বিরল নয়। বিশেষ করে ট্রেনে হোমলেস মানুষদের ভিক্ষাবৃত্তি অতি সাধারন দৃশ্য। এখন অনেক শিশুরা একই পথে নেমেছে। হাউজিং এন্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের হিসেবে অ্যামেরিকায় বর্তমানে পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার গৃহহীন মানুষ রয়েছে। অন্তত এক লাখ শিশু না খেয়ে স্কুলে যায়। এমন অবস্থায় দেশের অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে অশনী সংকেত।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২০ সাল নাগাদ ধ্বস নামবে অ্যামেরিকার অর্থনীতিতে। যার আলামত এখনই দেখা দিয়েছে। আর অর্থনৈতিক মন্দাভাব দেখা দিলে বাড়বে এমন ক্ষুধার্ত শিশু আর গৃহহীন মানুষের সংখ্যা। সেজন্য কতটা প্রস্তুত আছে অ্যামেরিকা?

সত্যি বলতে-স্বপ্নের এই দেশেও মানুষ পথে পথে ঘোরে, শিশুরা না খেয়ে ঘুমোতে যায়, এসব কল্পনাতেও আসেনা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বহুবিধ সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থেকেও সবাইকে তার আওতায় আনতে পারেনি অ্যামেরিকা। আর যদি অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়, সেক্ষেত্রে কিভাবে তা সামাল দেয়া যাবে তা ভেবে অর্থনীতিবিদদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন-ওসব বাজে কথা। এমন কোনো পরিস্থিতি নেই। বরং দেশে কর্মসংস্থান আরও বাড়ছে, দারিদ্র দূর হচ্ছে, অর্থনীতি সবল হচ্ছে! প্রশ্ন হচ্ছে অর্থনীতি সবল হচ্ছে কাদের জন্য? করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে যে ধনিক শ্রেণীর জন্য আরো সুবিধাজনক অবস্থান তৈরী করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে দেশের রাজস্বে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এক ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে বাতিল করে দিয়েছেন নতুন অভিবাসী বা গ্রীনকার্ড হোল্ডারদের খাদ্য এবং বাসস্থানের নিরাপত্তামূলক ভাতা। তাতে যে অর্থ সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে তা অর্থনীতির কোনো সূচকেও আসেনা।

আবার চায়নার সঙ্গে বানিজ্য যুদ্ধ শুরু করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন আস্থার ঘাটতি। সেই ঘাটতি এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে দীর্ঘ মেয়াদী বা দশ বছর মেয়াদী বিনিয়োগ পৌঁছে গেছে একেবারে তলানীতে। স্বল্প মেয়াদী বা দুই বছর মেয়াদী বন্ডের বিক্রি এখন বেশি যা ইঙ্গিত দেয় অ্যামেরিকাতে মানুষ এখন আর দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে নিরুৎসাহী। অথচ অর্থনৈতিক কাঠামো সচল রাখতে বিনিয়োগকারীদের কাছে সরকার অল্প সুদে যে বন্ড বিক্রি করে তার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী বন্ড অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখে। অথচ দশ বছর বা তার কাছাকাছি মেয়াদে বিনিয়োগ এতোটাই কমেছে যে তা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বাজার বিশ্লেষকদের। এমন নিম্নমুখী বিনিয়োগ বা ‘ইনভারটেড ইয়েল্ড কার্ভ’ এর কারণেই শিগগির বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধ্বসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাজার অর্থনীতির ওঠা নামা সাধারণ মানুষের জীবনকে যতটা প্রভাবিত করে তার কতটা আপাত চোখে দেখা যায়? যে শিশুরা আজ পথে পথে ‘ফ্রুট স্ন্যাক্স’ বিক্রি করে ‘স্কুল সাপ্লাই’ কিনতে বাধ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে আগামী বছর আর‌ও অনেক শিশুকে দেখা যাবে-এমন আশঙ্কা কি অমূলক?

লেখক: সাংবাদিক

ঢাকা টাইমস/২৬আগস্ট/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কুমিল্লায় ৪ মামলায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা গ্রেপ্তার
শেরপুরে পৃথক ঘটনায় দুই মরদেহ উদ্ধার
ঝিনাইদহে সাপের কামড়ে প্রাণ গেল এইচএসসি পরীক্ষার্থীর
২৩ হাজার ইয়াবাসহ দুই মোটরসাইকেল আরোহী ট্রাফিক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা