জাতীয় লিগেই ফিরতে চাই: মোশাররফ

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৪০ | প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৫৭

মস্তিষ্কে টিউমারের চিকিৎসার পর প্র্যাকটিসে যোগ দিয়েছেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। আশা করছেন, আসন্ন জাতীয় লিগেই মাঠে ফিরবেন। চিকিৎসার কিছু ধাপ এখনো বাকি রয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে যে কারো হাল ছেড়ে দেয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন হাল ছাড়ার পাত্র নন। চিকিৎসা এবং খেলা দুটোই একসাথে চালিয়ে যেতে চান তিনি।

জাতীয় দলের হয়ে আলো ছড়াতে না পারলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মার মোশাররফ হোসেন রুবেল। গত মার্চে মোশাররফ জীবনের কঠিন সময় পার করেছেন। বাংলাদেশের এই বাঁ-হাতি স্পিনার অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মাঠের বাইরে রয়েছেন। মেডিকেল চেকআপে ধরা পড়ে তার মস্তিষ্কের টিউমার। এটি এমন এক ধরনের টিউমার যা মস্তিষ্কের গ্লিয়াল কোষে শুরু হয়। বেশ কয়েকবার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর চেকআপ করতে গিয়ে তার এ রোগ ধরা পড়ে। তাকে চিকিৎসকেরা দ্রুত চিকিৎসা নেয়ার তাগিদ দেন।

শুরুতে মোশাররফ খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তার মন আঁতকে উঠতে শুরু করে। মোশাররফ বলেছেন, ‘এটা সত্যিই ভীতিজনক ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমি প্রাথমিকভাবে কয়েক মাস কথা বলতে পারিনি। যোগাযোগ করার জন্য আমার স্ত্রী আমাকে সাহায্য করেছিলেন। চিকিৎসকের মতে যেকোনো বাঁ-হাতির জন্য মস্তিষ্কের ডান দিকটি কথা বলার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। আমার ডান দিকে সার্জারি করা হয়েছিল। এখন আমি কথা বলতে পারছি। আমি আত্মবিশ^াস রাখি এটি আমার জীবনের এক পর্যায়ে ঠিক হয়ে যাবে।’

মোশাররফের অসুস্থতায় তার পরিবারকে যে পরিমাণ আর্থিক ভার বহন করতে হয়েছে এটা তাদের জন্য বড় ধরনের বোঝা হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে মোশাররফ বলেছেন, ‘সত্যি বলতে আমি খুবই অনিরাপত্তায় ভুগেছিলাম। কারণ এটা এমন একটা বিষয় যার জন্য আমি স্বপ্নেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি আমার জমাকৃত ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা দিয়েই চিকিৎসার কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে এ টাকা অপর্যাপ্ত ছিল। কারণ আমার অপারেশনের জন্য হাসপাতালের বিল এবং অপারেশনের জন্য প্রায় দেড় লক্ষ মার্কিন ডলার দিতে হয়েছে। তখন টাকার প্রয়োজনে আমি ফ্ল্যাট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য আমি সম্ভাব্য ক্রেতাদের সাথে কথা বলেছি। কারণ প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করতে আমি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। কেননা চিকিৎসার জন্য আমাকে ব্যয় করতে হয় ১০ লক্ষ টাকা। এছাড়া যাতায়াত খরচসহ আরো অন্যান্য খরচ রয়েছে’।

সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার সফল অস্ত্রোপচারের পর তিনি স্বস্তিবোধ করতে শুরু করেন। ‘কোন সমস্যা ছাড়াই রেডিওথেরাপি এবং সার্জারি সফল হয়েছিল। আমি আশা করছি, নভেম্বরের মধ্যেই আরো তিনটি সার্জারি শেষ হয়ে যাবে। এর মধ্যেই এমআরআই করা হয়েছে এবং এর ফলাফল ভালো এসেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যদি নতুন কোন টিউমার ধরা পড়তো তাহলে আরো কঠিন চিকিৎসার প্রয়োজন হতো।’

এই প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও মোশাররফ ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন ছাড়েননি। তিনি আশা করছেন আসন্ন জাতীয় ক্রিকেট লিগের মাধ্যমে মাঠের ক্রিকেটে ফিরবেন। আর এখানেই তার পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তিনি ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ক্রিকেটারদের কঠিন ফিটনেস পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সকল খেলোয়াড়কে বিপ টেষ্টে সর্বনিম্ন ১১ তুলতে হবে। এক্ষেত্রে মোশাররফের জন্য কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আসন্ন এনসিএল থেকেই খেলা শুরু করতে চাই। একটা ম্যাচ খেলার পর আমি বুঝতে পারব শারীরিকভাবে খেলার জন্য আমি কতটুকু প্রস্তুত। তবে এটা অনুভব করতে পারছি যে, ফিটনেস ফিরে পেতে আমাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। ফিটনেসই আমার মাঠের কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি যদি আমার ফিটনেস ফিরে পেতে পারি তবে অবশ্যই আমি খেলতে পারব। আমি যদি ব্যাট এবং বলে আমার ভূমিকা রাখতে পারি অবশ্যই সেরা এগারোতে সুযোগ পাব।’

মোশাররফ বলেছেন, ‘আপনি নিজের অস্ত্র সমর্পণ করতে পারেন তবে প্রশিক্ষণ নয়।’

দৃঢ় প্রত্যয়ে মোশাররফ বলেন, ‘আমি যদি চোখ বন্ধ করেও বল করি তবে বলটি ঠিক জায়গায় পড়বে। সর্বশেষ আমি অপারেশনের আগে বল করেছি। প্রতিদিনের তুলনায় আমার বল ভালো হচ্ছে। প্র্যাকটিসে আমি ইমরুলের বিপক্ষে বল করেছি। আমি শুধু ঘরোয়া প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে চাই। নিয়মিত ফিফটি ও পাঁচ উইকেট নেয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে চাই। আমি আবার নতুন করে শুরু করতে চাই। আমি ঘরোয়া পর্যায়ে আগের মতো আধিপত্য বিস্তার করতে চাই। আমি জাতীয় লিগের সাতটি খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলাম। আবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পরপর পাঁচÑছয়টি ম্যাচে আমি ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলাম। আমি সেই সোনালী দিনগুলোয় ফিরে যেতে চাই।’

মোশাররফ আরো বলেন, তিনি যুবরাজ সিংয়ের দেখানো লড়াইয়ের চেতনা থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। যিনি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আবার মাঠে ফিরে এসেছিলেন।

‘যুবরাজ সিং ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন যে, মাঠে ফিরে আসা সম্ভব। আমি অবশ্যই এর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়েছি। কারণ আমি বিশ^াস করি, আমি এখনো খেলা চালিয়ে যেতে পারব। আমি জানি যে, আমাকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। তবে আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আমি ভেতর থেকে হারিয়ে যাইনি। মানসিকভাবে এখনো দৃঢ় আছি। বলতে পারি আমি ফিরব, অবশ্যই ফিরব। নতুন উদ্যমে মাঠের লড়াইয়ে নিজের জাত চেনাব।’

(ঢাকাটাইমস/৩ অক্টোবর/এসইউএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :