পেঁয়াজ নিয়ে চক্রান্তকারীদের খোঁজা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:০৫| আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:১৩
অ- অ+

পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বিমানে করে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেছেন সরকারপ্রধান।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় পেঁয়াজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন পেঁয়াজ নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। সব দেশে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের দেশে কেন, কী কারণে এত অস্বাভাবিকভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে জানি না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কারণেই হোক আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানি করছি। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পেঁয়াজ চলে আসবে। আর এর পেছনে মূল কারসাজি যারা করেছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।'

একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ কীভাবে গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বর্ণনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, '২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। এটা তারা ভুলে যায়।’ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ দেশে উন্নয়নের নানা কর্মসূচি হাতে নেয় এবং বাস্তবায়ন করতে শুরু করে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮.১৩ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে এবং এটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কর্মসূচি হাতে নিয়ে আমরা তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।'

নগরকেন্দ্রিক উন্নয়ন না করে তৃণমূল জনগণের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের উন্নয়ন রাজধানীকেন্দ্রিক না, শহরকেন্দ্রিক না। আমাদের উন্নয়ন তৃণমূল কেন্দ্রিক, গ্রামের মানুষজনের জন্য। তাদের জীবনে যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম। আজকে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমরা প্রায় সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়ননে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়েছে। বাকি ইউনিয়নেও খুব দ্রুত এই সেবা পৌঁছে যাবে। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি।'

সমুদ্রসীমা জয় ও ছিটমহল বিনিময়ের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তাদের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে স্থলসীমানা চুক্তি আইন পাস করে দিয়েছেন এবং আমরা সারা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। আমরা সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। ছিটমহল বিনময় করেছি। ব্লু ইকোনমি অর্থাৎ সুনীল অর্থনৈতিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।’

শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন ও আওয়ামী লীগের অবদানের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা দুই কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। পৃথিবীর কোনো দেশে উচ্চশিক্ষা এত কম খরচে হয় না, যেটা আমরা বাংলাদেশি দিচ্ছি। আমরা আমাদের সাক্ষরতার হার ৭৩ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।’

স্বাস্থ্যখাতে গত দশ বছরের উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে দিচ্ছি। মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি৷ টিকাদান কর্মসূচি করে মানুষকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করছি। পুষ্টিকর খাবারের দিকে মানুষকে সচেতন করে তুলতে কাজ করছি।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আজ সমগ্র দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও আমরা বলব, সাধারণ মানুষ যদি ভালো থাকে তাহলে দেশের কিছু মানুষের আঁতে ঘা লাগে। ফলে তারা সেখানে বারবার একটা করে অপপ্রচার করার চেষ্টা করে। কেউ যেন এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে পেরেছি। এই গতিধারা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি দূর করতে চাই। এর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে৷ অভিযান আমরা অব্যাহত রাখবো। বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই উন্নতি সম্ভব। সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমরা চাই। অসৎ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে বিরানি খাওয়ার চেয়ে সৎ পথের আয় দিয়ে নুন-ভাত খাওয়া অনেক মর্যাদার, অনেক সম্মানের।'

যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বিএনপি। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিএনপির আরও দুই বড় নেতা-এমনটা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। আমেরিকায় জয়কে অপহরণ করার জন্য বিএনপি আমেরিকান গোয়েন্দা একজন অফিসারকে ভাড়া করেছিল। তারা ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে কিনে ফেলে। সেখানে আমি এবং আমার ছেলে, আমার বোন আমাদের কী কী আছে সেগুলো খোঁজা শুরু করে। সেই তদন্ত করতে গিয়ে বের হয়ে এলো খালেদা জিয়া, তার দুই পুত্রের দুর্নীতির কথা। সেগুলো প্রকাশ হলো। একমাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং তার বোনের কোথাও কোনো রকম কোনো কমিশন খাওয়া, দুর্নীতির কোনো দৃষ্টান্ত তারা পায়নি। কিন্তু যে অফিসারকে তারা ভাড়া করেছিল তার বিরুদ্ধে ওই গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই) মামলা করে এবং ওই মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে তাকে যে টাকা দিয়েছিল তার নাম, বিএনপি'র দুই নেতার নাম।’

‘এফবিআই যে তদন্ত করে যে প্রতিবেদন দিয়েছিল সেখানে বেরিয়ে আসে, বিএনপি জয়কে অপহরণ করতে লোক ভাড়া করেছিল। অপহরণের পরে আমেরিকায় তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। কাজেই আপনারা বুঝতেই পারেন, তারা শুধু এখানেই না, তারা আমেরিকায় আমাদের দুনীতি খুঁজতে গেল, আর আমাদের দুর্নীতি বের হয়ে গিয়ে তাদের নিজেদেরটাই বের হয়ে এলো।'

(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/কারই/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
অতিরিক্ত সচিব আরিফুজ্জামানসহ ৩ জনকে ওএসডি
যশোরে পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবক খুন 
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অর্ধ বার্ষিক বিজনেস রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত
চাঁদা না দেওয়ায় পল্লবীতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা, গুলিবিদ্ধ একজন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা