‘উপাচার্যও চাচ্ছেন সুষ্ঠু তদন্ত হোক’

রাইয়ান বিন আমিন
  প্রকাশিত : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫১| আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৫০
অ- অ+
অধ্যাপক এ এ মামুন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ছাত্রাবাস নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলন শুরু হয়। তারা উপাচার্যের অপসারণসহ বেশ কিছু দাবিতে সরব হয়। ফলে তাদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা করেন। এতে করে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। প্রশাসন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে ছাত্রাবাস ছাড়তে নির্দেশ দেয়। এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস সচল করার দাবিতে একাট্টা। তবুও অনড় প্রশাসন। সব মিলিয়ে স্থবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিষয়ে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’-এর সমন্বয়ক অধ্যাপক এ এ মামুন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাবি প্রতিনিধি রাইয়ান বিন আমিন।

‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’- এই প্লাটফর্ম নির্মাণের উদ্দেশ্য কী?

আন্দোলনটি প্রথমে মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ পরিবেশ রক্ষা করার জন্য শুরু হয়েছিল। পরে দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপাচার্যের অপসারণের দাবি যুক্ত করা হয়। এই আন্দোলনকারীদের মূল ইস্যু উন্নয়নে বাধা দেওয়া এবং উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়া। আমরা চাই উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন হোক। বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র রুখতেই এ প্লাটফর্মের যাত্রা।

আপনারাই তো বলেছিলেন মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ হল সরানো সম্ভব না, পরে তো আন্দোলনের মুখেই দাবি মেনে নিয়েছে প্রশাসন? সব সিদ্ধান্ত যে ভালো হবে এমন না। অনেক সময় ভুলও হতে পারে। প্রতিবাদের মাধ্যমে ভালো কিছু বেরিয়ে এসেছে। এজন্য তাদের প্রতিবাদকে আমি সম্মান করি এবং দাবি মেনে নেওয়ায় প্রশাসনকেও সাধুবাদ জানাই।

তাহলে কি মহাপরিকল্পনা ত্রুটিপূর্ণ ছিল? আমি যেহেতু মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে তেমন বুঝি না এবং সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞও নই। তাই কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

আপনারা বলছেন উপাচার্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। সেটার ভিত্তি কী? যে কল রেকর্ড প্রকাশ হয়েছে সেখানে দুজন ব্যক্তির কথোপকথন। তাদের আলোচনার বিষয় ছিল ‘উপাচার্য ঠিক করে দিয়েছেন কে কত টাকা পাবে।’ এখন সেই টাকা উপাচার্যই যে তাদের দিয়েছেন সেটাও কিন্তু পরিষ্কার না। আমি ম্যাডামকে জিজ্ঞাসা করেছি, কোনো টাকা দেওয়া হয়েছে কি না? ম্যাডাম বলেছেন এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। যে টাকা ছাড় হয়েছে তার খরচের পুরোটারই হিসাব আছে। আর এত টাকা কখনো ঈদ সেলামি হয় না। বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘুষ নিয়ে স্বীকার করা একটু অবাকই লাগে।

এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করছেন? কথোপকথন শুনলেই বোঝা যায় পরিকল্পিত। আন্দোলনকে উস্কে দিতেই এরকম করা হতে পারে। আর গুটিকয়েক ব্যক্তির কথা শুনে যাচাই না করেই মিডিয়া সংবাদ প্রকাশ করছে।

উসকানিদাতা ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে উপাচার্য কেন মানহানির মামলা করছেন না? উপাচার্য যে এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেননি সেটা তো আমরা বলতে পারব না। আর চাইলেই তো মামলা করা যায় না। উপাচার্যের মান কত সেটাও তো ভাববার বিষয়।

‘আর্থিক লেনদেনে উপাচার্য মধ্যস্থতা করেছেন’- উপাচার্যের নিজস্ব স্বীকারোক্তি দিয়ে একটি ইংরেজি দৈনিক তো প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। এরকম কোনো সংবাদ আমি দেখিনি। আর গণমাধ্যম অনেক সূত্র থেকেই তো সংবাদ প্রকাশ করে।

আন্দোলনকারীরাও সুষ্ঠু তদন্ত চাচ্ছে, আপনারাও কী চাচ্ছেন? তদন্ত চেয়েছে এ পর্যন্ত ঠিক আছে। আমরাও খুশি। উপাচার্যও চাচ্ছেন সুষ্ঠু তদন্ত হোক। এজন্য তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগও করেছেন। উপাচার্য যদি দোষী হন অবশ্যই শাস্তি পাবেন। আর নির্দোষ হলে অভিযোগকারীদেরও বিচার হতে হবে। এখন তদন্ত চাইলে তো পদত্যাগ চাইতে পারে না। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই যদি বিচারের ফলাফল বলে দেই, সেটা অন্যায়। তদন্ত পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করা দরকার।

আপনারা বলছেন আন্দোলনে শিবির আছে। এমন কোনো প্রমাণ আছে যা দিয়ে শিবিরসংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করা যায়? ধরা পড়া শিবির নেতার সঙ্গে আন্দোলনকারী অনেকেই কথা বলেছেন। বিভিন্ন ইস্যুতে তারা কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছেনÑ এমন অনেক প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। শিবির এখানে এমনভাবে প্রবেশ করতে চেয়েছে যাতে কেউ বুঝতে না পারে।

কথিত শিবির নেতার গ্রেপ্তার নিয়ে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ দুজন শিক্ষকের মধ্যে করা হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন প্রকাশ পেয়েছে। ওই কথোপকথন যেহেতু আমি দেখিনি, এজন্য মন্তব্য করা আমার ঠিক হবে না।

আপনাদের সামনেই ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। আপনারা কেন প্রতিহত করলেন না? আমরা যখন উপাচার্যের বাসায় ঢুকতে চেয়েছি, তখন আন্দোলনকারীরা আমাদের বাধা দিয়েছে। তাদের যেমন অবস্থান নেওয়ার অধিকার আছে, আমাদেরও প্রবেশের অধিকার আছে। সেখানে দু পক্ষের কথাকাটাকাটি হয়েছে। হঠাৎ ছাত্রলীগের ছেলেরা চলে আসায় সেখানে হাতাহাতি হয়। তখন আমি সরে গিয়েছিলাম। আমি হার্টের রোগী। আমার পক্ষে ছাত্রদের মারামারি থামানো সম্ভব না।

উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহকে নারীর অবমাননা বলে আপনারা বিচার চেয়েছেন। একইভাবে নারীদের আহত করার বিচার চান কি না? সেখানে কাউকেই আহত হতে দেখিনি। তারা সেখানে শুয়ে-বসে ছিল, তাই চ্যাংদোলা করে সেখান থেকে সরিয়েছে।

মারধর করা ও আহত হওয়ার ছবি গণমাধ্যমেও এসেছে। এরকম কোনো ছবি আমি দেখিনি বা কারো কাছে শুনিওনি।

‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থে’ ধর্মঘটের সময় আপনারা ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েছেন। আবার আপনারাই সব বন্ধ করে দিলেন। সব বন্ধ করে দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি কি তৈরি হয়েছিল?

আমিও সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেই জেনেছি। সেখানে হাতাহাতি হয়েছে, তাই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবার যুবায়েরের মতো ঘটনা ঘটবে না তার তো নিশ্চয়তা নেই? এই দায়ভার সিন্ডিকেটের কেউ নিতে চায় না বা নিতে পারবে না বলেই বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছে ক্যাম্পাস সচল করতে। আপনারা ভয় পাচ্ছেন আন্দোলন জমে ওঠাকে। প্রকারান্তরে কি আপনার শিক্ষার্থীদেরই ভয় পাচ্ছেন?

শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা দিতে এসে ভবন তালাবদ্ধ দেখবে। দাপ্তরিক কোনো কাজ করতে পারবে না। পরীক্ষার ফলাফল আটকে থাকবে, এটা আমরা চাই না। আমাদের ভয় কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যাতে না পড়ে। আর হল খুলে দেওয়া কোনো সমাধান না। শিক্ষাকার্যক্রমই যদি স্বাভাবিক না থাকে তাহলে হল খুলে দিয়ে লাভ কী?

অভিযোগ আছে আন্দোলনকারীদের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন পুলিশ পাঠাবে? তারা তো আমাদের শিক্ষার্থী। বিষয়টি যেহেতু রাষ্ট্র দেখছে, তারাই হয়তো খোঁজ নেওয়ার জন্য পুলিশ পাঠাতে পারে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ঢাকা টাইমস এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/৪ডিসেম্বর/এজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
‘ধামাকা শপিং’-এর চেয়ারম্যান এম আলীকে ধরে থানায় দিল জনতা
তারেক রহমানকে শরণখোলা বিএনপির নেতাদের চিঠি, কাউন্সিলে আঞ্জুমান আরার প্রার্থীতা বাতিলের দাবি
সনাতনী জনগণের মাঝে বিএনপির বার্তা পৌঁছে দিলেন কাজী আলাউদ্দিন
বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমেই দেশ পুনর্গঠন করতে হবে: নাহিদ ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা