সুপ্রিম কোর্ট

নিয়মিতই ফাইল গায়েব, তবু ফেলে রাখা এভাবে?

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
  প্রকাশিত : ০৮ মার্চ ২০২০, ২০:১৪
অ- অ+

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এনেক্স ভবনের চতুর্থ তলা। সেখানে মামলা-সংক্রান্ত বিপুলসংখ্যক ফাইল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে। দেখে মনে হতে পারে এগুলো পরিত্যক্ত বা অকেজো। এর পাশ দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ হাঁটাচলা করে। কেউ কোনো ফাইল তুলে নিয়ে গেলে বা গোপন করলে বোঝার উপায় নেই। এভাবেই অবহেলা আর নিরাপত্তাহীন পড়ে আছে ফাইলগুলো।

এসব ফাইল কি আসলে পরিত্যক্ত? আদালত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, না পরিত্যক্ত নয়। অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য এগুলো এখানে রাখা হয়েছে বলে তাদের দাবি। তাই বলে এত দিন!

দেশের সর্বোচ্চ এই আদালতে বিভিন্ন মামলার ফাইল গায়েবের ঘটনা নিয়মিতই হচ্ছে। তারপরও যেখানে-সেখানে ফেলে রাখা হচ্ছে শত শত ফাইল।

যেকোনো আদালতের প্রতিটি মামলার ফাইলই গুরুত্বপূর্ণ। হোক সিভিল, ক্রিমিনাল অথবা রিট বিষয়ে। এসব ফাইলে থাকে গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়। যেমন জামিন বিষয়ে কোনো আদেশের ফাইল হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে আসামিকে দীর্ঘদিনের জন্য থাকতে হয় কারাগারে।

আদালতে ফাইল হারিয়ে যাওয়ার ভুতুড়ে কাণ্ডের ভুক্তভোগী সরকারি-বেসরকারি সব আইনজীবী ও তাদের মক্কেলরা। এমনকি বিচারকরাও ফাইল গায়েব হওয়া নিয়ে বহুবার বিরক্তি প্রকাশ করেছেন এজলাসে।

অনেক সময় আদালতের সেকশন থেকে ফাইল হারিয়ে যায় বলে অভিযোগ খোদ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের। তখন বিপাকে পড়া মামলার সংশ্লিষ্ট পক্ষ-বিপক্ষ ও আইনজীবীরা হন্যে হয়ে খুঁজেও ফাইলের সন্ধান পান না।

দেড় বছর ধরে একটি ফাইল পাওয়া যাচ্ছে না ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অনেক মামলায় ফাইল আসে না দীর্ঘদিন ধরে। ফাইল পাওয়া যায় না। আমার নিজেরই একটা মামলার ফাইল দেড় বছর ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে অ্যাপ্লিকেশন করতে হয়েছে।’

ফাইল না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার মাহবুব বলেন, ‘এগুলো ইনডিসিপ্লিন (বিশৃঙ্খলা)। সেখানে ফাইল রাখার জায়গা সেখানে ফাইল রাখে না। অনেক সময় কোর্টে সময়মতো ফাইল আসে না। তদবির করতে হয়। অনেক সময় ফাইল কিছু কিছু কর্মচারী সরিয়ে রাখে। আবার কখনো কখনো ফাইল খুঁজে বের করতে হয়।’

বিচারপতিরা অনেক সময় ফাইলের জন্য কর্মচারীদের তলব করে ফাইল না পাওয়ার জন্য কৈফিয়ত চান বলে জানান এই আইনজীবী নেতা। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কোনো না কোনো কোর্টে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। তাতে বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে।’

এ ধরনের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফজলুর রহমান (এফআর) খানও। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অনেক সমস্যা ফেস করছি। অনেক সময় অসাধু কোনো কর্মকর্তা ফাইল গায়েব করে ফেলেন। অনেক সময় দেখি ফাইল নাই। অনেক সময় বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ মামলার ফাইল সরিয়ে ফেলা হয়। কেউ কেউ আছে পয়সা না দিলে ফাইল নড়ায় না।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের ভাষ্য, সবাই যে এমন করেন তা নয়। কিছু কিছু কর্মকর্তা আছেন সৎ। তারা কোনোদিন একটা টাকাও দুর্নীতি করেন না। দুয়েকটি বেঞ্চের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানকার বেঞ্চ অফিসার, পিয়নরা স্বচ্ছ ইমেজের।

ফাইল গায়েব হয়ে যাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার সাইফুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। কেউ আমাদের কোনো দুর্নীতির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সম্প্রতি একটি অনিয়মের কারণে আপিল বিভাগের অ্যাফিডেভিট শাখার অনেককে বদলি করা হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রধান বিচারপতি মাঝেমধ্যে পরিদর্শন করেন বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৮মার্চ/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
লেবাননে ১০ কোটি ডলারের বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র
এনআরবিসি ব্যাংকে ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ ও ফরেন ট্রেড’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যা: এখনো ঘটনার বিস্তারিত কারণ জানতে পারেনি র‍্যাব
কুমিল্লায় অজ্ঞাত যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা