ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ডায়েটে রাখবেন যেসব খাবার

ফিচার প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২০, ১১:১৮ | প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০২০, ০৯:২৫

ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে গেলে পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। যেহেতু করোনাভাইরাসের এখনও কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি, তা প্রতিরোধে এখন আপনার আমার একটু সচেতনতাই আমাদের রক্ষা করতে পারে।

প্রকৃতি সাজিয়ে রেখেছে নানা রকমের পসরা। কৃত্রিম প্যাকেটজাত খাবার নয়, বাহারি জাঙ্ক ফুডও নয়, সবুজ শাকসবজি, ফলেই তৈরি হবে শরীরের বর্ম। আর সুস্থ শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান হল ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেলস, ফাইবার। শরীরের ভিতর থেকে মজবুত ও রোগ প্রতিরোধী করে তোলে। খুব সহজেই পাওয়া যায় এবং ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যা অবশ্যই রাখতে হবে প্রতিদিনের ডায়েটে।

ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল

শরীরের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান ভিটামিন-সি। এই ভিটামিন শরীরে দরকারি মিনারেল শোষণে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবেও এর কদর রয়েছে। সুস্থ শরীরের জন্য বেছে নিতে হবে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল। শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে সাহায্য করে মুসম্বি লেবু। কমলালেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, থিয়ামিন, ফোলেট ও পটাসিয়াম থাকে। লেবু জাতীয় ফলে ভিটামিন-সি বেশি পরিমাণে থাকে যা শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাছাড়া লেবুতে থাকে ভিটামিন বি১, বি২, বি৫, বি৬, ক্যালসিয়াম, কপার, আয়রন ও পটাসিয়াম। শরীরের টক্সিন দূর করতে ও ওজন কমাতেও সাহায্য করে লেবু।

ব্রোকোলি

ফুলকপির মতো দেখতে হলেও পুষ্টিগুণে ফুলকপিকে হার মানিয়েছে ব্রোকোলি। ভিটামিন এ, সি, কে, আয়রন, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ব্রকোলিতে ফ্যাট প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই ডায়েটেশিয়ানদেরো বেশ পছন্দের এই সবজি। ব্রোকোলিতে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভনয়েড, লিউটেন, ক্যারোটিনয়েড, বিটা-ক্যারোটিন-সহ নানা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। এতে পানির পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশ। ক্যালোরি কম থাকায় ওজন বাড়ার সম্ভাবনা নেই। পটাশিয়াম থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। ব্রকোলির গ্লুকোরাফানিন ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের কোষ মেরামতে সাহায্য করে। শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ব্রোকোলি।

লাল ক্যাপসিকাম

ক্যাপসিকামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি ২, বি৩, বি৯,ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই, ভিটামিন কে, ম্যাঙ্গানিজ ও পটাসিয়াম থাকে। তাছাড়াও থাকে প্রচুর ফাইবার। ক্যাপসিকাম মানেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে থাকে ৩১ গ্রাম ক্যালোরি। সবুজ, লাল বা হলুদ হোক, বেলপেপারের নানা রঙ ও পুষ্টিগুণের জন্য উপাদেয় খাবার হিসেবেও রান্না করা হয় একে। বেলপেপারের গুণ অনেক। অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা কমাতে সাহায্য করে ক্যাপসিকাম। যে কোনও ক্রনিক রোগ যেমন পেটের সমস্যা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে ডায়েটে ক্যাপসিকাম রাখা যেতে পারে।

দই

শরীরের টক্সিন দূর করতে বিশেষভাবে উপকারী দই, বিশেষত টক দই। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি যা শরীরের সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। টক দইয়ের প্রো বায়োটিক উপাদান লিভারকে যেমন সুস্থ রাখে তেমনই এর জেরে কোলেস্টেরলও নিয়ন্ত্রণে থাকে। অনেকেই দুধ খেতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে ভরসা রাখতে পারেন দইয়ের উপর। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও মেদ কমাতে দই খুবই উপকারী।

রসুন

রসুনকে বলে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক। সকালে প্রাতঃরাশের আগে রসুন খেলে ঠান্ডা লাগার প্রকোপ কমে অনেকটাই। রসুনের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রক্তকে পরিশুদ্ধ রাখে। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রসুন খুব উপকারী। রসুন খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। রসুনের রস হার্টের জন্যও খুব উপকারী। রসুন টক্সিন দূর করতে ওস্তাদ। শরীরকে ডি-টক্সিফাই করে। স্নায়বিক চাপ কমিয়ে মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে রসুন। কিছু ভাইরাস ও সংক্রমণজনিত অসুখ, যেমন নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি, হুপিং কাফ ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে পারে রসুন।

আদা

ঘরোয়া টোটকায় আদা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে বহু বছর ধরেই। নিয়মিত আদা খেলে তা যেমন পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, তেমনই মাথা ঘোরা, বমি ভাব, যে কোনও যন্ত্রণা উপশমেও উপকারী আদা। সর্দি, কাশির সমস্যা সহজে সারিয়ে তুলতেও প্রয়োজন আদা।

পালং শাক

এই শাকের বহুগুণ। বাঙালি বা কন্টিনেন্টাল রান্নায় পালং শাক যোগ করলে স্বাদ যেমন বাড়ে, তেমন সেই রান্নার পুষ্টিগুণও বাড়ে। পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ এবং বিটা কেরোটিন আছে। কোলনের কোষকে রক্ষা করতে বিশেষ কার্যকর এই শাক। মাইগ্রেন, বাত প্রভৃতি অসুখের ডায়েটে পালং শাক রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। আয়রণের পরিমাণ বেশি থাকায় রক্তাল্পতা রুখতে ও রক্তের দূষণ প্রতিরোধে এই শাক খুবই উপকারী। এর ফ্যাভোনয়েডরা ক্যানসারের মতো মারণ রোগকে রুখতে পারে। ব্রেন-সেল বা মস্তিষ্ক কোষের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে পালং শাক।

আমন্ড

আমন্ডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন ই রয়েছে। ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের মৃতপ্রায় কোষগুলোকে সারিয়ে তোলে। কোষ পর্দার মেরামতি করে। ত্বককে সজীব রাখে। আমন্ডের অন্যতম কাজ খারাপ কোলেস্টেরলকে ভাল কোলেস্টেরলে পরিবর্তিত করা। এ ছাড়া শরীরের মেটাবলিজমের রেট বাড়িয়ে তা খিদে বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে আমন্ড। তাই প্রতি দিন ডায়েটে ৭-৮টা আমন্ড রাখার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা।

হলুদ

হলুদে থাকে এমন এক ম্যাজিক যৌগ যা শরীরের জন্য অন্যতম উপকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই যৌগের নাম কারকুমিন। কারকুমিন ছাড়াও হলুদে আছে যথেষ্ট পরিমাণ ফোলেট, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট। কাঁচা হলুদে আছে ভিটামিন সি। সুতরাং বহু রোগের প্রতিকার হতে পারে হলুদেই। মারাত্মক ভাইরাল ফিভারের বিরুদ্ধেও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে পারে হলুদ।

গ্রিন টি

গ্রিন টি-তে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে থাকে এপিগালোকাটেচিন গ্যালেট, এই শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গ্রিন টি-তে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড এল-থিয়ানিন যা যে কোনও সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

পেঁপে

স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের ডায়েট তালিকায় বহুদিন ধরেই জায়গা করে নিয়েছে পেঁপে। ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ পেঁপেতে ক্যালোরির পরিমাণ ৩৭। একটি পেঁপে থাকে ২২৪% ভিটামিন সি। তা ছাড়া এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ভিটামিন-বি ও ফোলেট। এর প্যাপাইন উৎসেচক প্রদাহজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। তা ছাড়া পেঁপে বীজেরও রয়েছে ভরপুর পুষ্টিগুণ। পেঁপে বীজে রয়েছে প্রোটিওলাইটিক উৎসেচক, যা দেহে বাসা বাধা নানা ক্ষতিকর জীবাণু নাশ করে।

কিউয়ি

পেঁপের মতোই কিউই ফলেও রয়েছে ভরপুর ভিটামিন, প্রোটিন ও মিনারেলস। এতে রয়েছে ফোলেট, পটাসিয়াম, ভিটামিন কে ও ভিটামিন সি। এর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরকে ভেতর থেকে মজবুত করে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।

চিকেন/টার্কি স্যুপ

দুর্বল শরীর বা রোগ সারানোর ভাল পথ্যই হল চিকেন স্যুপ। পোলট্রি চিকেন বা টার্কিতে থাকে ভিটামিন বি-৬। ঝামশলাদার করে নয়, সবজি দিয়ে হাল্কা চিকেন স্যুপ বা টার্কি খেলে শরীরের চাহিদার ৪০-৫০% ভিটামিন বি৬ পাওয়া যায় এর থেকেই। তাছাড়া শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে। সিদ্ধ পোলট্রি চিকেনের হাড়ে থাকে জিলেটিন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান যা যে কোনও সংক্রামক রোগ সারাতে সাহায্য করে।

সূর্যমুখীর বীজ

সূর্যমুখীর বীজের গুণ অনেক। এতে থাকে ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও ভিটামিন বি৬। তাছাড়াও থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই যা শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়ায়, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে সূর্যমুখীর বীজ।

(ঢাকাটাইমস/২এপ্রিল/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :