‘মার্কেটিং অ্যান্ড সেলসম্যান’

করোনার মহামারির মধ্যেও আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। কারণ তিনি আমাদের এখনো নিরাপদে ও সুস্থ রেখেছেন। আমি কোনো লেখক বা সাংবাদিক নই। জীবনে প্রথমবার লেখার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করার চেষ্টা করছি মাত্র, ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।
মার্কেটিং এবং সেলস বলতে আমার ভাষায় আমি যা বুঝি, ‘একটি পণ্যকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে একজন ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা এবং সে পণ্য নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রি।’ তবে বিষয়টি আসলে এত সহজ নয়! আমরা যারা মার্কেটিং পেশায় আছি তাদেরকে অনেকগুলো নামে ডাকা হয়। যেমন- এম আর, এস আর, সেলসম্যান, সেলস এক্সিকিউটিভ আরো অনেক নাম।
আমি প্রায় এক যুগ ধরে সেলস মার্কেটিং পেশায় নিয়োজিত। জীবনের এই অভিজ্ঞতায় আমি অনেক প্রতিবন্ধকতা, অসহায়ত্ব, অবহেলিত অবস্থা পার করেছি। প্রতিটি সময় আমি শিক্ষা নিয়েছি কীভাবে পরিস্থিতি সামলে নিয়ে টিকে থাকা যায়। কীভাবে টিকে থাকতে হবে জীবনযুদ্ধে। পণ্য বিক্রি করতে যখন আমরা দোকানে, অফিসে বা বিভিন্ন জায়গায় যাই অনেক সময় আমাদের পেশাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করা হয়। অনেক সময় আপনারা হয়তো বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে দেখেছেন অনেক জায়গায় সাইনবোর্ড লাগানো থাকে ‘সেলসম্যান প্রবেশ নিষেধ’।
একজন দোকানদারের কাছে গিয়ে বা একটি অফিসে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একটা ফার্মেসিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হয় কখন সময় দেবেন কখন আমি দুইশো টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারব? আজকে আমরা মানুষের দরজায় অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে / বসে থেকে কার জন্য পণ্য বিক্রি করি? নিশ্চয়ই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য। বিনিময়ে মাস শেষে বেতন আর কিছু অ্যালাউন্স। যা দিয়ে আমাদের পরিবার এবং নিজে বাঁচার জন্য চেষ্টা করা।
এখন সারাবিশ্বে ‘করোনা’ মহামারি চলছে। এই দুঃসময়ে কি আমরা থেমে আছি? নিজের জীবন, পরিবারের জীবন বাজি রেখে কেউ দোকানে যাচ্ছি মুদি পণ্য বিক্রয় করার জন্য। কেউ বিভিন্ন ফার্মেসিতে বা হাসপাতালে যাচ্ছি ওষুধ বিক্রি করার জন্য। কেউ আবার বিক্রি করা পণ্য মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি। কেউ অনলাইনে অন্যের পণ্য বিক্রি করছি, কেউ ব্যাংকে যাচ্ছি সে বিক্রি করা পণ্যের টাকা জমা দেওয়ার জন্য। কারণ আমি বা আমরা না দৌড়ালে আমার প্রতিষ্ঠান চলবে না। আর আমার প্রতিষ্ঠান না চললে আমাদের সরকার চলবে না। আমাদের সরকার না চললে দেশ চলবে না। কিন্তু দিনশেষে আমরা এই সেলসম্যানরা কি সেভাবে মূল্যায়ন পাই? সে সম্মানটুকু কি আমরা পাই?
আমরা যদি কোন কারণে কোম্পানির পণ্য বিক্রি করতে না পারি এভাবে যদি মাস, দুই মাস ( প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর) তাহলে হয়তো অনেকের চাকরি থাকবে না। কিন্তু আমরা যে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানের জন্য শ্রম দিয়ে গিয়েছি তা বেমালুম ভুলে যাবে।
পরিশেষে বলতে চাই আমরা অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর এক বড় যোদ্ধা। দয়া করে আমাদেরকে ছোট করবেন না। আমাদেরকে হেয় করবেন না। আমাদেরকে মূল্যায়ন করুন। সম্মান দিয়ে শ্রমের মর্যাদা দিয়ে।
লেখক: সিনিয়র অফিসার, করপোরেট মার্কেটিং, আবুল খায়ের স্টিল আবুল খায়ের গ্রুপ

মন্তব্য করুন