‘ওয়েব সিরিজ’-এ যৌনতা প্রসঙ্গ

বিনোদন প্রতিবেদক
  প্রকাশিত : ২১ জুন ২০২০, ১১:৪৩
অ- অ+

আসলে কোনটা গল্পের প্রয়োজন আর কোনটা অপ্রয়োজন, সবার আগে সেটা বুঝতে হবে। কোনটা নান্দনিকতা আর কোনটা নোংরামো, এই বিষয়ে রুচিবোধ থাকতে হবে। আমি দুটি ওয়েব সিরিজ দেখেছি, ‘আগস্ট ১৪’ এবং ‘বুমেরাং’। শিহাব শাহীনের ‘আগস্ট ১৪’ দেখে ঠিকঠাকই লেগেছে। যতটুকু যা দেখানো হয়েছে তা গল্পের প্রয়োজনেই। কিন্তু ‘বুমেরাং’ একেবারেই ঠিক ছিল না। গল্পের প্রয়োজন বলে কোন ব্যাপার নাই এখানে। বরং যৌনদৃশ্য দিয়ে দর্শক ধরার কায়দা মনে হয়েছে। যেমন কায়দা আগে আমরা বাংলা সিনেমায় দেখেছি, যাহাকে ‘কাটপিস’ বলা হতো।

অতএব ওয়েবে নির্মাতার স্বাধীনতা মানে এই নয় যে, সে তার ইচ্ছা মতো যৌনতা দেখানোর কিংবা বিক্রি করার অধিকার রাখে। যদি এখানে আপনারা নির্মাতার স্বাধীনতা চান, তবে যে নির্মাতা পর্ণ নির্মাণ করতে চায়, তাকেও স্বাধীনতা দিতে হবে। সেটা কি সম্ভব? বাংলাদেশের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অবস্থান থেকে কখনোই তা সম্ভব নয়।

যে বা যাহারা গল্পের প্রয়োজন বলে চিল্লাইতেছেন, তাহারা কি একবারও বলেছেন, ‘বুমেরাং’ গল্পের প্রয়োজনে যৌনদৃশ্য আনে নাই, আমরা ‘বুমেরাং’-এর মতো ওয়েব সিরিজ চাই না। ‘আগস্ট ১৪’ গল্পের প্রয়োজনে দেখানো হয়েছে, আমরা ‘আগস্ট ১৪’ চাই।, বলেন নাই। আপনারা বলছেন স্বাধীনতা চাই। তাহলে এটা নিশ্চিত, আপনাদের স্বাধীনতা দেয়া হলে ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হবে। আপনারা অর্ধ-পর্ণ নির্মাণ করতে থাকবেন আর ওয়েব প্ল্যাটফর্মগুলো রমরমা ব্যবসা করে যাবে।

সেদিন ফেসবুকে দেখলাম, এক নির্মাতা স্ট্যাটাস দিয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘যারা ওয়েব সিরিজে সেক্স দেখানোর বিপক্ষে, তাদের জন্য ধিক্কার। ছিঃ ছিঃ ছিঃ, আপনার বাবা-মা আপনাকে সেক্স করে পয়দা করছে, তাই আপনার লজ্জা পাওয়া উচিত।’ এই হচ্ছে কতিপয় নির্মাতার মানসিক অবস্থা।

হ্যাঁ জনাব, সবার বাবা-মা’ই সেক্স করে সবাইকে পয়দা করছে। তারা গোপনে কাজটি করেছে। আর এটাই সম্পর্কের সৌন্দর্য। এখন আপনি যদি মনে করেন, আপনার বাবা-মা গোপনে নয়, স্টেডিয়াম ভাড়া করে টিকেট কেঁটে দর্শক এনে সবার সামনে সেক্স করে আপনাকে পয়দা করছে, তাইলে আপনি সরাসরি পর্ণ বানানোর অধিকার রাখেন এবং এর জন্য চিল্লাইতে থাকেন।

অবস্থা দেখে যা মনে হইতেছে, ওয়েব সিরিজ প্রসারের লক্ষ্যে সরকারের সেন্সরশীপ নয়, বরং নির্মাতাদের মানসিক সুস্থতার সার্টিফিকেট দেওয়া বেশি জরুরী। যেসব নির্মাতারা মানসিকভাবে সুস্থ অর্থাৎ যৌন-বিকৃত রুচির নয়, মানে পারভার্টেড নয়, তারাই ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করতে পারবেন। কারন তারাই গল্পের প্রয়োজনে যদি আন্তরিক দৃশ্য বা যৌন-দৃশ্য প্রয়োজন হয়, ঠিকঠাক দেখাতে পারবেন। দৃশ্যগুলোও যথেষ্ট নান্দনিক হবে আশা করি। আর যারা মানসিকভাবে অসুস্থ, পারভার্টেড তাদের ডাইরেক্ট বন্দি করে চিকিৎসা দেওয়া হোক। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর দেখা যাবে, সে ওয়েবে পারফেক্ট কিনা!

আসলে স্বাধীনতা তাকেই দেয়া উঁচিত, যে স্বাধীনতার যথাযথ মূল্য দিতে পারবে। আধুনিকতা মানে বিকৃত-রুচি নয়, আধুনিকতা মানে সময়োপযোগী শৈল্পিক চর্চা। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি যেমন এ অঞ্চলে ব্যবসা করার জন্য প্রথমে জমিদারদের হাত করেছে, তেমনি ওয়েব প্ল্যাটফর্মগুলো কতিপয় নির্মাতাদের ভাড়া করেছে। এখন ভাড়াটেরা তাদের পছন্দমতো নির্মাতাদের টেনে দল ভারী করতেছে। এতে মূল ফোকাস অন্যদিকে সরিয়ে দিচ্ছে। খুব সূক্ষ্ণ অপকৌশল।

স্বাধীনতার নামে 'অর্ধ-পর্ণ' নির্মাণের অধিকার তাদের হাতে তুলে দেয়া উঁচিত হবে না। আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি প্রেমময় সম্পর্কের প্রথম `চুম্বন’টি খুবই স্নিগ্ধ এবং সুন্দর। অথচ বিকৃত-রুচির কোনও নির্মাতা এটাকে চিত্রায়ন করতে গিয়ে ‘অশ্লীল’ বানিয়ে ফেলতে পারে। অতএব প্রথম চুম্বনের সৌন্দর্য নিরাপদ থাক রুচিশীল নির্মাতাদের হাতে। নিরাপদ থাক প্রতিটি সম্পর্কের অন্তরঙ্গ মূহুর্তগুলোর চিত্রায়ণও...

লেখক: নির্মাতা জাকরিয়া সৌখিন

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ ও সেক্রেটারিয়েট পুনর্গঠন
আখাউড়ায় ট্রেনচালকের গলিত মরদেহ উদ্ধার
গোপালগঞ্জে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান, নদীপথে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর নজরদারি 
বর্ষাকালে সুস্থ ও ফিট থাকার ১৩ উপায়
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা