হিমশীতল লেবুর আশ্চর্যজনক উপকারিতা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৪৫

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বেশি বেশি ভিটামিন-সি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন। আমাদের দেশে ভিটামিন-সি এর সবচেয়ে ভালো উৎস হিসেবে ধরা হয় লেবুকে। লেবুর বৈজ্ঞানিক নাম সাইট্রাস লিমন। শুধু খাওয়াই নয় সকালে উঠে থেকে রাতে শুতে যাওয়া অবধি, রূপচর্চা হোক, বা হোক সে শরীরচর্চা- লেবু প্রায় প্রতিটি পরিবারেই চলে নিয়মমাফিক।

লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের প্রায় সকলেরই অল্পবিস্তর ধারণা রয়েছে। কিন্তু ফ্রিজে রাখা, বিশেষ করে ডিপ ফ্রিজে রেখে ফ্রিজড বা হিমশীতল লেবুর গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা জানি! এই হিমশীতল লেবু যেমন খাবারে খেতে সুস্বাদু লাগে, তেমনই আবার শরীর সুস্থ এবং সবল রাখতে এর উপকারিতা শুনলে সত্যিই অবাক হবেন। লেবুটিকে ফ্রিজের বরফ তৈরির জায়গায় রাখুন। তারপর সেটি জমে বরফ হয়ে গেলে ছাড়িয়ে কেটে ফেলুন। এরপর সেই লেবুর অংশবিশেষ যে কোন খাবারের ওপর ছড়িয়ে দিন। খাবারের স্বাদ যা হবে, আপনি নিজেই মোহিত হবেন তাতে! তবে ঠান্ডা লেবু শরীরে গেলে কীভাবে উপকারিত হবেন, তা জানা অত্যন্ত জরুরি।

লেবুর রসের থেকে লেবুর খোসায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি ভিটামিন থাকে। আর আপনি সেই খোসাই ডাস্টবিনে ফেলে দেন! কিন্তু এই লেবুর খোসাই যদি খাবারে ছড়িয়ে দেন, তাহলে খাবারের গন্ধও যেমন দুর্দান্ত হবে তেমনই আবার আপনার শরীরেরও আখেরে অনেক উপকার দেবে। আর হিমশীতল লেবুর খোসা হলে তো কোনও কথাই নেই! নিয়মিত ফ্রিজড বা হিমশীতল লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে সমস্ত রোগকে চিরকালের মতো টাটা বাই বাই করতে সক্ষম হবেন। ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লেবু কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এটি রক্তের শ্বেতকনিকা বৃদ্ধি করে যা জীবাণু ধ্বংস করে। এছাড়া এন্টিবডি উৎপাদনে সহায়তা করে।

হিমশীতল লেবুর খোসা আপনার শরীরের ভিতর থেকে সমস্ত ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে বের করে দেয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, হিমশীতল লেবুর খোসা ছাড়িয়ে খাওয়াটা কতটা স্বাস্থ্যকর। তাই রোজ লেবু ফ্রিজে রাখুন। পারলে ডিপ ফ্রিজে। যে কোনও ধরনের লেবু হতে পারে তা। গন্ধরাজ, পাতি লেবু থেকে শুরু করে এক্কেবারে কমলালেবু, বাতাবিলেবু-- সব ধরনের লেবুর খোসাই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ভালো পুনরুজ্জীবক হিসেবে কাজ করে।

বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে এমনকী ডাক্তাররাও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির থেকেও অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী হিমশীতল লেবুর খোসা। লেবুর মধ্যে থাকে লেমোনয়েড যা আসলে ক্যানসারের কোষগুলোকে বাড়তে দেয় না। বিশেষ করে স্তন ক্যানসারের। আর এই লেমোনয়েডের জন্যই লেবু শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডান্ট হিসেবে কাজ করে। শরীরে যো ক্যানসার কোষগুলো রয়েছে সেগুলিকে যেমন এই লেমোনয়েড ধ্বংস করে, তেমনই আবার ক্যানসারের বৃদ্ধি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। তবে গোটা লেবু চিবিয়ে খেলে এর গুণাগুণ পুরোপুরি পাওয়া যায় না। তাই জরুরি ফ্রিজে রেখে লেবু এবং তার খোসা খাওয়া। কারণ ফ্রিজে রাখতেই লেবুর খোসার তিক্ততা ভাব অনেকটা কেটে যায়। আর তাতেই তা ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করার কাজে আসে।

গবেষণায় দেখা গেছে, লেবু আসলে, কোলন, স্তন, প্রোস্টেট, অগ্নাশয়, ফুসফুস-সহ আরও ১২ রকমের ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে পারে। এখানেই শেষ নয়। লেবু ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন এবং ছত্রাকের বিরুদ্ধেও খুব ভালো কাজ করে। আপনার ডায়াবিটিস চিরতরে সারিয়ে তুলতে পারে। বিভিন্ন পরজীবী এবং কৃমির ক্ষেত্রেও এটি খুব কার্যকরী। তার সঙ্গেই উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করে। মানসিক অবসাদ দূরে সরিয়ে দিতে পারে। পারকিন্সন-এর মত অসুখও সারিয়ে তুলতে পারে। পাশাপাশিই পেটের সমস্যাও চিরতরে দূর করে দিতে পারে লেবু এবং লেবুর খোসা। লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড গলব্লাডারে স্টোন, কিডনি স্টোনকে নিমেষে গলিয়ে দিতে পারে।

কীভাবে লেবুটিকে হিমশীতল করবেন

প্রথমেই ভালো করে লেবু ধুয়ে নিন। আর তারপরে সেই লেবুটিকে বেশ কিছুক্ষণ বেকিং সোডা বা অ্যাপেল সিডার ভিনিগারে ভিজিয়ে নিন। তারপরে লেবুগুলো ছাড়িয়ে তার খোসা এমনকী বীজ সমতে আইস কিউবের পাত্রে জল-সহ রেখে দিন। এই ভাবে লেবু এবং লেবুর অন্যান্য জিনিসগুলো ফ্রিজড করুন। এবার ওই লেবু, লেবুর বীজ এবং খোসা সমেত সেই আইস কিউবগুলো ব্যবহার করুন খাবারে। আইসক্রিম থেকে শুরু করে পাস্তা, স্যালাড, সস, স্যুপ সবেতেই ব্যবহার করতে পারেন আইস কিউবগুলো। এমনকী রোজ সকালে উঠে একটি আইস কিউবের মধ্যে পানি মিশিয়ে রোজ যদি সেই পানীয় পান করতে পারেন, তাহলে তো কোনও কথাই নেই।

লেবুর খোসার উপকারিতা

ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপির থেকেও অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী হিমশীতল লেবুর খোসা।

ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে লেবুর খোসা। লেবুর খোসায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, পেকটিন, ফাইবার এবং মিনারেলস। লেবুর রসের এসব উপাদান শরীরের নিরাময় এবং আরোগ্যে কাজ করে।

হার্টের জন্য লেবুর খোসা খাওয়া হার্টের জন্য ভালো। লেবুর খোসা বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমায়। এর মধ্যে পটাশিয়াম থাকার কারণে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা লেবুর খোসায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। ঠান্ডা, ফ্লু এবং গলার ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে লেবুর খোসার মধ্যে উপস্থিত ফাইবার বা আঁশ অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে এবং বাউয়েল মুভমেন্ট ভালো করে। এটি হজমে সাহায্য করে এবং পেট ফোলাভাব রোধেও সহায়তা করে।

ওজন কমায় লেবুর খোসা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে যে পেকটিন রয়েছে তা অন্ত্রের শর্করা শোষণ করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্যও লেবুর খোসা বেশ ভালো। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিপাকে সাহায্য করে।

হাড়ের স্বাস্থ্য আশ্চর্য হলেও সত্যি লেবুর খোসায় রয়েছে ক্যালসিয়াম। এটি হাড়ের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।

গেরোর ব্যথা শরীরের দৈনিক ভিটামিন সি-এর চাহিদার ৩০ শতাংশ লেবু পূরণ করতে পারে। ভিটামিন সি-এর আছে নিরাময় ক্ষমতা। এটি প্রোটিনের বাঁধনে সাহায্য করে, যা টেনডনস, লিগামেন্ট এবং ত্বকের জন্য ভালো। তাই লেবু এবং লেবুর খোসা খেতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর ত্বক লেবুর খোসা কালো দাগ, বলি রেখা, বার্ধক্যের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বক ভালো রাখতে এটা খেতেও পারেন এবং সরাসরি ত্বকে লাগাতেও পারেন।

ঢাকাটাইমস/৯সেপ্টেম্বর/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :