কলহ-বিবাদ গড়াচ্ছে খুনে

আল-আমিন রাজু
| আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:১১ | প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৮:৩২

পারিবারিক-দাম্পত্য কলহ বিবাদ থেকে হত্যার ঘটনা বেড়েছে। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে তুচ্ছ বিষয়কে ঘিরেও হত্যার ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব ঘটনা থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিবেশিরাও। করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে এই ধরনের সহিংস ঘটনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা।

গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে সাতজনকে হত্যা, দুইজনকে কুপিয়ে জখম এবং স্ত্রী-সন্তানদের হামলার পরে এক ব্যক্তি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া রাজধানীর বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার একটি বাসা থেকে গলাকাটা এক গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

নরসিংদীর শিবপুরে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন এক পাষণ্ড স্বামী। স্ত্রী ছাড়াও এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বাড়ির মালিক ও তার স্ত্রী। গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার স্ত্রী-সন্তানকে কুপিয়ে আত্মহত্যা করেছেন একজন। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন ভিক্ষুক ও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এক নৈশ প্রহরীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও খুলনায় একটি নির্মানাধীন বাড়ির ছাদ থেকে প্রহরীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যক্তির সামাজিক বন্ধন কমে আসা, আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব বৃদ্ধি, দাম্পত্যজনিত বিভিন্ন সমস্যাজনিত হতাশা, আর্থিক টানাপড়েনসহ বিভিন্ন সমস্যা মানুষকে অপরাধপ্রবন করে তুলছে। বোঝাপড়ার মাধ্যমে সুরাহা হতে পারে এমন বিষয়েও মানুষ আশঙ্কাজনকভাবে সহিংস হয়ে উঠছে। জনসচেনতা তৈরি করা না গেলে এই ধরনের অপরাধ আরও বাড়তে থাকবে।

রাজধানীর বনানীতে চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার ১ নাম্বার রোডের একটি বাসা থেকে গলা কাটা অবস্থায় গৃহকর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের নাম লিজা (২১)। গতকাল বিকালে ওই গৃহ কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আজম মিয়া বলেন, চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার ১ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়ির সার্ভেন্ট রুম থেকে গলা কাটা অবস্থায় গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়ছে। তার গলায় ওড়না পেঁচানোর দাগ রয়েছে। তবে ওড়না উপরে ঝুলছিল। ওই বাসার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

নরসিংদীর শিবপুরে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বাদল মিয়া নামে এক কাঠমিস্ত্রি। নিহত বাকি দুজন বাড়ির মালিক ও তার স্ত্রী। এসময় আরও দুজন আহত হন। গতকাল ভোরে শিবপুর উপজেলার কুমরাদী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন বাদল মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগম (৪০), বাড়ির মালিক তাজুল ইসলাম (৫৫) ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫)।

শিবপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম জানান, ৮/৯ বছর আগে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া এলাকার কাঠমিস্ত্রি বাদল মিয়া শিবপুরের দুলালপুর এলাকার স্বামী পরিত্যক্তা নাজমা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তারা কুমরাদী গ্রামের তাজুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে আসছিলেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে রবিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে স্ত্রী নাজমা বেগম ও স্বামী বাদল মিয়ার মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।

ওসি বলেন, ঝগড়ার একপর্যায়ে স্বামী বাদল স্ত্রী নাজমা বেগম ও তার আগের সংসারের এক ছেলেকে কুপিয়ে আহত করেন। চিৎকার শুনে বাড়ি মালিক তাজুল ইসলাম, তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও মেয়ে কুলসুম বেগম এগিয়ে গেলে তাদেরকেও কুপিয়ে আহত করেন।’

স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমা ও মনোয়ারা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে মারা যান বাড়ি মালিক তাজুল ইসলাম। এ ঘটনায় স্থানীয়রা অভিযুক্ত স্বামী কাঠমিস্ত্রি বাদল মিয়াকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

গোপালগঞ্জে স্ত্রী-সন্তানকে কুপিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মনির মোল্লা (৫৫) নামে এক ব্যক্তি। গত শনিবার রাতে সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- মনিরের স্ত্রী তানজিলা বেগম (৪০) ও ছেলে ইমদাদুল মোল্লা (২২)। তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে মনির মোল্লা তার স্ত্রী তানজিলা বেগম ও ছেলে ইমদাদুল মোল্লাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। পরে নিজের গলায় ধারালো অস্ত্র চালিয়ে আত্মহত্যা করে। প্রতিবেশীরা পরে তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা আশংকাজনক। নিহত মনিরের লাশ গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় এক মানষিক ভারসাম্যহীন ভিক্ষুককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকালে উপজেলার বদরপাশা ইউনিয়নের শংকরদিরপাড় থেকে তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তির নাম আবুল বাশার। তিনি ওই এলাকার মৃত আলেম হাওলাদারের ছেলে।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদী জানান, ওই এলাকার দোকানের সামনে রবিবার সকালে রক্তাক্ত এক যুবকের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ এসে বাশারের মরদেহ উদ্ধার করে। নিহতের গলায় ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ছুরিকাঘাতে ইয়াকুব (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রায়পুর ইউনিয়নের চুন্নাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ইয়াকুব স্থানীয় বাজারে নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। বুকে ছুরিকাঘাত নিয়ে ইয়াকুব কোনোমতে পাশের একটি বাড়িতে যায়। বাসিন্দারা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রবিবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে ইয়াকুবকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আনোয়ারা থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, কে বা কারা এই ছুরিকাঘাত করেছে তা জানা যায়নি। ইয়াকুবের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন খোয়া যায়নি, কোনো দোকানেও চুরি হয়নি। সবদিক বিবেচনা করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

খুলনার টুটপাড়া কবরখানা মোড়ে নির্মাণাধীন সিসভাস নামে একটি ভবনের ছাদ থেকে এক বৃদ্ধ কেয়ারটেকারের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার নাম তপন সরদার (৫০)। গতকাল সকাল ৯টার দিকে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

খুলনা সদর থানার ওসি আশরাফ-উল- আলম জানান, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত বৃদ্ধ সিসভাস নামে নির্মাণাধীন ওই ভবনের কেয়ারটেকার ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/আরকে/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :