দোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন দ্রুত সম্পন্নের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর ২০২০, ২০:৫৮| আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২০, ২১:০৫
অ- অ+

রাজধানীর দোলাইরপাড় চৌরাস্তায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন যথাসময়ে ও দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়েছে।

এ উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ড. মো. আওলাদ হোসেন এর বাসভবনে এক আলোচনা সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ৫২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাছিম মিয়া।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ‘সূরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াতের তামাসিলা (ভাস্কর্য) এবং সূরা ইব্রাহিমের ৩৫ নম্বর আয়াতের আসনাম (প্রতিমা পূজা)—এই দুটি শব্দের অর্থকে বিকৃত করে ধর্মান্ধরা মূর্তিকে ভাস্কর্য বানাতে চাচ্ছেন। ভাস্কর্য এবং মূর্তির মাঝে অনেক বড় পার্থক্য আছে। ভাস্কর্য হলো সুন্দরের প্রতীক, কিন্তু মূর্তি হলো চেতনার প্রতীক।’

তিনি বলেন, প্রশ্ন হলো, ইসলাম ভাস্কর্যকে সমর্থন করলেও মূর্তিকে সমর্থন করে না কেন?

এর ব্যাখ্যায় ড. আওলাদ হোসেন বলেন, মূর্তি ও ভাস্কর্যের পার্থক্যটা কাঠামোগত নয়, বরং চেতনাগত। কোনো কিছুকে চেতনার প্রতীক মনে করলে, তার কাঠামো যাই হোক না কেন, সেটা মূর্তি। অন্যদিকে, কোনো কিছুকে সুন্দরের প্রতীক মনে করলে, এবং তার কাঠামো যদি নোংরা না হয়, তাহলে তা ভাস্কর্য।

‘একটি প্রতিকৃতিকে কেউ যখন বাচ্চার খেলনার মত মনে করবে, অথবা সৌন্দর্যের কোনো কাজে ব্যবহার করবে, তখন তা ভাস্কর্য হিসাবে গণ্য হবে। কিন্তু একই প্রতিকৃতিকে কেউ যদি তার চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতীক মনে করে, তখন তা মূর্তি হিসাবে গণ্য হবে।’

এসময় প্রচণ্ড-রক্ষণশীল মুসলিম দেশ সৌদি আরবের উদাহরণ টেনে ড. আওলাদ বলেন, ‘সৌদির বাণিজ্যিক রাজধানী জেদ্দা নগরীতে আছে উটের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। রাজধানী জেদ্দার উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে নগরীতে মুষ্টিবদ্ধ হাত, হাংরি হর্স, মানব চোখ, মরুর বুকে উটের ভাস্কর্য। আফগানিস্থানের জঙ্গিরাও হাত দেয়নি অষ্টম শতকের সমরনায়ক আবু মুসলিম খোরাসানির ভাস্কর্যের গায়ে। গজনীতে এখনো স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে সেই ভাস্কর্য।

তাজিকিস্থানের রাজধানী দুশানবেতে মুসলিম দার্শনিক ও পন্ডিত ইবনে সিনার একটি বিশাল ভাস্কর্য আছে। মুসলিমপ্রধান ওই দেশের কোনো নাগরিক তো ভাস্কর্যটির গায়ে আঁচড়ও দেন না।’

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ তুরস্কে থাকা ভাস্কর্যেরও উদাহরণ দেন তিনি। বলেন, ‘সারা তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্কের (জন্ম : ১৮৮১-মৃত্যু ১৯৩৮ সালে) রয়েছে অগণিত ভাস্কর্য। একেকটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যে একেক রকমভাবে আতাতুর্ক এবং তুরস্কের ইতিহাস, ঐতিহ্য বিবৃত করা হয়েছে। কামাল আতাতুর্কের ভাস্কর্য ছাড়াও তুরস্কের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো: মর্মর সাগর তীরে পোতাশ্রয়ে অপূর্ব মর্মর মূর্তি, আঙ্কারাতে ইন্ডিপেনডেন্স টাওয়ারের পাদদেশে তুরস্কের জাতীয় সংস্কৃতির ধারক তিন নারী মূর্তি ও আন্তালিয়ায় এডুকেশন অ্যাক্টিভিস্ট তুরকান সায়লানের মূর্তি।’

আলোচনা সভায় আরও বলা হয়, ‘পাকিস্তানে রয়েছে ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মূর্তি; রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য শিল্প। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনের সামনে ষণ্ডমূর্তি, লাহোরে বাদশাহি মসজিদের পার্শ্বে মেরি মাতার মূর্তি, পাঞ্জাবের জং শহরের রাস্তায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়সওয়ারের মূর্তি, লাহোরে ন্যাশনাল কলেজ অব আর্টস প্রাঙ্গণের নানা মূর্তি। মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত ভাস্কর্য হলো ওয়াশিংটন মনুমেন্টের আদলে গড়া ন্যাশনাল মনুমেন্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদ হওয়া বীরদের স্মরণে ১৫ মিটারের এই ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত করা হয় ১৬৬৩ সালে। প্রতীকীভাবে সাতজন বীরের প্রতিমূর্তির মাধ্যমে বিশ্বস্ততা, আত্মত্যাগ আর বন্ধুত্বের বিষয়টি এই ভাস্কর্যের মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার ভাস্কর্য শিল্প সনাতন ও আধুনিক ধারার এক স্বতন্ত্র মেলবন্ধন। মালয়েশিয়ার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য হলো: বাতু কেভসের বিখ্যাত মুরুগান মূর্তি, কুচিং হলিডে ইন হোটেলের সামনে মার্জার মূর্তি এবং কনফুসিয়াসের মূর্তি ‘

দোলাইরপাড় চৌরাস্থায় বাঙালি জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের সরকারি সিদ্ধান্তকে স্থানীয় জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় কতিপয় ধর্মান্ধ ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক শক্তির সহযোগিতায় ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই গত কিছুদিন যাবত কতিপয় স্বার্থান্বেশী মহল বিভিন্ন প্রকার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন এর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার দাবিতে অনুষ্ঠিত সভায় গণসচেতনা সৃষ্টি করার কর্মসুচি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তি কর্মসুচি গ্রহণ করার জন্য আগামী ২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার একই স্থানে পুনরায় আলোচনা সভার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/ইএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি মেলা শুরু, থাকছে শতভাগ পর্যন্ত স্কলারশিপ
দেশে নতুন করে আর যেন কোনো স্বৈরাচারের জন্ম না হয়: নাহিদ ইসলাম
BUBT Bids Farewell to Lecturer Arifa Akther as She Embarks on PhD Journey in the USA
শ্রীলঙ্কাকে ১৫৫ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা