চুরি-দুর্নীতির অভিযোগ তবু পদোন্নতিসহ বহাল চসিকের প্রকৌশলী

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:১৪
অ- অ+

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) প্রশাসক নিয়োগের পর কিছু কর্মকর্তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির যেসব তথ্য বেরিয়ে আসে, তাতে মনে হতে পারে এ যেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত একটি বড় অংশ এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তাতে দেখা যায়, করপোরেশনের ফান্ডে টাকা না থাকলেও একশ্রেণির কর্মকর্তা করপোরেশনকে ব্যবহার করে টাকার কুমির বনে গেছেন।

আগের পরিষদের মেয়াদ শেষে নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে ভোট স্থগিত করা হয়েছিল। মেয়রশূন্য করপোরশেনে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান খোরশেদ আলম সুজন। তিনি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বেরিয়ে আসে দুর্নীতির নানা চিত্র।

করপোরেশন সূত্র জানায়, আসলে বছরের পর বছর ধরে চলছে দুর্নীতি। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ, মামলা, দুদকের নজরদারি কোনোকিছুই দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রটিকে আটকাতে পারেনি। ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে, করপোরেশনকে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে পরিচালিত করে লুটপাট হলেছে সমানে। পরিকল্পিতভাবে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

খোরশেদ আলম সুজন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বদলিমূলক ছাড়া অন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করা হয়। এ সময় একাধিক গণমাধ্যমে করপোরেশনের দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসতে থাকে। অভিযোগ উঠেছে, দুর্নীতিবাজরা নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে, এর মধ্যে থেকে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে নিয়মশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। তবে কতটুকু করা সম্ভব হয়েছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সূত্র জানায়, করপোরেশনের মধ্যে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় দুটি খাত হলো প্রকৌশল বিভাগ ও কর বিভাগ। মূলত এ দুটি বিভাগের মধ্যে দুর্নীতিবাজ চক্র এমন শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করেছে যা ভাঙা রীতিমতো কঠিন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত দেশের অন্যতম এ সিটি করপোরেশনের রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি। এ সম্পত্তি সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা হলে করপোরেশনের আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু করপোরেশনের এসব সম্পত্তি কার্যত দুর্নীতিবাজদের কবলে। তারা এসব সম্পত্তি নানাভাবে ব্যবহার করে দিনের পর দিন ফায়দা লুটেছেন। করপোরেশনের আয়বর্ধক সব স্থাপনার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, নজরদারি, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে প্রতিষ্ঠানটির আয় বহুগুণ বাড়ত বলে জানা গেছে।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ ঘিরে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয় মন্তব্য করে সূত্র জানায়, এর সিংহভাগ দুর্নীতির পেছনের হোতা হিসেবে প্রকৌশলী সুদীপ বসাকের নাম ওপেন সিক্রেট। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। করপোরেশনের পাঁচজন সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলীকে ডিঙিয়ে তিনি ওপরে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর করপোরেশনের গাছ চুরির মামলা হয়, যেটি দায়ের করেন সিটি করপোরেশনের সহকারী এস্টেট অফিসার। দুর্নীতি সুরক্ষিত করতে সুদীপ বসাক বিভিন্ন পদে নতুন নতুন লোককে চাকরি দেন বলে অভিযোগ আছে।

সাগরিকা ইয়ার্ডে ২০০৬ সালে কেনা একটি পুরোনো অ্যাসফল্ট প্লান্ট পরিচালনার জন্য ৬৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। এটি খারাপ থাকায় নতুন একটি অ্যাসফল্ট প্লান্ট বসানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পুরনো ৬৩ জন লোক থাকা সত্ত্বেও সুদীপ বসাক বিধিবহির্ভূতভাবে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিজ প্রভাবে বিভিন্ন ধাপে আরও ১২৯ জনকে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগের নথিতে প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বারবার আপত্তি দেন। কিন্তু তার আপত্তি উপেক্ষা করে করপোরেশনের অদৃশ্য শক্তির বদৌলতে নিয়োগগুলো পাস হয়ে যায়।

জানা যায়, সুদীপ বসাক নতুন নিয়োগের সময় আগে থেকে নিয়োজিত ৬৩ জনের তথ্যটি চেপে যান। অথচ প্রতি মাসে তাদের বেতন-ভাতা বাবদ করপোরেশন থেকে ব্যয় হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা। দুদকের গণশুনানিতেও বিষয়টি উঠে আসে। নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল হুদা সিদ্দিকী দুদকে এ ব্যাপারে অভিযোগ দাখিল করেন।

সাবেক মেয়রের সময় ২০১৯ সালে ৫০ টন ওজনের ওয়েব্রিজের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছিল। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর ছিল টেন্ডার দাখিলের শেষ দিন। এ কে ভুইয়ান অ্যান্ড কোম্পানি ও মেসার্স আল আমিন ডিজিটাল সেলস নামের দুটি কোম্পানি টেন্ডার দাখিল করে। প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা! অথচ এর বাজার দর প্রতিটি ১২ লাখ টাকা। দুই বছর আগে প্রকৌশলী সুদীপ বসাকের আত্মীয়ের মালিকানাধীন এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিংকে দুটি ৫০ টন ওজনের ওয়েব্রিজ সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এগুলোর বাজার দর ১২ লাখ হলেও তাকে ৮০ লাখ টাকায় কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দরপত্রে তার আত্মীয়ের অবস্থান ছিল তৃতীয়। একই প্রতিষ্ঠানকে পাথর সরবরাহের জন্য ৫ লাখ টাকা করে ১২টি কার্যাদেশ দেওয়া হয় প্রকৌশলী সুদীপের প্রভাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চাকরিতে যোগদানের পর থেকে তার (সুদীপ) বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়েছে, অভিযোগ উঠেছে। এগুলো নিয়ে তদন্ত হলেও বিচার হয়নি। বরং একের পর এক পদোন্নতি নিয়ে বহাল তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২ফেব্রুয়ারি/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
"হাতে হারিকেন ধরিয়ে জাহান্নামে পাঠানো হবে!" — চাঁদাবাজি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার হুঁশিয়ারি
মিডফোর্ডের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিএনপিকে দায় চাপানো অপরাজনীতি: সালাহউদ্দিন
মিডফোর্টে পাথর মেরে হত্যা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে: জামায়াত
মিটফোর্ড হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি বিএনপি মহাসচিবের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা