খুব উঁচুদরের মানুষ ছিলেন তারেক শামসুর রেহমান

মারুফ কামাল খান
  প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১৭:১২| আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৫৭
অ- অ+

ড. তারেক শামসুর রেহমানের এমন মৃত্যুর সংবাদে আমি স্তম্ভিত। একা বাসায় থাকতেন। নিঃসঙ্গ অবস্থায় সেখানে মারা গেছেন তিনি। সেই ফ্ল্যাটের দরোজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন একা থাকতেন তিনি? স্ত্রী-কন্যাকে দূরদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পিরোজপুরে পৈত্রিক বাড়িতেও ইচ্ছে সত্ত্বেও যেতে পারতেন না। এসব আমি জানতাম না। জানলাম একটু আগে অবসরপ্রাপ্ত মেজর ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেনের স্ট্যাটাস পড়ে।

সরোয়ারও পিরোজপুরের সন্তান। তিনি লিখেছেন তারেক ভাই আমাদের স্কুলের অ্যালামনাই। একই শহরের বাসিন্দা। অ্যালামনাই অনুষ্ঠানেই বেশির ভাগ সময় দেখা হতো। তার ছোট বোন আমেরিকা প্রবাসী দিপু আমার সহপাঠী। বছর ৫/৬ আগে পিরোজপুরে গিয়েছিলেন। সন্ত্রাসী গডফাদারের ইঙ্গিতে, সাথে থাকা সুন্দরী মেয়ে সদস্যদের সাথে বেয়াদবি করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। নিজের জন্মস্থান ত্যাগ করলেন সাথে সাথেই। আইনের আশ্রয় নিলেন না। কেননা আইন তো সন্ত্রাসীদের কথায় চলে। এই সন্ত্রাসীরাই তার পিতার সম্পত্তির একাংশ বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছে। বলেছিলাম একটু ধৈর্য ধরুন। পিরোজপুরে থাকতে চেয়েছিলেন। সন্ত্রাসীদের কারণে যেতেন না।

আমরা কোন সমাজে বাস করছি ওপরের বিবরণগুলো তার একটা ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, একজন জনপ্রিয় কলাম লেখক, একজন কৃতি গবেষকের পারিবারিক নিরাপত্তা আজ এ পর্যায়ে!

তারেক শামসুর রেহমানের এই নিঃসঙ্গ মৃত্যু কারো পরিকল্পিত কি না সে রহস্য হয়তো আমরা কখনো জানব না। যদি এর পেছনে কোনো ব্যক্তির সরাসরি হাত নাও থাকে তবুও এমন করুণ মৃত্যুর পরিবেশ ও আয়োজন যে বর্তমান রাজনীতি ও সমাজ করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নাই।

খুব নিবিড় নৈকট্য ছিল আমাদের মধ্যে একটা সময়ে। বিশেষ করে ১৯৯০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত। প্রেসক্লাবে, পত্রিকা অফিসে, বিভিন্ন বাসায় ও চেম্বারে এবং রেস্তোরাঁয় বসে চায়ের কাপে কত ঝড় তুলেছি আমরা। রাতে-দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলেছে আড্ডা। আমি, ড. তারেক, আহমেদ মুসা, কাজী সিরাজ, মাহমুদ শফিক এবং কখনো আবু সাঈদ জুবেরী কিংবা আরও কেউ কেউ আমাদের আড্ডাসঙ্গী হতেন। রাজনীতি, সাংবাদিকতা, লেখালেখি ও সামাজিক নানা প্রসঙ্গ হতো আড্ডার বিষয়বস্তু। কত উত্তপ্ত বিতর্ক, কত তত্ত্বকথা, কত ঐকমত্য ও ভিন্নমতের মধ্য দিয়ে আমরা অনুভব করতাম পারস্পরিক নৈকট্য ও হৃদয়ের উষ্ণতা।

নানান বাস্তবতার কারণে আমাদের সেই বন্ধন ২০০৬ এর পর থেকে কিছুটা শিথিল হয়ে এসেছিল। এক-এগারোর সেই বিভীষিকার দিনগুলোতে পরিস্থিতির মূল্যায়নে আমাদের অবস্থানও কিছুটা দূরত্ব তৈরি করেছিল। পরবর্তী সময়ে সিরাজ ভাই তো মরেই গেলেন, আহমেদ মুসা মার্কিন মুলুকে প্রবাস গড়লেন, আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলাম। সম্পর্ক ঝুলে থাকলো ডিজিটাল যোগাযোগের সুতোয়। সেই ক্ষীণ সুতোটাও ছিঁড়ে চলে গেলেন তারেক শামসুর রেহমান। মানুষ হিসেবে খুব উঁচুদরের ছিলেন। তার পাণ্ডিত্য ও বিশ্লেষণী সামর্থ্যের প্রতিও আমার আস্থা ছিল যথেষ্ট। আমি তার পারলৌকিক কল্যাণের জন্য কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছি।

লেখক: সাবেক প্রেস সচিব, বিএনপি চেয়ারপারসন

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগে আসছে নতুন পরিকল্পনা
পৃথিবীর সর্বোচ্চ দামে পৌঁছাল বিটকয়েন, মূল্য ছাড়ালো ১ লাখ ২০ হাজার ডলার
বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান লায়ন বাশার গ্রেপ্তার
২০ জুলাই থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভিযান: বিআরটিএ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা