রানা প্লাজার রানা কোন কারাগারে থাকেন, জেনে নিন তার আচরণ...

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৫৫
অ- অ+

আজ থেকে ঠিক আট বছর আগে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজারের বেশি শ্রমিক নিহতের ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল সারা বিশ্বে। আলোচিত এই ভবনটির মালিক সোহেল রানা ঘটনার পরপর গ্রেপ্তার হন। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যাসহ বেশ কিছু মামলা। এসব মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে সোহেল রানাই আছেন কারাগারে। বাকিরা জামিনে কিংবা পলাতক রয়েছেন। সোহেল রানার বাবাসহ মারা গেছেন দুজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুর পার্ট-২ কারাগারে আছেন সোহেল রানা। সাধারণ বন্দীদের মতোই তিনি সেলে থাকেন। প্রায় আট বছর ধরে কারাগারে থাকার কারণে কারাজীবনের সঙ্গে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ভাবলেশহীন অবস্থায় দিন কাটান। ইতিহাসে স্থান করে নেয়া ভয়ংকর ট্রাজেডির জন্য দায়ী হিসেবে তেমন কোনো অনুশোচনাবোধও তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

কারাগারের একটি সূত্র জানায়, সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে একটি সেলে থাকেন এক সময় বিলাসবহুল জীবনযাপনকারী এই সোহেল রানা। তিনি সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে যান। অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গে গল্পগুজব করে সময় কাটান। কারাগার থেকে দেয়া সাধারণ খাবারই খান। আগে পরিবারের সদস্যরা নিয়ম করে তাকে দেখতে গেলেও গত এক বছর ধরে করোনার প্রকোপের কারণে খুব একটা যান না। এছাড়া গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেক। বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে না পারার আক্ষেপ আছে রানা প্লাজার মালিকের মধ্যে।

কাশিমপুর পার্ট-২ কারাগারের জেলার মো. আবু সায়েম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সোহেল রানা একজন সাধারণ বন্দী। অন্য আর দশজনের মতোই কারাগারে আছেন। কারাগারে দেয়া খাবার খান। তবে প্রিজন ক্যান্টিন থেকেও চাইলে খাবার কিনে খেতে পারেন। কারাবিধি মোতাবেক তিনি সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।’

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে নয় তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজা ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে নবম তলা পর্যন্ত ছিল পাঁচটি পোশাক কারখানা। এতে প্রায় চার হাজার পোশাক শ্রমিক কাজ করতেন। ভবন ধসের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে চাপা পড়েন চার হাজার পোশাক শ্রমিক। তাদের কান্না আর আহাজারিতে শোকের মাতম নেমে আসে পুরো সাভারে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, যাদের বেশির ভাগই পঙ্গুত্ব বরণ করে। ভয়াবহতম এই ট্রাজেডিতে এক হাজার ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়।

ঘটনার পরপর ভবনটির মালিক সোহেল রানা পালিয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করেন। ঘটনার চার দিন পর যশোরের বেনাপোল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে রানা কারাগারেই আছেন। মাঝে ২০১৭ সালে একটি দুর্নীতি মামলায় তার তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

রানা প্লাজার ঘটনায় করা হত্যা মামলার বিচার এখনো থমকে আছে। মামলার চার্জশিটভুক্ত দুই আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ রয়েছে।

কবে নাগাদ মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানাতে পারেননি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মিজানুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজা ধসের ঘটনার হত্যা মামলায় দুজন আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল থাকার কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ রয়েছে।

জানা যায়, দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই হত্যার অভিযোগে সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

ঢাকা জেলার পিপির দপ্তর সূত্র বলছে, বিচারিক আদালতের অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আট আসামি হাইকোর্টে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে এই আটজনের পক্ষে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আসে। ইতিমধ্যে ছয় আসামির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কেবল সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র রেফায়েত উল্লাহ এবং তৎকালীন কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানের পক্ষে স্থগিতাদেশ বহাল আছে।

রানা প্লাজা ধসের জন্য ছয়জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি না পাওয়ার কারণে তিন বছর ঝুলে ছিল এই মামলা। সে সময় জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল, যারা বড় অপরাধ করেননি, তাদের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি দিতে পারবে না তারা। শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

আদালত সূত্র বলছে, রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন একজন। তিনি হলেন আলোচিত ভবনটির মালিক সোহেল রানা। জামিনে আছেন ৩২ আসামি। পলাতক ছয়জন। সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেকসহ মারা গেছেন দুই আসামি।

(ঢাকাটাইমস/২৩এপ্রিল/এএ/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
হামদর্দ বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভা অনুষ্ঠিত
পাবনা-ঢাকা সরাসরি এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর দাবিতে মানববন্ধন
নড়াইলে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু
মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী খুন: ডিবির অভিযানে আরও দুইজন গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা