'আইলারে নয়া দামান' গান নিয়ে...

'আইলারে নয়া দামান' গানটির মূল ভার্সনের গীতিকার শ্রীমতি দিব্যময়ী দাশ। তিনি একুশে পদক প্রাপ্ত দুই সন্তান পণ্ডিত রামকানাই দাশ ও সুষমা দাশের মাতা। এই সংস্কৃতিবান পরিবারে গানের চর্চাই ছিল। দিব্যময়ীর কাছ থেকে ইয়ারুন নেসা গানটি নিয়ে সিলেট বেতারে গেয়েছিলেন ১৯৭২-৭৩ সালে। এ তথ্য জানিয়েছেন দিব্যময়ীর নাতনি (পণ্ডিত রামকানাই দাশের কন্যা) - কাবেরি দাশ।
তিনি লিখেছেন -
"দিব্যময়ীর গানের কথা নিচে দেয়া হলো:
আইলো রে নোয়া জামাই আসমানেরো তারা
বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেরা
জামাই বও জামাই বও
আইলো রে জামাইয়ের ভাই-বৌ দেখতে বটের গাইল
উঠতে বইতে ছ'মাস লাগে করইন আইন চাইন
জামাই বও জামাই বও।
আইলোরে জামাইয়ের বইন হিজলেরো মোড়া
টুকনি দিলে ফেদা পরে ষাইট সত্ত
ইর উরা
জামাই বও জামাই বও।
আইলোরে জামাইয়ের ভাই আসমানেরো চান
যাইবার লাগি কইন যদি কাইট্টা রাখমু কান
জামাই বও জামাই বও
কুঞ্জেরো ভিতরে জামাই বইছে গো সাজিয়া
পাড়ার লোকে দেখতে আইছে দিব্যময়ীর বিয়া
জামাই বও জামাই বও।
১৯৭২-৭৩ সালে আমরা টিলাগড়ে প্রধান শিক্ষক প্রয়াত শ্রী চন্দ্রপালের বাড়ীতে থাকতাম। তখন ইয়ারুন্নেসা খানম আমাদের বাড়িতে আসতেন। তিনি তখন বোরখা পরতেন। একদিন তিনি আমার ঠাকুরমার (দিব্যময়ী দাশ)-এর কাছ থেকে দুটি গান শিখে নিয়েছিলেন, তার একটি হলো- ‘আইলোরে নয়া জামাই’ , অন্যটি হলো ‘তোরা শুনগো নীরব হইয়া দেখগো বাহির হইয়া কি সুন্দর বাঁশিটি যায় বাজাইয়া’।
বলা বাহুল্য তখন তিনি গানটি সিলেট বেতারে গাইবার সময় তাঁকে বাধ্যতামুলক কিছু শব্দ পরিবর্তন করতে হয়। যেমন - 'রাধা' শব্দ ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি আর ভনিতাতে যেখানে গীতিকারের নাম ছিলো তা গাইতে দেয়া হয়নি।
ইয়ারুন্নেসা খানম গানটি রেকর্ড করার পর আমার বাবা (রামকানাই দাশ)কে জানিয়েছিলেন শব্দ পরিবর্তনের বিষয়টি।
তিনি গানটি সিলেট বেতারে গাইবার পর খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।
আর ‘আইলোরে নোয়া জামাই’ গানের বেশ কিছু শব্দ ভালো করে লক্ষ করলে বুঝা যাবে যে এই শব্দগুলো আমাদের এলাকার।
যেমন, 'ফেদা' অর্থ ময়লা, 'উরা' মানে বাশের বেত দিয়ে বানানো এক প্রকার টুকরি, 'বটের গাইল' হল বট গাছের গুড়ি দিয়ে বানানো যার মাঝে মহিলারা ধান কুটত।"
লেখক: স্থপতি, নাট্যকার, তথ্যচিত্র নির্মাতা ও চিত্রগ্রাহক
ঢাকাটাইমস/৬মে/এসকেএস

মন্তব্য করুন