পাবনা-সিরাজগঞ্জে আগাম বন্যার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা
 | প্রকাশিত : ২৬ মে ২০২১, ২১:১১

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে উপকূলের মানুষ যখন ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে খুব বেশি ভয় না পেলেও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী আগাম বন্যার আশঙ্কায় পাবনা ও সিরাজগঞ্জের মানুষ। গত বছরের আম্পানের অভিজ্ঞতায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এ বছর আগেভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ।

পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগাম বন্যার আশঙ্কায় অনেকেই ক্ষেতের আধা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন, বাড়ি ঘর সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, অনেকে আবার তাদের ভাঙা নৌকাটিকে মেরামত করে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে এখনই বন্যার আশঙ্কা নেই। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে যমুনার পানি বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ১৪ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে যমুনায়। তবে এ সময় যমুনায় পানি বৃদ্ধি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, যমুনার পানি হার্ড পয়েন্টে আট মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপৎসীমার অনেক নিচে। এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদীতে পানি অনেক কম।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, এ বছর আগাম বন্যা হওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও সাইক্লোন পরবর্তী প্রবল বর্ষণ অব্যাহত থাকলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে পারে। তবে তা স্থায়ী নাও হতে পারে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অভয় দিলেও নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে বসে থাকতে পারছেন না পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষ। গত বছর আম্পান পরবর্তী আকস্মিক আগাম বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে এ বছর আগেই বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রাউতারা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ কৃষক তাদের ক্ষেতের কাঁচা-পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন। দ্রুত ধান কাটার জন্য দুর্গম এ গ্রামে কম্বাইন্ড হারভেস্ট মেশিনের ব্যবহার করছেন তারা।

কৃষক পরেশ সুত্রধর বলেন, শ্রমিকের জন্য বসে না থেকে গ্রামের সব কৃষক মিলে এখানে মেশিন দিয়েই ধান কাটছে। গত বছর আম্পানের পর আমরা ঘরে ধান তুলতে পারিনি। আকস্মিক বন্যায় ভেসে যায় পুরো ধান খেত।

‘এ বছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর আবারও আগাম বন্যা হলে বিশাল এ মাঠের অধিকাংশ ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হবে না। ফলে কৃষকরা সবাই মিলেই মেশিন দিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছি’, বলেন পরেশ।

এদিকে যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে রাউতারা গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বড়ালের শাখা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি এভাবে অব্যাহত থাকলে সাইক্লোন পরবর্তী আবারও আগাম বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন গ্রামবাসী।

রাউতারা গ্রামের জেলে পরিবারের গৃহবধূ শান্তি বেগম বলেন, তার দুই ছেলে মাছ ধরার জন্য কয়েক বছর আগে একটি বড় নৌকা কেনে। তবে গত দুই বছর তেমন কাজ না থাকায় নৌকাটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। নৌকাটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ায় দ্রুত এটি মেরামতের জন্য মিস্ত্রিকে কাজে লাগানো হয়েছে। নতুন নৌকা কেনার সামর্থ্য না থাকায় আসন্ন দুর্যোগের আশঙ্কায় ভাঙা নৌকাটিই মেরামত করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই মনে করছেন, সাইক্লোন পরবর্তী অবিরাম বর্ষণ হলে এবং নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দ্রুত পানি ঢুকে নিচু এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন আশঙ্কায় অনেকেই আগে থেকেই ঘর বাড়ি সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নিয়েছেন।

পাবনার সাথিয়া উপজেলার নাগডেমরা গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, পানি যখন বৃদ্ধি পায় তখন সবকিছু দ্রুত সরিয়ে নেয়ার সময় পাওয়া যায় না। ফলে এবার আগে থেকেই অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :