মুজিববর্ষের ঘরের দুর্নীতিতে আমতলীর ইউএনও ওএসডি

বরগুনা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ জুলাই ২০২১, ২২:২৩

মজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হতদরিদ্রদের বরাদ্দকৃত ঘরে অনিয়ম, টাকার বিনিময়ে ধনাঢ্যদের ঘর দেয়া ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ায় আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামানকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের উপসচিব আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে ওএসডি করা হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আসাদুজ্জামান গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আমতলীতে ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই টাকা কামানোর জন্য ইউএনও অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন। ইউএনওর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন ওই কার্যালয়ের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. এনামুল হক বাদশা। তার মাধ্যমে ত্রাণের ঘরসহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে হাতিয়ে নেন অসংখ্য টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় তিনি একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যান। তার দুর্নীতি থেকে রেহাই পায়নি মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আশ্রায়ণ প্রকল্প-২ এ অধীনে দ্বিতীয় ধাপে আমতলীর হতদরিদ্রদের ৩৫০টি ঘর। ওই প্রকল্পের ঘর প্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ঘর প্রতি বরাদ্দে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা থাকলেও তিনি তার প্রতিনিধির মাধ্যমে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন।

এছাড়া তার কার্যালয়ের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. এনামুল হক বাদশার নিজ গ্রাম হরিদ্রবাড়িয়ায়ার টাকার বিনিময়ে ধনাট্য ব্যাক্তিদের ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেন তিনি (ইউএনও)। আসাদুজ্জামান ঘর নির্মাণে সুজন মুসুল্লী ও হাবিব গাজী নামে দুজনকে প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেন। তারা ঘর প্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা আদায় করে এনামুলের মাধ্যমে ইউএনওর হাতে পৌঁছে দেন।

যারা টাকা দেন তাদের বাড়িতেই পৌঁছে যায় ঘর নির্মাণের নিম্নমানের সামগ্রী। ইউএনও ঘর বরাদ্দের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে গত ২৫ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমানের নজরে এলে তাৎক্ষণিক তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই তদন্ত কমিটির ঘরের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও টাকার বিনিময়ে ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের ঘর দেয়ার সত্যতা পায়।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান ওই প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়। সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল ফাতেহ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে আমতলীর ইউএনও মো. আসাদুজ্জামানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-ওএসডি করা হয়।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে। একই অভিযোগে গত ৫ মে তার কার্যালয়ের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ এনামুল হক বাদশাকে সাময়ীক বরখাস্ত করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান। সোমবার রাতে ইউএনও আসাদুজ্জামানকে ওএসডির খবর আমতলীতে পৌছলে সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০ জুন সারাদেশে হতদরিদ্রদের দেয়া ঘরের উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ঘর উদ্বোধন করলেও আমতলীর ঘরের নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।

এদিকে চলতি বছরের ফেব্রয়ারির দিকে তালতলী ইউএনও থাকাকালীন ত্রাণের ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়নের অভিযোগ রয়েছে। ঘর হস্তান্তরের আগেই বেহালা গ্রামের বিধবা উর্মিলা রানীর ঘর ভেঙে পড়ে। এ নিয়ে দেশব্যাপী শোরগোল পড়ে যায়।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমতলীর ইউএনও মো. আসাদুজ্জামানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওএসডি) করার আদেশের কপি পেয়েছি। আদেশ মোতাবেক তাকে ইতিমধ্যে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৬জুলাই/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :