‘একবার মাইয়াডারে তোমরা দেখতে দেও বাবা’

জাহাঙ্গীর মাহমুদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
| আপডেট : ১১ জুলাই ২০২১, ২১:৩৬ | প্রকাশিত : ১১ জুলাই ২০২১, ২১:০৬

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত মোট ৫২ জন নিহত হয়েছেন। লাশের অপেক্ষায় স্বজনদের কান্না যেন থামছেই না। রবিবার দুপুরের কারখানার সামনে নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা আহাজারি করতে দেখা গেছে। সকলেই তাদের স্বজনদের লাশ দ্রুত ফিরে পেতে চায়। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত সেলিনা আক্তারের (১৩) বাবা সেলিম মিয়া। বারবার দৌঁড়ে চলে যায় ওই ভবনটির সামনে। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন, ‘একবার মাইয়াডারে তোমরা দেখতে দেও বাবা। আমার মাইয়ারে কেন কাজে পাঠাইলাম।’

এমনি করে স্বজনদের কান্নায় কারখানার চারপাশ ভারী হয়ে গেছে। স্বজনরা সকলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডিএনএর নমুনা দিয়ে আসছেন। তবে তিন সপ্তাহ পরে লাশ শনাক্ত হবে বলে জানায় ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ।

পাগল হয়ে কারখানার সামনে ঘুরছিলেন কম্পা রানী বর্মণের মা সুমা রানী বর্মণ ও তার পরিবারের লোকজন। তাদের সঙ্গে সন্ধ্যায় শেষ কথা হয়েছিল কম্পা রানীর। তখন কম্পা রানী বলছিলেন, ‘মাগো আমারে বাচাঁও’। আমি শ্বাস লইতে পারতাছি না। আমি বুঝি তোমাগো দেখতে পারমু না।’

কারখানার বাইরে কাদঁছিলেন নিখোঁজ তুলি আক্তারের মা ও বাবা আব্দুল মান্নান।

এদিকে গত রবিবার সকালে গিয়ে দেখা গেছে, অগ্নিকাণ্ডে ভবনটির বেশকিছু অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। ভবনের পলেস্তরা ও বেশকিছু অংশ ধসে পড়েছে। ফাটল দেখা দেওয়ার কারণে ভবনটিকে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেয়। ভবনটির আশপাশে থাকা বসবাসকারী সাধারণ মানুষও যেকোনো সময় এটি ভেঙে পড়তে পারে বলে আতঙ্কে রয়েছে। এ বিষয়ে ভবনটির পাশে বসবাসকারী টিটু মিয়া বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভেঙে ফেলার অনুরোধ জানাচ্ছি।

গত বৃহস্পতিবার বিকালে রূগপঞ্জের কর্নগোপ এলাকার হাসেম ফুড কারখানায় আগুন লাগলেও ভবনের চতুর্থতলাটি তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকায় ওখানকার কোনো শ্রমিকই বের হতে পারেনি। ওইতলা থেকে ৪৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩০ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এ ঘটনায় তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ আগুনের ঘটনায় ভুলতা ফাড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নাজিম উদ্দিন মজুমদার বাদী হয়ে হাসেম ফুডের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ আটজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। পরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া বিল্ডিং কোড না মেনে অব্যবস্থাপনায় এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ও গণস্বাস্থ্যের ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ ও গন সংহতির পরিষদের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/পিএল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :