ঘুরে দাঁড়ানো এবি ব্যাংকের ১৩ সূচকে সাফল্য

রহমান আজিজ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০২১, ২২:৩৬

অর্থ পাচার, ঋণ অনিয়ম, পর্ষদে অস্থিরতাসহ নানা কারণে কয়েক বছর আগে প্রায় সব সূচকে নিন্মমুখী থাকা প্রথম প্রজন্মের পরিচিত আরব বাংলাদেশ বা এবি ব্যাংক ভালোই উন্নতি করতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে ধকল কাটিয়ে উঠা ব্যাংকটির আর্থিক উন্নতির কারণে সব সূচকেও অগ্রগতি এসেছে।

আমানত, ঋণ ও অগ্রীম, মোট সম্পদ, সিআরএআর, এডি রেশিও, খেলাপি ঋণ, মোট মূলধন, পরিশোধিত মূলধন, মোট সম্পদ, নীট সম্পদ মূল্য, পরিচালনা মুনাফা, ইপিএস এবং লভ্যাংশ ঘোষণা ইত্যাদি সূচকে গত কয়েক বছরের তুলনায় ব্যাংকটি উন্নতি এখন ভালোর দিকে।

২০১৭ থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকাশিত এবি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আমানত বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণ বিতরণে সক্ষমতার পাশাপাশি ব্যাংকটির আয়ও বেড়েছে।

২০১৭ সালে এবি ব্যাংকের আমানত ছিল ২৩ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে ২৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে বেড়ে ২৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা এবং ২০২০ সাল শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৭২ কোটি টাকা।

২০১৬ সালে অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে। চার বিদেশি কোম্পানির নামে চার কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৩৪০ কোটি) ঋণ দেওয়া হলেও যে উদ্দেশ্যে এসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তার কোনোটাই ব্যবহৃত হয়নি।

ঋণের অর্থ অন্য হিসাবে পাচার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। তারপর থেকেই মূলত ব্যাংকটির আয় কমতে শুরু করে। অর্থ পাচার, ঋণ অনিয়ম, পর্ষদে অস্থিরতাসহ নানা কারণে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এবি ব্যাংকের প্রায় সব সূচক নিম্নমুখী ছিল। বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণে হাবুডুবু খাচ্ছিল ব্যাংকটি।

এমন খারাপ অবস্থা নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুঁজতে একাধিকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবি ব্যাংক পর্ষদ। কিন্তু ‘দুর্বল’ ব্যাংকটির কেউ দায়িত্ব নিতে চাননি। অবশেষে ২০১৯ সালের জুলাইতে দেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব নেন তারিক আফজাল। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এবি ব্যাংক। সব সূচকে আসতে শুরু করে অগ্রগতি।

প্রতিবেদনে ব্যাংকটির ঋণ ও অগ্রিম সূচকটির ধারাবাহিক অগ্রগতি দেখা গেছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির ঋণ ও অগ্রীম ছিল ২২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে বেড়ে ২৪ হাজার ১০৭, ২০১৯ সালে ২৫ হাজার ৬৫১ কোটি এবং ২০২০ সালে তা বেড়ে ২৭ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ব্যাংকটির মোট সম্পদও বেড়েছে। ২০১৮ সালে ৩২ হাজার ২৫২ কোটি, ২০১৯ সালে ৩৬ হাজার ৫৫৬ কোটি এবং ২০২০ সালে এবি ব্যাংকের মোট সম্পত্তি দাঁড়ায় ৩৮ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে আরও দেখা গেছে, ব্যাংকটির পরিচালনা মুনাফা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির পরিচালনা মুনাফা ছিল ৪৪৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা কমে ৩০৭ কোটি টাকা দাঁড়ায়, ২০১৯ সালে তা বেড়ে ৬৪৫ কোটি এবং ২০২০ সালে করোনা সংকটকালীন সময়ে তা বেড়ে ৬৪৭ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। এছাড়া চলতি ২০২১ সালের জুন শেষে অর্থাৎ ছয় মাসে পরিচালনা মুনাফা হয়েছে ১৭৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। যা ২০২০ সালের আলোচ্য সময়ে ছিল ১৫৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

ব্যাংকের অন্য সূচকের অগ্রগতির পাশাপাশি থেমে নেই খেলাপি ঋণের সূচকটি। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণও কমেছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে বেড়ে ৭ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা দাঁড়ায়। এরপর ২০১৯ সালে কমে ৪ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে কমে ৪ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে খেলাপি ঋণ।

ব্যাংকটির মোট মূলধনের পরিমাণও ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকের ৩ হাজার ১২৮ কোটি, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৩০৪, ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি এবং ২০২০ সালে মোট মূলধন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা।

ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ৭৫৮ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে ৭৯৬ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকটির নীট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ২০১৭ সালে ছিল ৩০.০৪, ২০১৮ সালে কমে ২৯.৮৮, ২০১৯ সালে বেড়ে ৩০.১৩, ২০২০ সালে বেড়ে ৩০.৭৬ এবং ২০২১ সালের জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩১.০৭ টাকা।

ব্যাংকটির ইপিএসেও পরিবর্তন দেখা গেছে। ২০১৭ সালে ইপিএস ছিল ০.০৪ শতাংশ, ২০১৮ সালে কমে ০.০২ শতাংশ, ২০১৯ সালে বেড়ে ০.২১ শতাংশ, ২০২০ সালে ০.৪৯ শতাংশ এবং ২০২১ সালের জুন শেষে( ছয় মাসে) ০.৩১ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

এবি ব্যাংক শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কোন লভ্যাংশ দিতে পারেনি। তবে ২০১৯ ও ২০২০ সালে ৫ শতাংশ বোনাস দিচ্ছে। যেহেতু ব্যাংকটির সার্বিক সূচক বেড়েছে তাই ২০২১ সালে ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে বলে প্রত্যাশ্যা বিনিয়োগকারীদের।

(ঢাকাটাইমস/০১আগস্ট/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :