ইনডোর প্লান্টের পরিচর্যা করবেন যেভাবে

চারদিকে আকাশছোঁয়া কংক্রিটের বাড়িঘর এবং প্রচণ্ড দাপদাহে মন চায় একটু সবুজের পরশ। মন ছুটে যেতে চায় সবুজের টানে দূরে কোথাও। কিন্তু সেই সবুজের ছোঁয়া যদি পাওয়া যায় নিজের বাড়িতে অথবা শোয়ার ঘরের ভেতরেই, তাহলে তো আর কথাই নেই। চাইলেই খুব সহজে গাছ দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার বাড়ির অন্দরমহলটি।
কিন্তু যাদের বাগান করার তেমন অভ্যাস নেই, তারা হয়তো অজান্তে গাছের কিছু ক্ষতি করে ফেলছেন। পরিচর্যায় কিছু নিয়ম মেনে চললেই গাছ দিব্যি বেড়ে উঠবে। সেগুলি কী, জেনে নিন।
ইনডোর প্লান্ট দিয়ে ঘর সাজিয়ে থাকেন অনেকে। ঘরে গাছ শুধু রাখলেই চলবে না বরং লক্ষ্য রাখতে হবে, আপনার রুমের জন্য কোন গাছটি বেশি মানানসই এবং উপযুক্ত। এটা নির্ভর করবে জায়গা ও বাড়ির সাজসজ্জার ওপর। ইনডোর প্লান্ট রাখার চিন্তা মাথায় থাকলে ঘরের রং হালকা হওয়াই ভালো। কারণ গাঢ় রং আলো শোষণ করে নেয়।
ঘরের আলোর ওপর নির্ভর করে গাছ নির্বাচন করুন। ঘরের ইন্টেরিয়রে বৈচিত্র্য আনতে আপনি থিম অনুযায়ী গাছ পছন্দ করতে পারেন। হতে পারে সেটা ফুলভিত্তিক, আর্কিটেকচারাল অথবা রংবেরঙের পাতা। বাজারে বিভিন্ন ধরনের পাত্র বা টব পাওয়া যায় গাছ লাগানোর জন্য।সে জন্য ঘরের ফার্নিচারের সঙ্গে মিল করে আপনি আপনার পছন্দসই পাত্র নির্বাচন করুন।
গাছের খাদ্যের জন্য সূর্যের আলোর প্রয়োজন। সরাসরি সূর্যের আলোয় রাখলে অনেক গাছই শুকিয়ে গিয়ে মরে যায়। তাই এমন জায়গায় গাছ রাখতে হবে, যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো রয়েছে, কিন্তু সূর্যের আলো সরাসরি দুই-তিন ঘণ্টার বেশি থাকে না।
কোনও গাছকে শুরু থেকেই যদি কম আলোয় রাখেন, হঠাৎ প্রচণ্ড আলোয় নিয়ে গেলেও তারা মানিয়ে নিতে পারে না। নেতিয়ে পড়ে মরেও যায় অনেক সময়। যদি জায়গা বদল করতেই হয়, একটু একটু করে আলোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। গাছকে সময় দিন ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে।
কোন গাছ কিনছেন, তার উপরও নির্ভর করবে আপনার নতুন বাগান কতটা ভালো থাকবে। যদি গাছের পরিচর্যা করা নিয়ে তেমন অভিজ্ঞতা না থাকে, তা হলে শুরুতে সাক্যুলেন্ট বা মানি প্ল্যান্টের মতো গাছ বেছে নিন। যাতে খুব বেশি যত্ন ছাড়াই তাঁরা বেড়ে ওঠে। একটু অভ্যস্ত হয়ে গেলে আপনি অন্য গাছ রাখুন।
অনেকে গাছের যত্ন নিতে গিয়ে বেশি পানি দিয়ে ফেলেন প্রত্যেক দিন। ফুলের গাছ না হলে বেশির ভাগ গাছের ক্ষেত্রেই রোজ পানি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এক দিন অন্তর পানি দিন। কিছু ক্ষেত্রে সপ্তাহে দুইদিন পানি দিলেও চলে। কোনও গাছ কেনার সময়ে ভাল করে জেনে নিন, কত ঘন ঘন পানি দেওয়া প্রয়োজন। বেশি পানি দিলে খুব তাড়াতা়ড়ি গাছ মরে যাবে।
কোনও গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে, ডগা বাদামি হয়ে গেলে নিয়মিত সেগুলি একটি কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলুন। না হলে সমস্ত পুষ্টি সেই আধ মরা অঙ্গটি বাঁচাতে ব্যবহার করবে গাছ। বাকি গাছের পর্যাপ্ত পুষ্টি হবে না।
বারান্দার গাছেও মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে সার দিতে হয়। জৈব সার মাসে অন্তত ১ বার দিতে পারেন। ব্যবহৃত টি-ব্যাগ থেকে চা পাতা, ডিমের খোসা গুড়া করে গাছের গোঁড়ায় ব্যবহার করতে পারেন। তা জৈব সারের কাজ করে। কেনার চেয়ে বাসায় বানানো সার গাছের জন্য বেশি উপকারী।
আপনার ঘরে জায়গার স্বল্পতা থাকলে গাছ ঝুলানো যেতে পারে। যেহেতু জায়গা আনেক কম সেহেতু অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি আকৃতির টব নির্বাচন করা ভাল। ঝুলানো গাছের ক্ষেত্রে ৮-১০ ইঞ্চি বাশেঁর ঝুড়ি, মাটি বা প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করা ভাল। মাটি ও প্লস্টিক টবের উপরের কোনাগুলো ছিদ্র করে গাছসহ টবটিকে রশির সাহায্যে ঝুলিয়ে দিলেই হয়ে গেল ঝুলন গাছ। শিকা কিনে তাতে করেও ঝুলিয়ে দেয়া যায় টব। গাছগুলো এমনভাবে ঝুলাতে হবে যেনো সহজে পানি দেয়া যায় এবং পরিচর্যা করা যায়।
বাতাসকে বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি হরেক রকমের ইনডোর প্ল্যান্ট ঘরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। যেসব গাছ আলো, রোদ-তাপসহনশীল, ছায়ায় বেঁচে থাকে সেগুলোই হচ্ছে ইনডোর প্ল্যান্টস। ইনডোর প্ল্যান্টসের মধ্যে জনপ্রিয় গাছগুলো হলো—পাতাবাহার, মানিপ্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা, পাম ট্রি, ক্যাকটাস, ড্রেসিনা, স্পাইডার প্ল্যান্টস, মনেস্টেরা, মেরিন্ডা, সিলভার কুইন, অ্যানথুরিয়াম, আইভি লতা, রাবার, বনসাই ইত্যাদি।
এছাড়া ব্যালকনির দেয়াল বা গ্রিল সাজাতে বিভিন্ন অর্কিড ও ক্রিপারজাতীয় গাছের কোনো জুড়ি নেই। বাড়ির মূল প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে বসার ঘর, শোয়ার ঘর, খাবার ঘর এমনকি রান্নাঘর বা স্নানঘর—সবখানেই অনায়াসেই রাখা যাবে এসব গাছ।
ঘর আর বারান্দার এক চিলতে সবুজে মিলবে অক্সিজেন। সব মিলিয়ে বেঁচে থাক সবুজ জীবনের গহীনে, বেঁচে থাক সবুজ চারিদিকে।
(ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/আরজেড/এজেড)

মন্তব্য করুন