শ্রীপুরে পাঁচ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ প্রাণহানি

শিল্পাঞ্চল খ্যাত জনবহুল গাজীপুরের শ্রীপুরে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে বেপরোয়া গতিতে চলছে যানবাহন। ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা করছেন না চালকরা। যান চলাচলে নেই কোনো নিয়ন্ত্রণ। উপজেলায় ঢাকা মহাসড়কের অংশের সঙ্গে রয়েছে ১১টির বেশি আঞ্চলিক সড়কের সংযোগ।
এসব আঞ্চলিক সড়কে পাল্লা দিয়ে চলছে অটোরিকশা, বাস, ট্রাক, ড্রাম ট্রাক, কাভার ভ্যান। বিভিন্ন সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দিনদিন বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। এই প্রতিবেদকের সংগৃহীত হিসাবে দেখা গেছে, গত পাঁচ মাসে পৃথক ১৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছে ২৫ জন। আহত হয়েছে অনেকেই। এর মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অংশে আটটি দুর্ঘটনায় মারা গেছে ১৩ জন। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ১০টি পৃথক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ১২ জন। আহত হয়েছে বহু মানুষ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রীপুরে অবস্থিত ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের অংশ এবং আঞ্চলিক সড়কগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী চলাচল করে। যাত্রী, পণ্য, শিল্পকারখানার মালামাল, জরুরি খাদ্য দ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে যাতায়াত করে অসংখ্য যানবাহন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পাশের ভালুকা উপজেলা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে রয়েছে শত শত শিল্প কারখানা। এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে ১১টির বেশি আঞ্চলিক সড়ক।
মহাসড়কের পাশাপাশি আঞ্চলিক সড়কেও যাতায়াত করে অসংখ্য শ্রমিক। চলাচল করে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ড্রাম ট্রাক ও লেগুনা। দ্রুতগতির যানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে বিপুল সংখ্যক অটোরিকশা। এসব যানবাহনের অধিকাংশেরই নেই কোনো বৈধ কাগজ। তবুও রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কে বেপরোয়ার গতির মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, থ্রি হুইলার, ব্যাটারিচালিত রিকশা, টমটম, নসিমন ও কমগতির যান চলাচল। পথচারীদের অবাধে রাস্তা পারাপার, যেখানে-সেখানে চালকদের যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগিতা, অদক্ষতা, উল্টোপথে যান চলাচলও দুর্ঘটনার কারণ। রাস্তা ঘেঁষে ভাসমান দোকানপাট বসা, যত্রতত্র সড়কের ওপর পার্কিং, স্ট্যান্ড, সড়কের পাশে নির্মাণসামগ্রী, মালামাল রাখা এই দুর্ঘটনার কারণ। এছাড়া চালকদের অধক্ষতা ও পথচারীদের অসচেতনতা সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনার পেছনে দায়ি বলে মনে করা হচ্ছে।
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, রাস্তার যানজট নিরসন এবং মহাসড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নতুন করে কমিউনিটি পুলিশ গঠন করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এছাড়া মহাসড়ক নিরাপদ করতে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দিয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা এবং যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, হাইওয়ে পুলিশ এবং থানা পুলিশকে এ বিষয়ে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট করে অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের বিরুদ্ধে এবং অটোরিকশা উৎপাদন বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/৮নভেম্বর/কেএম)

মন্তব্য করুন