চেতনা লুট হয়ে গেলে আর কী বাকি থাকে?

বাপ্পী রহমান
 | প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:২৫

১. বেশ কয়েক বছর আগের এমন এক বিজয় দিবসের কথা…দু আঙুলের ফাঁকে বেনসন এন্ড হেজেস, তথাপিও আমাদের আলোচনা ফিলিপ মরিসের মৃত্যুবিপণন ফাঁদ। পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক প্রৌঢ়। বাঁশের সঙ্গে বিভিন্ন আকারের পতাকা বেঁধে তিনি শহরের অলিগলি থেকে রাজপথে ফেরি করে বেরান। কেমন বেচা-বিক্রি হচ্ছে জিজ্ঞেস করায় বিপত্তি ঘটে কিংবা চোখ খুলে যায় আমাদের বোধের। অবাক করে ‘নির্লিপ্ত’ উত্তর দেন প্রৌঢ় - ‘পতাকা তো আর বিক্রি করা যায় না! যে যা খুশী হয়ে দেয়, তাই নেই’। আমরা শহুরে এ্যপ্রোচে হয়তো ভাবতে থাকি-এক একটি পতাকা যেন মুক্তির স্বপ্নগাঁথা।

২. ২০১৫ সালের কথা বলছি… পাকিস্তানি বাহীনির বুলেট থামাতে পারেনি অদম্য সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ও ট্রাকচালক মো. ইউসুফ খান কে। কিন্তু তাঁকে থামিয়ে দিয়েছিল ‘পেট্রোল বোমা’ নামক মরণঘাতী যন্ত্রনাদায়ক এক অস্ত্র। ‘গণতান্ত্রিক’ আন্দোলনের ছদ্মাবরনে বেশ কিছুদিন চলেছিল সাধারণ জনগন হত্যা।

৩. এখন অবশ্য প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। প্রায় সব্বাই ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ নিজেকে জাহির করেন। কারন খুব সহজ- আওয়ামী লীগ এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়! অথচ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদাতা এই রাজনৈতিক দলটির চরম ক্রান্তিকালও গেছে। সে সময়ে এই সুবিধাভোগী অংশ গা-ঢাকা দিলেও সরকার গঠনের পর থেকেই আবারও নানাভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছে। হায়! সবাই এখন আওয়ামী লীগ। চলছে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। আমলা থেকে শুরু করে শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী কিংবা প্রকৌশলী- সবাই এখন এই প্রতিযোগিতার প্রতিযোগি। সব কিছুর পর একটিই চাওয়া, যেকোন উপায়ে নিজেদের গায়ে আওয়ামী লীগের ‘তকমা’ লাগানো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নব্য আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠাদের আস্ফালনে দীর্ঘদিনের ত্যাগী এবং প্রকৃত আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকরা এখন কোণঠাসা। একই চিত্র অন্যান্য পেশাজীবীদের ক্ষেত্রেও বিরাজমান।

৪. গণ মানুষের দল আওয়ামীগে ‘হাইব্রিডের’ দৌরাত্ম্য বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। একই সাথে সমাজ ও রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প এবং শ্রেণী শোষণের যাঁতাকল থেকে আশু নিষ্কৃতি প্রয়োজন। ধর্মান্ধতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ, বৈষম্য কিংবা সংখ্যাগুরুর আধিপত্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়। এগুলো বরং মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে।

চেতনা লুট হয়ে গেলে আর কী বাকি থাকে?

বিজয়ের মতো মুক্তি আসুক!

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :