স্বৈরাচার, একনায়ক, প্রচণ্ড ক্ষমতালিপ্সু পুতিন সম্পর্কে জেনে নিন

রকিবুল হাসান রবিন
| আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:২৫ | প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:০১

গোয়েন্দা সংস্থা-কেজিবির প্রধান থেকে টানা দুই যুগ রাশিয়ার শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি ভ্লাদিমির পুতিন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ভঙ্গুর রাশিয়াকে পুনরায় বিশ্বে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অবিরত। এ ক্ষেত্রে অনেকাংশেই সফল তিনি। নিজ দেশে ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি সিরিয়া, ইরান, লিবিয়াসহ বৈশ্বিক অনেক ইস্যুতে রাশিয়ার মোড়লিপনা দেখিয়েছেন তিনি। বদলে দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের অনেক হিসাব নিকাশ। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা ও উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট-ন্যাটোর চোখ রাঙানিকে পাত্তা দেননি। তবে এসব কারণে তাকে স্বৈরশাসক ও আগ্রাসী একনায়কের তকমাও পেতে হয়েছে। বিরোধীদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ ও রুশপন্থিদের রক্ষায় প্রতিবেশি জর্জিয়া ও ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলে নেওয়ায় আগে থেকেই নানান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি রাশিয়া। সর্বশেষ ইউক্রেনে আক্রমণ পুতিনের সম্প্রসারণবাদ নীতিরই প্রতিচ্ছবি হিসেবেই দেখছেন বিরোধীরা। এ নিয়ে রাশিয়ার বিক্ষোভ করায় অনন্ত দেড় হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবশ্য ইউক্রেন আক্রমণে পুতিন রাশিয়ার নিরাপত্তা ইস্যুকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। তারপরও সর্বোপরি রাশিয়ার বিরোধী দল ও পশ্চিমারা পুতিনকে স্বৈরাচার, একনায়ক, প্রচণ্ড ক্ষমতালিপ্সু হিসেবেই দেখে।

যেভাবে স্বৈরাচার ও ক্ষমতালিপ্সু হয়ে ওঠেন পুতিন

১৯৫২ সালের ৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন পুতিন। শৈশবে দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে বড় হয়েছেন। তার বাবা একটি কারখানায় কাজ করতেন এবং তার দাদা ছিলেন একজন বাবুর্চি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্ব রাজনীতি বদলে যায়। সদ্য জন্ম নেওয়া রাশিয়া ফেডারেশনের হাল ধরেন বরিস ইয়েলৎসিন। সেসময় তিনি পুতিনকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সার্ভিসের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৯৯ সালে বরিস ইয়েলৎসিন সরে যাওয়ার পর রাশিয়ার হাল ধরেন ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর থেকে রাশিয়ার গৌরব ফিরিয়ে আনতে পুতিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বেছে নেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলেও নিরাপত্তা সংস্থা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শক্তি অক্ষুণ্ন ছিল। পুতিন ক্ষমতায় আসার পর নিজ অনুগতদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বসান। তারা অদ্যবধি পুতিনকে তার স্বৈরতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন।

পুতিন সর্বদা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বললেও ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক ধারা যুক্ত করেছেন।

পুতিন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাশিয়ার নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিবার সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল অনুষ্ঠিত হলেও উল্টো পুলিশ দমন-নিপীড়ন করে মিছিল সমাবেশ বন্ধ করে।পুতিনের কট্টোর সমালোচক বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ রয়েছে পুতিনের বিরুদ্ধে। একটি তদন্তেও ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) এজেন্টরা জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল নাভালনিকে ‘ভ্লাদিমির পুতিন সবচেয়ে বেশি ভয় পায়’ বলে বর্ণনা করেছে।

রুশ সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকলেও বিভিন্ন আইন, আমলাতান্ত্রিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। পুতিনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পর্কে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

সমালোচকদের মতে, রাশিয়ায় ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে পুতিন। ২০২১ সালে রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারস এর প্রেস ফ্রিডম এর সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান ১৫০তম। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে গণমাধ্যমের ওপর বিধি-নিষেধ আরও কঠোর করেছে রুশ সরকার।

সামাজিক মাধ্যমসহ ইন্টারনেটের উপরও কড়া বিধি-নিষেধ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, রুশ কর্তৃপক্ষ সামাজিক মাধ্যম কোম্পানির উপর চাপ বৃদ্ধি করছে। বিশেষভাবে সরকার বিরোধী খবর ওয়েবসাইট থেকে বাদ দিতে চাপ দিচ্ছে।

২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে একটি আইন পাস করে। সরকার ঘোষিত অবৈধ কনটেন্ট বন্ধে ব্যর্থ হলে ওই কোম্পানিকে বার্ষিক আয়ের দশ ভাগ জরিমানা দিতে হবে।

অবৈধ কন্টেটের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে-তরুণদের সরকার-বিরোধী সমাবেশে যোগদানের আহ্বান, আন্দোলনকারীদের প্ররোচণা এবং ওই সব বিক্ষোভ দমনে পুলিশি হামলার অপপ্রচার করা।

পুতিনের শাসনামলে সামাজিক দমন-পীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে বহু নাগরিক দেশ ছেড়ে চলে গেছে। ২০১৩ সালে এক লাখ ৮৬ হাজার বেশি রুশ নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

তবে, পুতিন একজন দক্ষ প্রশাসক। তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন যুদ্ধে রাশিয়ার বিজয়ের মাধ্যমে। চেচনিয়া, জর্জিয়া যুদ্ধে জয় তার প্রমাণ। সর্বশেষ তার প্রমাণ ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন তাঁর রাজনৈতিক জীবনে কখনো কোনো পরিস্থিতিতে মাথা নত করেননি। এ ক্ষেত্রে করবেন না বলেই সবার বিশ্বাস।

তবে পুতিন একজন কাজ পাগল মানুষ। যার সত্যতা পাওয়া যায় তার সাবেক স্ত্রীর মন্তব্যে। ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবন বিচ্ছেদের পর তার স্ত্রীর অভিযোগ ছিল, পুতিন শুধুই কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫ফেব্রুয়ারি/আরআর/ইএস )

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে বিস্ফোরক আতঙ্ক, সন্দেহভাজন আটক

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ শেষ 

ইরানে হামলায় অংশ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র: ব্লিঙ্কেন

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এখনই প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা নেই: ইরানি কর্মকর্তা

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনায় বিশ্ববাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম

ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্য পদ দেওয়ার প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো

ইরানে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কবার্তা দিয়েছিলো ইসরায়েল: মার্কিন কর্মকর্তা

পাকিস্তানের জাপানি নাগরিকদের গাড়ি লক্ষ্য করে আত্মঘাতি বোমা হামলা, হতাহত ৫

ইরানে প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু

৩টি ইসরায়েলি ড্রোন ধ্বংস করল ইরান

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :