রোগ প্রতিরোধে ভেষজ ঢেঁড়সের ঔষধি গুণ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ মে ২০২২, ১০:৪০ | প্রকাশিত : ৩০ মে ২০২২, ১০:৩৫

বাঙালিদের মধ্যে ঢেঁড়স ভাজি খুব জনপ্রিয়। ঢেঁড়স সবজি খাদ্য রসিক মানুষের পাত আলোকিত করে ৷ ভাজি, ঝোল ও অম্বল সব ধরনের রান্নাতেই ঢেড়সের বিশেষ গুণ রয়েছে ৷ যেসব সবজি সবচেয়ে বেশি খরা ও তাপ সহ্য করতে পারে, তাদের মধ্যে ঢেঁড়স অন্যতম। শুকনো শক্ত মাটিতেও এটা টিকে থাকে। ঢেঁড়সের ফলের ভেতরে পিচ্ছিল পদার্থ থাকে, ফলে রান্না করার পরে পিচ্ছিল তরল বেরিয়ে আসে। এটা এড়ানোর জন্য ঢেঁড়সকে ভাজা হয়।

ঢেঁড়স গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। ঢেঁড়সের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাবেলমোছাস এসসিউলেনটাস। ফুল হয় ৪-৮ সেমি চওড়া। প্রতিটি ফুলে ৫টি পাপড়ি থাকে এবং পাপড়ির রং সাদাটে হলুদ। প্রতিটি পাপড়ির কেন্দ্রে লাল বা গোলাপি বিন্দু থাকে। ঢেঁড়স ফল প্রায় ১৮ সেমি দীর্ঘ, দেখতে ক্যাপসুলের মতো এবং এর ভেতরে অসংখ্য বিচি থাকে।

ঢেঁড়সের আদি নিবাস ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি এলাকায়। ঢেঁড়স ইউরোপে লেডিস ফিঙ্গার নামে পরিচিত। ঢেঁড়সকে ইংরেজিতে ওকরা বলা হয়। ওকরা নামটি পশ্চিম আফ্রিকা থেকে এসেছে। আফ্রিকার বান্টু ভাষায় এটাকে বলা হয় কিঙ্গুম্বো। আরবি ভাষায় এর নাম বামিয়া । দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটিকে ভেন্ডি বা ভিন্ডি বলা হয়।

ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। বেশ কয়েকটি রোগে ঢেঁড়স খুবই উপকারী। ঢেঁড়সে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যানসার রোগ সৃষ্টিকারী কোষগুলোকে ধ্বংস করে এ রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। হাঁপানিতে খুব ভালো কাজ করে ঢেঁড়স। রোগটির হারবাল চিকিৎসায় ঔষুধ হিসেবে ঢেঁড়স ব্যবহার করা হয়।

ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ঠাসা। ঢেঁড়স ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও লোহাসমৃদ্ধ। ঢেঁড়সে প্রতি ১০০ গ্রামে ভক্ষণযোগ্য অংশে আমিষ (১.৮ গ্রাম) ভিটামিন-সি (১৮ মিলিগ্রাম) খনিজ পদার্থ বিশেষ করে ক্যালশিয়াম (৯০ মিলিগ্রাম), লোহা (১ মিলিগ্রাম) ও আয়োডিন রয়েছে। এছাড়াও এতে রয়েছে ক্যারোটিন, ফলিক এসিড, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, অক্সালিক এসিড এবং অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড।

ঢেঁড়স বীজের তেল শ্বাসকষ্ট কমাতে পারে। ব্লাড সুগার কমাতে এর বিকল্প নেই। প্রতি একশ’ গ্রাম ঢেঁড়সে শূন্য দশমিক শূন্য সাত মিলিগ্রাম থায়ামিন, শূন্য দশমিক শূন্য ছয় মিলিগ্রাম নিয়াসিন ও শূন্য দশমিক শূন্য এক মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন রয়েছে। যা ডায়াবেটিস রোগীর স্নায়ুতন্ত্রে পুষ্টি সরবরাহ করে সতেজ রাখে। ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর আঁশ যা কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে। সহজে হজম হয় বলে বিপাকক্রিয়ায় সহায়তা করে। চলুন তাহলে জেনে নিই নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর ঢেঁড়সের উপকারিতা সম্পর্কে-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ঢেঁড়স

ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। যা ডায়াবেটিসকে দূরে রাখে। এই সব্জির গ্লাইসেমিক সূচক কম। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ‘আমেরিকান ডায়াবিটিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর মত অনুযায়ী, হাই ক্যালোরি, লো ফ্যাটের এই সব্জি ডায়াবেটিসদের জন্য খুবই উপকারী। গবেষণা বলছে প্রতিদিন ৬-৮ টা ঢেঁড়স খেলে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে।

ভ্রুণ তৈরিতে কার্যকর

গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ তৈরির জন্য ভালো ঢেঁড়স গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে, মিসক্যারেজ হওয়া প্রতিরোধ করে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এর ফলেট উপাদানটি গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

ঢেঁড়স কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ঢেঁড়সের উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।

রক্তশূন্যতা দূর হয়

নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে সহজেই রক্তশূন্যতা দূর হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এর ফলেট উপাদানটি গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরল কমায়

বাজে কোলেস্টেরল কমায় ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে সলিউবল ফাইবার (আঁশ) পেকটিন, যা রক্তের বাজে কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যাথেরোসক্লোরোসিস প্রতিরোধ করে।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়

ঢেঁড়স রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া আরো প্রয়োজনীয় মিনারেল যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে

ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। অ্যাজমার লক্ষণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে এবং অ্যাজমার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ঢেঁড়স বেশ উপকারী। ঢেঁড়স বীজের তেল শ্বাসকষ্ট কমাতে পারে।

প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণ দূর করে

প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণ দূর ঢেড়স প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণ দুর করতেও সহায়ক। প্রচুর পরিমাণ পানি পান করলেও অনেক সময় প্রস্রাবের পরিমাণ কম হতে পারে। এমনটি হলে বীজ ফেলে দিয়ে ৩/৪টা কাঁচা ঢেড়স আধা সের পরিমাণ পানিতে সেদ্ধ করুন। পানি অর্ধেক পরিমাণ থাকতেই নামিয়ে ছেঁকে নিন। এই পিচ্ছিল পানি খেলে প্রস্রাব সরল হয় এবং পরিমাণেও বেড়ে যায়। কয়েকদিন এই পানি খেলে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণের সমস্যা দূর হয়।

হজমে সহায়ক

ঢেঁড়সে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ আঁশ যা হজমে সাহায্য করে। পেকটিন অন্ত্রের স্ফীতিভাব কমায় এবং অন্ত্র থেকে বর্জ্য সহজে পরিষ্কার করে।

চুলের যত্নে

ঢেঁড়স চুলের কন্ডিশনার হিসেবে বেশ ভালো। এটি খুসকি দূর করে এবং শুষ্ক মাথার ত্বকের জন্য উপকারী।

ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে

ঢেঁড়স ত্বকের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে শরীরের টিস্যু পুনর্গঠনে ও ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।

বিষণ্ণতা দূর করে

ঢেঁড়স বিষণ্ণতা, দুর্বলতা এবং অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে।

চোখের ছানি প্রতিরোধ করে

ঢেঁড়সে আছে বেটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, লিউটিন যা চোখের গ্লুকোমা, চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

গলগণ্ড রোগ দূর করে

আয়োডিনের অভাবে সৃষ্ট গলগণ্ড- রোগ এবং মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ড- দুর্বলতার প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। প্রতিটি ঢেঁড়সে রাইবোফ্লাভিনের পরিমাণ বেগুন, মুলো, টমেটো আর শিমের থেকে বহুগুণ বেশি।

এছাড়া কিডনি ভাল রাখতে প্রতিদিনই ঢেঁড়স খাওয়া উচিৎ। শরীর ভাল রাখতে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই সঙ্গী করে নিন ঢেঁড়সকে আজ থেকেই ৷

(ঢাকাটাইমস/৩০ মে/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :