ফোর্বসের তালিকায় জায়গা করে নেয়া সাত বাংলাদেশি তরুণের স্বপ্ন

মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান
| আপডেট : ১২ জুন ২০২২, ১৯:৪৬ | প্রকাশিত : ১২ জুন ২০২২, ১৮:২৪
ছবি কোলাজ- ঢাকাটাইমস

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাণিজ্যিক ম্যাগাজিন ফোর্বসে এশিয়ার ত্রিশ বছরের কমবয়সী শীর্ষ প্রভাবশালী তালিকায় সাত বাংলাদেশি জায়গা পেয়েছেন। গত ২৬ মে ‘ফোর্বস থার্টি আন্ডার থার্টি এশিয়া ২০২২’ শিরোনামের এই তালিকা প্রকাশ করে। তালিকায় বিশ্বের চার হাজার মনোনয়নের মধ্যে এশিয়ার ২২টি দেশ ও অঞ্চলের মোট ৩০০ তরুণ সামাজিক সংগঠক, উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবক জায়গা পেয়েছেন। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশের সাত তরুণ।

‘ফোর্বস থার্টি আন্ডার থার্টি এশিয়া ২০২২’ শিরোনামের এ তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশি তরুণেরা হলেন— ফুটস্টেপস বাংলাদেশের সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহ রাফায়াত চৌধুরী ও মোহাম্মদ তাকি ইয়াসির, শাটলের সহপ্রতিষ্ঠাতা জাওয়াদ জাহাঙ্গীর ও রিয়াসাত চৌধুরী, এলিস ল্যাবসের শুভ রহমান, শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণ ও জ্বালানি শ্রেণিতে পরিবহন ট্রেকিং ও পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান ‘বন্ডস্টেইন টেকনোলজিস’ এর জাফির শাফি চৌধুরী ও মীর শাহরুখ ইসলাম।

কার ট্র্যাকিং সলিউশন নিয়ে ২০১৪ সালে পাঁচ বন্ধু মিলে স্মার্ট এবং ইন্টেলিজেন্ট এক কোম্পানি গঠনের স্বপ্ন থেকেই ‘বন্ডস্টেইন’ যাত্রা শুরু করে। বন্ডস্টেইনই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার দুটোই বাংলাদেশে তৈরি করে। এছাড়াও যেখানে অন্যরা বাইরে থেকে টেকনোলোজি এনে কাজ করছে সেখানে তারা দেশে ডেভেলপ করা প্রযুক্তি দিয়ে বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান করছে।

তারা শুধু গাড়ি ট্র্যাকিং সলিউশন দিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি বরং মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার কোশ্চেন ফাঁস রোধে কাজ করেছেন। ইউনিলিভার, ওয়ালটন, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছেন এবং ভালো ফিডব্যাক পেয়েছেন।

বিনিয়োগভিত্তিক ব্যবসার পরিবর্তে টেকসই ব্যবসা করার চিন্তা থেকেই শুরুতে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকেননি তারা। তবে গত বছর রানার ট্রেডিং লিমিটেড এর কাছ থেকে এক মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিনিয়োগ পায় ‘বন্ডস্টেইন’। এই বিনোয়োগকে তারা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর এক ধাপ অগ্রগতি হিসেবে মনে করেছেন। তারা ‘নিউ রেসপন্সিবিলিটি, নিউ টার্গেট’ মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী বলে জানিয়েছেন। ‘বন্ডস্টেইন’ পরপর দুইবার ‘ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড’ চ্যাম্পিয়নও হয়।

সামাজিক প্রভাব শ্রেণিতে ফুটস্টেপস বাংলাদেশের সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহ রাফায়াত চৌধুরী ও মোহাম্মদ তাকি ইয়াসির জায়গা করে নিয়েছেন। ফুটস্টেপস সোশ্যাল চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে চলমান পরিস্থিতির উন্নতি করার লক্ষ্যে পরিবেশ সুরক্ষা, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে।

ফুটস্টেপসের সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহ রাফায়াত চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেন। তবে তিনি জানান, প্রথম বিশ্বে থাকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশ বাংলাদেশে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করার জন্য মূলত দেশে ফিরে এসেছেন। আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা তাকি ইয়াসির লন্ডন থেকে পড়াশোনা করে এসেছেন। বাবাকে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে দেখে বড় হয়ে নিজেও কমিউনিটির টেকসই উন্নয়নে কাজ করার দায়বদ্ধতার বিষয়টি উপলব্ধি করেন তাকি ইয়াসির। তারপর থেকেই কাজ শুরু করেন।

২ হাজারের অধিক ভলেন্টিয়ার (যাদেরকে চেঞ্চমেকার অভিহিত করা হয়) এখানে কাজ করে এবং ২৭ টি জেলার তিন লাখের বেশি মানুষকে তারা কর্মসূচির আওতায় এনেছে। তারা এখন পর্যন্ত প্রজেক্ট বৃত্ত, বিশ্ব পরিবেশ দিবস, কিক ফর সিক্সসহ ২৫টির অধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। ইউনিলিভার, রবি, মেঘনা গ্রুপসহ আরো বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ফুটস্টেপসকে ফান্ডিং করছে। ফুটস্টেপস তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড, জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডসহ বেশকিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।

প্রযুক্তি উদ্যোগ শ্রেণিতে অ্যালিস ল্যাবসের প্রতিষ্ঠাতা শুভ রহমান জায়গা করে নিয়েছেন। নতুন ই-কমার্স বিজনেস অটোমেশন এবং সহজে কাস্টমার সাপোর্ট প্রদান করতে সাহায্য করছে আইটি কোম্পানী ‘মাই এলিস’। তারা মূলত কাস্টমার এনগেজমেন্ট এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গ্রাহকের যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। দেশি বিদেশি বেশ বড় বড় ব্র্যান্ডের সঙ্গে তারা সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে।

অ্যাপভিত্তিক নিরাপদ পরিবহনসেবা প্রতিষ্ঠান শাটলের সহপ্রতিষ্ঠাতা জাওয়াদ জাহাঙ্গীর ও রিয়াসাত চৌধুরী রয়েছেন এ তালিকায়। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে যাত্রা শুরু করা শাটলের মার্কেটে আসার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার নারীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত এবং পরিবহন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা। বর্তমানে তারা নারী-পুরুষ দুই সেগমেন্ট এবং কর্পোরেট এমপ্লয়িদের জন্য কাস্টমাইজড যাতায়াত সমাধান প্রদান করছে।

ঢাকার ভেতরে ৫০টির বেশি রুট তাদের সেবা পাচ্ছে। তারা মূলত প্রি-বুকড রাইড সার্ভিস প্রদান করে থাকেন এবং সার্ভিস চার্জের পরিমাণ অন্যান্যদের তুলনায় অনেক কম। ভবিষ্যতে তারা এই সেবা ঢাকার বাহিরেসহ বাংলাদেশের মতো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের যাতায়াত সমাধানের কাজে ব্যবহার করতে চান।

সামনে প্রযুক্তিগত কিছু ইনোভেশন যেমন মোবাইল অ্যাপ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি ফিচার, কাস্টমার অভিজ্ঞতা আরো উন্নত ও সাবলিল করার জন্য নতুন কিছু সেফটি ফিচারসহ বেশ কয়েকটি ইনোভেটিভ পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট এবং এঞ্জেল ইনভেস্টরদের থেকে বেশ কিছু ইনভেস্টমেন্ট পেয়েছে শাটল। দেশি ইনভেস্টরদের পাশাপাশি তারা সিঙ্গাপুরে রেজিস্টার্ড কোম্পানির মাধ্যমে গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্টও পেয়েছে।

বিভিন্ন মাধ্যমে আলাপচারিতায় তথ্য নিয়েছেন মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :