এই বোবাকষ্টের পর সুখবর আসবে তো?

মিজান মালিক
| আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২২, ১৪:৩০ | প্রকাশিত : ০৯ আগস্ট ২০২২, ১১:৫০

এই যে দুর্বিষহ দিন যাচ্ছে মানুষের ওপর দিয়ে তারপর স্বস্তিদায়ক সময় আসবেই। যায় দিন খারাপ। আসে দিন ভালো। এই বিশ্বাসটুকু হারাতে চান না অনেকেই। হয়তো পরিস্থিতি এক সময় সহনীয় হবে এই আশা রাখতে চান।

আশঙ্কা করে অনেকে বলেছেন, দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে বলছেন। জাতীয় পার্টির জিএম কাদের বলেছেন একাধিকবার। মানুষের মাঝে‌ও ভয় কাজ করছে।

ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতেই প্রথমে লোডশেডিং, পরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ বেশকিছু ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।

মানুষের ওপর খড়গ চাপছে অনাকাঙ্ক্ষিত খরচের। মানুষ খুব অসহায় বোধ করছে। এরপর কি, এরপর কি! সরকার পরিচালনার সঙ্গে যুক্তরা জানেন ভেতরের খবর। রিজার্ভের খবর। আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স, মুদ্রাস্ফীতির অন্দর মহলের খবর। ফলে একটা বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে ধারণা। জোয়ার যখন আসে তখন মাঝেমধ্যে বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে হয়। দুঃসময় থেকে যদি মানুষকে রক্ষায় এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে মানুষ না খেয়ে হলেও কয়েক মাস না হয় কষ্ট সহ্য করবে। কিন্তু এরপর তো ভালো খবর শুনতে চাইবে চাপানো কষ্টে থাকা মানুষেরা। নিশ্চয়ই সেটি সংশ্লিষ্টদের মাথায় আছে। থাকাই উচিত।

কতদিন মানুষকে কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হবে তার‌ও একটা ধারণা তাদের দিতে হবে। নিশ্চয়ই সেটি অযৌক্তিক নয়। অনিশ্চয়তা তো বেশিদিন ভালো লাগবে না। মানুষ বলে কথা। রক্ত মাংসের। নেওয়ার‌ও ক্যাপাসিটি থাকতে হয়।

যেসব নেতা এতদিন ফাউল কথা বলতেন নিশ্চয়ই তারা সে ধরনের অগোছালো কিছু বলবেন না। মন্ত্রী ‘মহোদয়গণ’ তাদের দপ্তর নিয়ে খুব ব্যস্ত থেকে দেশের জন্য কাজ করবেন। অযথা খোলা গরম করার মতো কথা বলবেন না। নিজ দপ্তরের অনিয়ম-দুর্নীতি পরিষ্কার করার কাজে মনোনিবেশ করলে তার সুফল মানুষ পাবে।

আজাইরা সত্য-মিথ্যা যারা বলেন, সেটি পরিহার করে তারাও সঠিক তথ্য দিয়ে মানুষকে সহায়তা করবেন। যাতে মানুষ বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা পায়। কারণ বিভ্রান্ত হয়ে গুজব ছড়ায় অনেকে। আর গুজব কোনো দেশের জন্য, সমাজের জন্য নিশ্চয়ই ভালো কিছু না। গুজবের পরিণতি আমরা জানি। ‌অনেকগুলো ঘটনাই নিকট অতীতে ঘটেছে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বিবৃতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মানুষের কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, বিপিসির লোকসান এবং সীমান্ত পথে তেল পাচার হয়—এসব কথা বলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে মর্মে বলেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। তার কথার সূত্র ধরে গণমাধ্যম সীমান্তে খোঁজ নেয়।

বিজিবির কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ঢাকা টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত পথে তেল পাচারের বড়‌ ধরনের কোনো নজির নেই। থাকলে অভিযানে ধরা পড়তো এবং তা গণমাধ্যমে আসতো। তাহলে কী দাঁড়াল? সীমান্ত হয়ে তেল পাচার হয় না। তবে ভবিষ্যতে যেন না হয় সেজন্য সতর্ক থাকবে বিজিবি।

বিশ্ববাজারে যখন জ্বালানি তেলের দাম কমছে তখন আমরা বলছি বিশ্বে বাড়তি দাম। এছাড়া লোকসান কিংবা ভর্তুকির কথা তো বলা হচ্ছেই। ভর্তুকি সমন্বয় করতে করতে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে—এমনটিই সবাইকে জানানো হয়। যার পরিমাণ ৫০ শতাংশ। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির এই চাপ ঘরে-বাইরে।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, বিপিসি গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে ৮ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, চলতি ২০২২ সালের ২২ মে পর্যন্ত বিপিসি মুনাফা করেছে ১২৬৪ কোটি টাকা। তাহলে বিপিসি লোকসানে কোথায়? তার মানে বিপিসি লাভ‌ই করে। এমনকি মোট লাভ থেকে আয়কর পরিশোধ হয়েছে ৫৭০ কোটি টাকা। ব্যাংকে আছে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। এর পরও বিপিসি দাম বৃদ্ধি করে।

কেউ কেউ বলছেন, সরকারকে নানা খাতে ভর্তুকি দিতে হয়। জনগণ সবকিছু জানেও না। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ঝুঁকি এড়াতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মূল্যবৃদ্ধি করে থাকতে পারে।

অসহায় নাগরিকদের ভাষ্য, খুব কায়দা করে মানুষের কাছ থেকেই টাকা যাবে। তবে যে মানুষটি দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, খেয়ে না খেয়ে কষ্টের অর্জিত পকেটের টাকা বাইরে খুঁইয়ে আসছেন তিনি কিন্তু আর কোনো দুর্নীতি দেখতে চান না‌। কোনো বাজার সিন্ডিকেটের কথা শুনতে চান না। তিনি চান, তার ওপর দিয়ে যে ঝড় যাচ্ছে তারপর যেন স্বস্তির খবর আসে।

একটা রাষ্ট্র তো তার নাগরিকদের দায়িত্ব নেবে। হালছাড়া দায়িত্ব রাষ্ট্রের না। সংবিধানের না। মানুষের এই যে অনিশ্চিত দুশ্চিন্তা তা প্রশমিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

সে কারণে বলছি, হয়তো দীর্ঘমেয়াদি দুশ্চিন্তার ভার থেকে মানুষ শিগগিরই রেহাই পাবে‌। বোবাকষ্টের পর তাদের জন্য ভালো কোনো খবর এসে হাজির হবে।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস ও ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :