‘নৃশংস হত্যা’, মামলার পরপরই গ্রেপ্তার হন সাবেক এমপি আউয়াল, অতঃপর...

রুদ্র রাসেল, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ আগস্ট ২০২২, ০৭:৫০| আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২২, ০৭:৫৬
অ- অ+

রাজনৈতিক ক্ষমতা আর নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীর দাপটে কোনো কিছুই কেয়ার করছিলেন না লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল। নিজের ডেভেলপার কোম্পানি ‘হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেড’-এর সাইনবোর্ডের আড়ালে জমি জবরদখল থেকে শুরু করে কী না করেছেন তিনি!

‘কম দামে জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায়’ রাজধানীর পল্লবীতে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী শাহীনুদ্দিনকে তার শিশুসন্তানের সামনে ‘আউয়ালের নির্দেশে’ কুপিয়ে হত্যা করা হয় নৃশংসভাবে। সিসি টিভির ফুটেজের সূত্র ধরে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া দুই খুনিকে শনাক্ত করার পর তদন্তে বেরিয়ে আসে মাস্টারমাইন্ড আউয়ালের নাম। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ১৫ মাস ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন তিনি।

কারাগারে কীভাবে দিন কাটছে সাবেক এমপি আউয়ালের, খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি এখন ডিভিশন সেলে আছেন। একজন খিুনের মামলার আসামি কীভাবে ডিভিশন সেলে আছেন!

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহাবুবুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য হওয়ায় তাকে ডিভিশন সেলে রাখা হয়। তিনি স্বাভাবিক আছেন। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী চলেন তিনি।’

এম এ আউয়ালের সেলের আশপাশে আর কোনো ভিআইপি বন্দি নেই। একজন ব্যাংকার রয়েছেন বলে জানান জেলার মাহাবুবুল ইসলাম।

কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কারাগারে নিজের সেলেই টিভি দেখে, পত্রিকা পড়ে বেশির ভাগ সময় কাটান সাবেক এমপি আউয়াল। তার সেলের সংলগ্ন সেলে একজন বন্দি রয়েছেন। তার সঙ্গে গল্প করেন। এ ছাড়া অন্য বন্দিদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলেন না আউয়াল।

বেশির ভাগ সময়ই কারাগারের কেন্টিন থেকে খাবার কিনে খান তিনি। মাঝে মাঝে পরিবার ও আত্মীয়স্বজন দেখা করতে এলে খাবার নিয়ে আসেন। কারাসূত্র জানায়, প্রথম দিকে প্রায় প্রতিদিনই তার একাধিক ঘনিষ্ঠজন আসতেন কারাগারে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা কমে গেছে। এখন মাঝেমধ্যে আসেন।

কারা সূত্র জানায়, তার ঘনিষ্ঠজনরা এলেই আউয়ালকে বলতে শোনা গেছে, ‘যেভাবে হোক জামিন করাও, জেলে থাকতে আর ভালো লাগছে না। বিষয়টি কী তোমরা বুঝতেছো না? এভাবে কতদিন থাকা যায়!’

আউয়ালের ঘনিষ্ঠ একজন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তার সাথে দেখা করতে গেলেই কারামুক্ত করার রিকোয়েস্ট করেন। জামিন করাতে অনুরোধ জানিয়ে কাঁদেন।’

আউয়াল কারাগারে আসার প্রথম দিকে অনেকটা বিমর্ষ থাকতেন জানিয়ে কারাসূত্র বলেন, `কারো সাথে বেশি কথা বলতেন না। তবে ধীরে ধীরে তিনি স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। কে চোর, কে ডাকাত-ধর্ষক বা খুনি কিংবা ভিআইপি আর সাধারণ, সেই হিসাব-নিকাশ ভেদবিচার ভুলে বন্দিজীবনে এখন অভ্যস্ত তিনি।

প্রথম দিকে স্বজনরা এলে জামিন করাতে না পারায় ধমকাতেন তিনি। আর এখন জামিনের অনুরোধ জানিয়ে কাঁদেন।

আউয়াল কারাগারে ভিআইপি বন্দি হিসেবে কী কী সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন, সে বিষয়ে কারাগারসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারে শ্রেণি (ডিভিশন) সুবিধা পেয়ে থাকেন সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সিআইপি ও সরকারি কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া ডিভিশন সুবিধার জন্য যেকোনো বন্দি নিজের সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আদালত যদি কোনো বন্দিকে ডিভিশন সুবিধার আবেদন মঞ্জুর করে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় তখন সেই বন্দি ডিভিশন সুবিধা পেয়ে থাকেন।

যারা ডিভিশন পেয়ে থাকেন তাদের আলাদা রুম বা সেলে রাখা হয়। সেখানে খাট, ভালো বিছানা, টেবিল-চেয়ার, টেলিভিশন, পত্রিকাসহ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়। তাদের খাবারও সাধারণ বন্দির চেয়ে কিছুটা উন্নত।

ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের জন্য একজন করে সহকারী দেওয়া হয়, যিনি সংশ্লিষ্ট বন্দির প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দেন। এছাড়া কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেওয়া খাবার যাচাই-বাছাই করে তাদের (ভিআইপি বন্দী) দিয়ে থাকে কারা কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ১৬ মে পল্লবীর ৬ নম্বর ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কে ব্যবসায়ী মো. শাহীনুদ্দিনকে তার ৭ বছর বয়সী ছেলের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন ১৭ মে শাহীনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে পল্লবী থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৩-১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা থেকে ২০ মে আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। চার দিনের রিমান্ড শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই থেকে কারাগারের ডিভিশন সেলেই রয়েছেন সাবেক এমপি আউয়াল।

মামলাটি পরে থানা থেকে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। কিন্তু নিহত শানীনুদ্দিনের মা মামলার বাদী আকলিমা ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটি অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

ডিবির দেওয়া অভিযোগপত্রে আউয়ালকে হত্যাকাণ্ডের ‘নাটের গুরু’ উল্লেখ করে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- সুমন বেপারী (৩৩), মোহাম্মদ তাহের (৪৭), মো. গোলাম কিবরিয়া খান (৪৯), মোহাম্মদ মুরাদ (২৩), টিটু শেখ ওরফে টিটু (৩১), মোহাম্মদ রকি তালুকদার (২৫), নূর মোহাম্মদ হাসান (১৯), মোহাম্মদ শরীফ (২০), ইকবাল হোসেন (২৩), মো. তরিকুল ইসলাম ইমন (২৩), তুহিন মিয়া (১৯), মো. হারুনুর রশিদ (১৯), মো. শফিকুল ইসলাম শফিক (২৫) ও ইব্রাহিম সুমন (২১)। এদের মধ্যে শফিক ও ইব্রাহিম পলাতক।

তদন্তকালে সুমন, রকি, মুরাদ, নূর, শরীফ ও ইকবাল বিভিন্ন সময় আদালতে জবানবন্দি দেন। আদালতে সুমন বেপারী তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘এম এ আউয়ালের নির্দেশে শাহীনুদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে তিনি ১২ আততায়ীকে ভাড়া করেছিলেন। একটি প্রকল্পের জমি নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে আউয়ালের সঙ্গে শাহীনুদ্দিনের বিরোধ চলে আসছিল। জমি দখলে নিতে না পেরে শাহীনুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আউয়াল।’

এর আগে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা দুই খুনি মনির ও মানিক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

(ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/ডিএম/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ফিরে দেখা ৪ জুলাই: সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, উত্তাল সব বিশ্ববিদ্যালয়
এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকেও ইভিএম বাদ
আগামী কয়েক দিন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা, পাউবো কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ
নির্বাচন ভবনে রোপণ করা গাছ থেকে সরানো হলো আউয়াল কমিশনের নামফলক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা