বীরত্ব: ক্যামেরার পেছনে থেকেও যিনি নায়ক

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:০১ | প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:০৮

দর্শকের প্রশংসায় ভাসছে ‘বীরত্ব’। এ সিনেমার গল্প মন ভরিয়েছে সবার। নজর কেড়েছে অভিনয়শিল্পীদের অভিনয়। এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একজন চিকিৎসক, এক যৌনকর্মী এবং নারী ও মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত একজন দালালের ‘বীরত্ব’। দেওয়া হয়েছে সামাজ সচেতনতার নানা বার্তা। প্রেম, ভালোবাসা, মারপিটের বাইরে যেটা খুব কমই দেখা যায় বাংলা সিনেমায়।

তবে ক্যামেরার পেছনে থেকে খুব নিঁখুতভাবে সেই জিনিসগুলোই রুপালি পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তরুণ নির্মাতা সাইদুল ইসলাম রানা। ‘বীরত্ব’ তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। নির্মাণের শুরুতেই যে মুন্সিয়ানা তিনি দেখিয়েছেন, তাতে নায়ক-নায়িকা সবাইকে ছাপিয়ে দর্শক এবং চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মুখে মুখে ‘বীরত্ব’র নির্মাতারই গুণগান। সবাই বলছেন, পরিচালক রানাই ‘বীরত্ব’র প্রকৃত বীর।

এই সিনেমায় চিত্রনায়ক ইমন তার ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয়টা করেছেন বলে মন্তব্য একাধিক প্রযোজক ও নির্মাতার। তাদেরই একজন নারী নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। সম্প্রতি বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে তিনি ‘বীরত্ব’ দেখে বলেন, ‘আমি ইমনের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। এর বাইরে ওর অনেক কাজ দেখেছি। তবে ‘বীরত্ব’তে ও ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয়টা করেছে। ওর ড্রেসআপ, গেটআপ, ডায়লগ ডেলিভারি- সবই পারফেক্ট।’

এর পুরো কৃতিত্ব চয়নিকা ‘বীরত্ব’ সিনেমার নির্মাতা সাইদুল ইসলাম রানাকেই দেন। কারণ, একজন শিল্পীর ভেতর থেকে অভিনয় বের আনেন নির্মাতাই। শিল্পীর এক্সপ্রেশন কেমন হবে, তিনি কী পরবেন, কীভাবে সাজবেন, সংলাপ কীভাবে বলবেন, এ সময় তার কণ্ঠের ভাবটা কেমন হবে- এ সব কিছুই নজরে রাখেন সিনেমার পরিচালক। সাইদুল ইসলাম রানা সেটি শতভাগ দক্ষতার সঙ্গে করেছেন বলে মত চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের।

তবে এই নির্মাতা সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছেন তার সিনেমার গল্পের জন্য। কারণ, ‘বীরত্ব’তে তিনি এমন পেশার কয়েকজন মানুষের বীরত্বকে তুলে ধরেছেন, যারা সাধারণত ওই কাজের ধারেকাছেও যান না।

প্রথমত, ‘বীরত্ব’তে চিত্রনায়ক ইমন অভিনয় করেছেন একটি যৌনপল্লী এলাকার সরকারি হাসপাতালের চিকিসকের ভূমিকায়। তার চরিত্রটির নাম রাজু। যিনি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি যৌনকর্মীদেরও চিকিৎসা দেন, আবার তাদের নারী পাচার এবং মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনও করেন। নির্মাতা সাইদুল ইসলাম রানা এখানে একটি বার্তা দিয়েছেন যে, চাইলে একজন চিকিৎসকও তার পেশার বাইরে সমাজের জঞ্জাল সাফ করার কাজে এগিয়ে আসতে পারে।

দ্বিতীয়ত, এ সিনেমায় একজন যৌনকর্মী লুৎফার চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। যে কিনা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তারই এক খদ্দের নারী ও মাদক পাচারের দালাল মাসুমের সঙ্গে। অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়ে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মাসুম যৌনপল্লী থেকে নারী পাচারে সাহায্য করতে বলে লুৎফাকে। কিন্তু লুৎফা তাতে সায় দেয় না। বরং প্রেমিক মাসুমকেই সে পর করে দেয়। গর্ভের সন্তানের কথাও সে চিন্তা করে না।

এখানে নির্মাতা সাইদুল ইসলাম রানা একটি বার্তা দিয়েছেন যে, পতীতাবৃত্তি সমাজের চোখে খারাপ হলেও এ পেশায় নিয়োজিত মানুষেরা খারাপ নয়। সমাজ পরিবর্তনে, নারী পাচার ও মাদক কেনা-বেচার মতো অপরাধমূলক কাজ থেকে সমাজকে রক্ষা করতে তারাও অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকি, জীবনও দিয়ে দিতে পারে।

এর প্রমাণ নির্মাতা রেখেছেন অন্য দুই যৌনকর্মী পারুল ও কুসুমের মাধ্যমে। এই দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন যথাক্রমে চিত্রনায়িকা জেসমিন ও রোমানা স্বর্ণা। নারী পাচারকারী দল টোপ দেয় তাদেরও। বিদেশে পাঠিয়ে দেবে বলে লোভ দেখায়। কিন্তু ডাক্তার রাজুর (ইমন) কথা মেনে অপরাধীদের কথায় সায় দেয় না তারাও। যার ফলে সন্ত্রাসীদের হাতে জীবন দিতে হয় পারুল ও কুসুমকে।

এখানেই শেষ নয়, সন্তানের জন্ম না দিয়েও যে আদর্শ বাবা হওয়া যায় এবং একজন যৌনকর্মীর সন্তানেরও যে এই সমাজে সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার আছে, সেই বার্তাটিও নির্মাতা সাইদুল ইসলাম রানা দিয়েছেন তার ‘বীরত্ব’র মাধ্যমে।

নারী পাচারে সায় না দেওয়ায় যৌনকর্মী লুৎফাকে ত্যাগ করে তার প্রেমিক মাসুম (আহসান হাবীব নাসিম)। লুৎফা স্বীকৃতি পায় না তার গর্ভের সন্তানের। সমাজের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে সে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখায়। কিন্তু নিভে যায় তার জীবনের আলো। এখন কে নেবে এই সন্তানের দায়িত্ব? ত্রাতা হয়ে আসেন ডাক্তার রাজু (ইমন)। নিজের প্রেম বিসর্জন দিয়ে, সমাজের নানা কটূকথা উপেক্ষা করে একজন যৌনকর্মীর সন্তানকে কোলে তুলে নেন তিনি।

এই সন্তানকে লালন পালন করতে গিয়ে সরকারি হাসপাতালের চাকরিও ছাড়তে হয় ডাক্তার রাজুকে। সন্তান নিয়ে চলে যান অন্য এলাকায়। একজন যৌনকর্মীর সন্তানকে লালন পালন করতে থাকেন বাবার আদরে। নির্মাতা সাইদুল ইসলাম রানার সিনেমার এই দিকটি সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে বাধ্য। এখানেও বড় একটি সামাজিক বার্তা দিয়েছেন তিনি।

শুধু তাই নয়, নিষ্ঠুর-নির্দয়, নারী ও মাদক পাচারকারীর দালাল মাসুমের মাধ্যমেও একটি সামাজিক বার্তা দিয়েছেন নির্মাতা সাইদুল ইসলাম রানা। অর্থাৎ, একটা মানুষ যতই খারাপ হোক, তার ভেতরেও যে একটা ভালো মানুষ বাস করে, সেও যে বাবা,সেটাও দেখেছেন দর্শক।

যৌনকর্মী লুৎফার যে সন্তান ডাক্তার রাজু লালন পালন করেন, আদালতে এক মামলায় ডিএনএ পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় এই সন্তানের আসল বাবা মাসুম (আহসান হাবীব নাসিম)। এই মামলার উদ্দেশ্য, ছোট্ট শিশুটিকে দুবাইয়ে পাচার করা। তার কিডনি দিয়ে আরেকজনকে বাঁচানো। বড় অংকের টাকার চুক্তি হয় এ কাজে।

কিন্তু বাবা হিসেবে কেঁদে ওঠে শিশুটির আসল বাবা মাসুমের মন। তার ভেতরের ভালো মানুষটি জেগে ওঠে। সে সবকিছু খুলে বলে ডাক্তার রাজুকে। পালিয়ে যেতে বলে শিশুটিকে নিয়ে। এভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা সামাজিক বার্তা দিয়ে ‘বীরত্ব’কে সাজিয়েছেন নির্মাতা সাইদুল ইসলাম রানা। তাই ক্যামেরার পেছনে থেকেও তিনিই দর্শকের কাছে হয়ে উঠেছেন নায়ক।

সাইদুল ইসলাম রানার বীরত্ব প্রযোজনা করেছে পিং পং এন্টারটেইনমেন্ট। সংলাপ এবং চিত্রনাট্যও লিখেছেন রানা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের ৩৪টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে সিনেমাটি।

এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মামনুন ইমন, নবাগত নিশাত নাওয়ার সালওয়া, নিপুণ আক্তার, ইন্তেখাব দিনার, মুনিরা মিঠু, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, বড়দা মিঠু, জেসমিন আক্তার, শিল্পী সরকার অপু, কচি খন্দকার, আরমান পারভেজ মুরাদ, রওনক হাসান, রোমানা স্বর্ণা, তানভীর রিজভী ও শিশুশিল্পী মুনতাহা এমেলিয়াসহ অনেকে।

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/এএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :