একজন হুইপের ক্ষমা প্রার্থনা এবং মন্ত্রী এমপিদের ছত্রছায়ায় থাকা মূর্খ দুর্নীতিবাজদের দম্ভ
জয়পুরহাট-২ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের একটি লেখা পড়লাম। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তিনি নিজেই পোস্ট করেছেন। তার গাড়ি চালক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। সে জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে একজন মানুষ হিসেবে অভিনন্দিত করছি।
তার পোস্টটি পড়ে আসি:
"আমার অনুপস্থিতিতে গাড়ি রাখা নিয়ে আমার অফিসিয়াল ড্রাইভারের সঙ্গে বাক-বিতন্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচিত হয়েছে। ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম না, ঘটনাটি আমার কোনো রাজনৈতিক সহকর্মী বা সহকারী করেননি। একজন ড্রাইভারের সঙ্গে সংঘটিত হয়েছে। সরকারি এই ড্রাইভার রাজনৈতিক নেতার ডিউটি না করলে সমস্যা হতো না। যেহেতু রাজনৈতিক নেতার ডিউটি করেন, সেহেতু সমালোচনার ঝড় ওঠা স্বাভাবিক।
আমি যুক্ত না থাকলেও আমার নাম ব্যবহৃত হওয়ায় আমি প্রশ্নবিদ্ধ ও অভিযুক্ত হয়েছি। আমি ক্ষমতা প্রদর্শনের অপসংস্কৃতিতে আক্রান্ত নই। বরং বরাবরই জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মচারীরা যে জনগণ নিযুক্ত এবং কোনোভাবেই আমাদের মর্যাদা জনগণের ওপর নয়, সে বিষয়ে আমি সরব ভূমিকা পালন করে আসছি এবং নিজেও প্রতিপালন করি।
সুতরাং আমি আমার অনুপস্থিতিতে আমার ড্রাইভারের ত্রুটির জন্য একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি।"
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের যে উপলব্ধি তা সত্যিকার অর্থে একজন জনপ্রতিনিধির হওয়া উচিত। কারণ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী নয়।
মানুষ হয়ে মানুষকে মানুষ মনে করা আমরা যখন ভুলে যেতে বসেছি, তখন তাঁর এই অনুভূতি কিছুটা হলেও আমাদের আশ্বস্ত করে। হ্যাঁ কেউ না কেউ আছেন এখনো জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করেন।
কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে এই জবাবদিহিতামূলক মানসিকতা এখন তেমন কাজ করে না। তারা যেন সকল আইনের ঊর্ধ্বে। অথচ তারাই হওয়ার কথা আইডল। তা না হয়ে অনেকেই খল চরিত্রে আবির্ভূত হয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের ছত্রছায়ায় থাকা মূর্খরাও একেক এলাকার দানব হয়ে উঠেছে। সব গ্রাস করে ফেলতে হবে, কেউ কিছু বলার নেই- এমন মানসিকতা তৈরি হয়েছে। তাদের দেখাদেখি সমাজের অন্যরাও আইন ভঙ্গ করা, ক্ষমতার দাপট দেখানো, অবৈধ পথে শত হাজার কোটি টাকা কামানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
মন্ত্রী-এমপিসহ জনপ্রতিনিধিরা যদি জবাবদিহিতার আওতায় আসেন, তাহলে তাদের আশ্রয়- প্রশ্রয়ে থাকা সুবিধাভোগী ও সুবিধা প্রদানকারী লোকগুলোও সমাজকে বিনষ্ট করার সুযোগ পাবে না। দম্ভ অহংকার দেখাতে পারবে না।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস ও ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম