বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনের কাছে প্রত্যাশা

ড. মো. মাহবুব হাসান
| আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১৯:২০ | প্রকাশিত : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১৯:১৮

গত ১৫ই আগস্ট ২০২২ তারিখ ছিল জাতির পিতার ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস , যা বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্ক জনক অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হয় । কিন্তু ৪৭ বছর পরেও উম্মোচিত হলো না কারা এর পিছনে মূলপরিকল্পনাকারী, সুবিধাভোগী এবং ষড়যন্ত্রকারী ছিল । গত কয়েক বছর যাবত আগষ্ট মাস আসলেই বিভিন্ন ব্যাক্তি ও আইনমন্ত্রীর মুখে শোনাযায় "ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিশন" গঠন করা হবে , যদিও ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায়, তা সত্ত্বেও 'ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন (Fact Finding Commission)’ আলোর মুখ দেখে নাই। এই বছর আইনমন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছেন যে, সরকার ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি কমিশন গঠন করবে এবং ইতিমধ্যে কমিশনের জন্য একটি খসড়া আইন তৈরি করেছে্ন। সুতরাং জাতি আশা করতে পারে কমিশন এবার হবেই । তবে তিনি কমিশন গঠন ও কার্যাবলী প্রকাশ করেননি। আসুন প্রথমে "ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিশন" কি জানা যাক। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি কমিশন, যা ১৫ই আগস্ট সকল হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যর কুশলীদের মুখ ও ঘটনা উম্মোচিত করবে। পৃথিবীর অনেক দেশ এই ধরনের কমিশন গঠন করার নজীর রয়েছে । যেমন - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি, মহাত্মা গান্ধী, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পরে এই জাতীয় তথ্য অনুসন্ধান কমিশন গঠন করেছিল । মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন ২২শে নভেম্বর, ১৯৬৩ সালে সংঘটিত রাষ্ট্রপতি কেনেডি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য ২৯ নভেম্বর, ১৯৬৩ সালে সাত দিনের মধ্যে, বেসরকারীভাবে ‘ওয়ারেন কমিশন’ নামে পরিচিত একটি কমিশন গঠন করেছিলেন। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রকৃতপক্ষে দেশ-বিদেশের কারা জড়িত ছিল তাদের নাম-পরিচয় ও উদ্দেশ্য উন্মোচন করতে কমিশনের উচিত হবে গভীর ভাবে তদন্ত করা ও নিম্নের বিষয় গুলো বিবেচনায় নেয়া।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, বিচার প্রক্রিয়ায় তারা এসেছে যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল, কিন্তু যারা দৃষ্টির বাইরে ছিল- মূলপরিকল্পনাকারী, সুবিধাভোগী এবং ষড়যন্ত্রকারী তারা বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে রয়ে গেছে । এই ষড়যন্ত্রে শুধু বাংলাদেশীরাই জড়িত নয় অনেক আন্তর্জাতিক রাজনৈ্তিক ব্যাক্তি ও দেশ জড়িত। যেমন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার পর পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সৌদি আরব এবং চীন- অনুমান করা যেতে পারে যে, তারা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার ষড়যন্ত্রে হয়তো জড়িত বা সমর্থন করেছিল। অনেক গবেষণা পত্র এবং বই থেকে জানা যায় যে সে সময় মার্কিন সরকার এবং সিআইএ ও পরোক্ষভাবে হত্যা মিশনে জড়িত ছিল। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বন্ধুত্বের স্বার্থে কোন রাষ্ট্রগুলো এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল তার মুখোশ খুলে দেওয়া দরকার।

আগস্ট কিলিং মিশন ছিল একদল সামরিক কর্মী দ্বারা সামরিক অভ্যুত্থান এবং কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা অভ্যুত্থানে অংশ নেন। প্রফেসর আব্দুল মান্নান, প্রাক্তন ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেছেন যে ‘রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড এবং সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি, সতর্ক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন। কিছু অভ্যন্তরীণ ব্যক্তির সম্পৃক্ততা এবং বিদেশী শক্তির সমর্থন জিনিসগুলিকে সহজ করে তোলে। যে ক্ষেত্রে টার্গেট ব্যাক্তিটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মতো কেউ, কাজটি আরও চ্যালেঞ্জিং। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পনা করেছিল এবং পেশাগতভাবে কাজ করেছিল’ (দ্য ডেইলি স্টার, ১৫ আগস্ট ২০১৬ )। সুতরাং, এটি অনুমান করা যেতে পারে যে সামরিক অভ্যুত্থানগুলি অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের শক্তি দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল।

একটি সাধারণ ধারণা হিসাবে, তারা সেনা বাহিনীর খুব কম অংশ ছিল, কিন্তু মনে প্রশ্ন আসবে, বাকি সামরিক বাহিনী কি করেছে? সেই সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রথমে যার নাম আসে, তিনি সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ (অব.), তিনি কেন প্রকাশ্য তৎক্ষনাত বিদ্রোহী সামরিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ বা পাল্টা আক্রমণ করলেন না? তারা কেনো পাল্টা সামরিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, শুধু তিনিই নয়, অন্যান্য সামরিক ও সশস্ত্র বাহিনী যেমন সাভার সেনানিবাস, বিডিআর-এর সদর দপ্তর (বর্তমান বিজেবি), বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী এবং রক্ষীবাহিনী। সব ধরনের চেইন অব কমান্ড লঙ্ঘনের জন্য দায়ী কে? এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ (অব.) বলেছিলেন যে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শোনার পর আরো রক্তপাত ​​ও গৃহযুদ্ধ এড়াতে তাকে হত্যাকারীর বিরুদ্ধে বিমানে বা অন্যকোন প্রতিরোধ মূলক সামরিক ব্যাবস্থা নেওয়ার পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে হয়, তারপর তিনি মোস্তাক গংদের অনুরোধে ঢাকা রেডিও স্টেশনে যান এবং মোস্তাকের সরকারকে স্বীকৃতি দান করেন (মতিউর রহমান, ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড: কে এম শফিউল্লাহ- ও- শাফায়েত বিতর্ক, প্রথমা প্রকাশনা)। এখানে যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে, কে এম সফিউল্লাহ সেদিন খুনিদের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিলে সাংবিধানিক গণতন্ত্র, সংবিধান, চার জাতীয় নেতা এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধা-সামরিক কর্মকর্তাকে বাঁচানো যেত, আমাদের জাতিকে দেখতে হতো না অগণতান্ত্রিক সেনা সমর্থিত অসাংবিধানিক মোস্তাকের সরকার। কর্নেল হামিদ (অব.) তার বই 'তিনটা সেনা অভুথান ঘিরে আমার কিছু কথা'-তে দাবী করেছেন এবং বলেছেন যে, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হত্যার মিশনের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা জানতেন, কিন্তু তারা কিলিং মিশনের সময় ও তারিখ শুধু জানতেন না’। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীতে গোয়েন্দার লোকজন ছিল কিন্তু তারা রিপোর্ট করতে ব্যার্থ হয় এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতেও ব্যার্থ হয় । গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণও জানাতে হবে জাতিকে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) ফারুক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন যে তারা রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং বাকশালকে উৎক্ষাত করতে চেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে, পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনে শেখ মুজিবকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত হয় (দ্য ডেইলি স্টার, ১৯ নভেম্বর ২০০৯)। ঐই রাতে তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, হত্যা করেছিল পরিবারের সকল সদস্য এমনকি ১০ বছরের রাসেল, বেগম মুজিব, কামালের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে। তাছাড়া তারা ১৩ জন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন শিশু। এটা যে কোন মানুষ অনুধাবন করতে পারে, ১০ বছরের ছেলে, মিসেস মুজিব এবং গর্ভবতী মহিলারা রাজনৈতিক পরিবর্তনের অংশ ছিলেন না। আসলে খুনিদের উদ্দেশ্য সরকার বা ক্ষমতার পরিবর্তন ছিল না, তারা এর চেয়েও বেশি কিছু চেয়েছিল, তার প্রমান – রাতারাতি দেশকে তারা ‘ইসলামিক রিপাবলিক ’ ঘোষণা করেন। সুতরাং, কমিশন তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান করবে এবং প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করবে।

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর খুনি মোস্তাক সরকার- খুনিদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ১৯৭৫ সালে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেন এবং সব খুনি ও সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারীদের আইনি ক্ষমা দেন। পরবর্তীতে জিয়া সরকার ‘১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী’ পাশ করে সেই অধ্যাদেশকে সাংবিধানিক বৈধতা দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জিয়া ও তার নতুন সরকার খুনিদের বাঁচাতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সবচেয়ে বিতর্কিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে সংবিধানের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করল কেন? ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডির সঙ্গে কি সে জড়িত ছিল? বর্তমান আইনমন্ত্রী দাবি করেছেন যে একটি তদন্তে পাওয়া গেছে “জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন”(দ্য ডেইলি স্টার, ১৭ আগস্ট ২০১৭)। তৎকালীন ঢাকা সেনানিবাসের ৪৬ বিগ্রেড কমান্ডার কর্নেল (অব.) শাফায়েত জামিলের মতে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেনারেল (অব.) এরশাদ সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এরশাদ সে সময় সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য নয়াদিল্লিতে ছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি সরকারি অনুমতি ছাড়াই ঢাকায় আসেন, সে কারণে জিয়া তাকে ঢাকায় পেয়ে ক্ষুব্ধ হন এবং বঙ্গভবনে (রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন) যেতে নিষেধ করেন- ফারুক ও রশিদের সাথে দেখা করতে। তবে তিনি জিয়ার নির্দেশ উপেক্ষা করে বঙ্গভবনে চলে যান। পরবর্তীতে, মোস্তাকের সরকার এরশাদকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেয় এবং তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেয় - সবচেয়ে সিনিয়র অফিসার (মতিউর রহমান, ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড: কে এম শফিউল্লাহ- ও- শাফায়েত বিতর্ক, প্রথমা প্রকাশনা)। তাই হত্যার ষড়যন্ত্রে জিয়া ও এরশাদের সম্পৃক্ততা আছে কি না তা খুঁজে বের করতে হবে। "

শুধু তাই নয়, বিএনপি- জামাত জোট সরকার আবারও বিচারিক ষড়যন্ত্র শুরু করে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে , এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল নিষ্পত্তিতে সরাসরি ভাবে বাধা সৃষ্টি করে। হাইকোর্ট বিভাগে সুপ্রিম কোর্টের অনেক বিচারপতি আপিল মামলা নিষ্পত্তি করতে বিব্রত বোধ করেছেন। এমনকি আপিল বিভাগে বিএনপি সরকার আপিল মামলার শুনানির জন্য বেঞ্চ পূরণ করার জন্য বিচারপতি নিয়োগ করেনি। তবে বিচারকদের বিব্রতকর অবস্থার কারণ জানা না গেলেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় জনমনে। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান লতিফুর রহমান বিচারকদের বিব্রতকর অবস্থা সম্পর্কে তার বই "তত্ত্ববোধক সরকারের দিনগুলী ও আমার সংস্করণ” সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন - "যখন বেশিরভাগ সিনিয়র বিচারপতি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি করতে বিব্রত বোধ করছিলেন, তখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে মনে হয়েছিল যে বিচারকরা মামলাটি শুনতে অনিচ্ছুক এবং দায়িত্ব এড়াচ্ছেন," তবে, ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ পর্যন্ত। ট্রায়াল কোর্টের রায়ের প্রায় ২০ মাস পরে ২৪ জুন, ২০০৩ তারিখে হাইকোর্ট বিভাগে শুরু হয় এবং তৃতীয় বিচারকের রায়ের পর ৩০ এপ্রিল, ২০০৩ তারিখে সম্পন্ন হয়। (দ্য ডেইলি স্টার, ১৩ আগস্ট ২০০৬)। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আপিল বিভাগে ‘বিচারক স্বল্পতার’ কারণে বিএনপির পাঁচ বছরের মেয়াদে (২০০১-২০০৬) একটি দিনও এই মামলার শুনানি হয়নি। এক পর্যায়ে, বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী, যিনি ১ মার্চ, ২০০১ থেকে ১৭ জুন, ২০০২ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি ছিলেন, মামলার শুনানির জন্য অ্যাড-হক ভিত্তিতে একজন বিচারপতি নিয়োগের পরামর্শ দেন। যদিও বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি (দ্য ডেইলি স্টার, ১৩ আগস্ট, ২০০৬)। ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিলের শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টে অবশেষে তিন সদস্যের বেঞ্চ গঠন করা হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্তদের নিয়মিত আপিল করার অনুমতি দেয় বেঞ্চ। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার সুপ্রিম কোর্টে কয়েকজন বিচারপতি নিয়োগ এবং আপিল শুনানির জন্য পাঁচ সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ গঠনের পর তাদের নিয়মিত আপিলের শুনানি নিশ্চিত করা হয়। (দ্য ডেইলি স্টার, ১৯ নভেম্বর ২০০৯)। তাই বিচারের পথে বাধা সৃষ্টির জন্য জড়িত ছিল তা প্রকাশ করার সময় এসেছে।বিশেষ করে ন্যায় বিচারের স্বার্থে, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি উজ্জল করতে বিচারকদের বিব্রতও বোধের কারণ উন্মুক্ত করা দরকার ।

অতএব, জাতি এমন একটি কমিশন চায় – যা নিরপেক্ষ ভাবে সত্য উৎঘাটনে কাজ করবে , কার প্রতি বিরাগে বশবতী হয়ে প্রতিশোধ নেওয়া বা কাউকে হেয় যেন না করে; জাতি এমন একটি কমিশন চায়, যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জাতির পিতার হত্যার প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করতে তদন্ত করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এ এফ এম সিদ্দিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তি বা কোনো পরিবারের হত্যা নয়, বরং এটি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য’। তিনি আরও বলেন, দেশ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছে, কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পুরো নীলনকশা যেটি অনেক দিন আগে শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের আগে এবং দীর্ঘদিন ধরে হত্যাকাণ্ডের পরও অব্যাহত ছিল তার কর্মকাণ্ড -তা একটি কমিশনের মাধ্যমে উদঘাটন করা উচিত। অতএব, একটি ন্যায্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এবং একটি দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত করবে যে , ৪৭ বছর পরেও সত্য প্রকাশ পায়। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশনের রিপোর্টকে শ্বেতপত্র হিসেবে প্রকাশ করারও দাবি জনগণের। যাতে, ভবিষ্যতে আর কেউ হত্যার ষড়যন্ত্র করতে সাহস না পায়।

লেখক: গবেষক ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :