সম্রাটের বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৪২ | প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৩৫

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাঈল হোসেন চৌধুরী সম্রাাট এখন কেমন আছেন? কোথায় আছেন? তিনি কি দলীয় পদ-পদবী ফেরত পাবেন? এসব প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মনে। আড়াই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেল থেকে গত ১১ মে মুক্তি পান সম্রাট।

সম্রাটকে নিয়ে সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ রয়েছে। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে নিয়ে মন্তব্য করতে বিব্রতবোধ করেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। কারামুক্ত হওয়ার পরে সম্রাট কোথায় থাকেন তাও কেউ বলতে পারছেন না। তাকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি মাঝেমধ্যে শাহবাগ বিএসএমএমইউতে এসে চেকাপ করেন এবং কিছু সময় সমর্থকদের নিয়ে আড্ডা দেন।

সম্রাটের একটি ঘনিষ্ঠসূত্র জানায়, সম্রাট রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসায় থাকেন। তবে রাজনীতি ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে অনেকটাই দূরে আছেন। সূত্রটির দাবি, গত ১১ নভেম্বর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে ৬০ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। ওই দিন জুমার নামাজের পর সমাবেশে যোগ দেন।

যুবলীগের এই নেতা আড়াই বছরের কিছু বেশি সময় বন্দিজীবন কাটিয়েছেন হাসপাতালের বিছানায়। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে তিনি সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। দলের নেতাকর্মী ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। পরিবারকেও সময় দিচ্ছেন- এমনটিই দাবি তার ঘনিষ্ঠদের।

সম্রাটের চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, তার (সম্রাট) শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। তবে জামিন পাওার পর অনেকদিন ধরেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই।

একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত ১১ নভেম্বর দুপুরে ‘সম্রাট জুমার নামাজের পর প্রধানমন্ত্রী সমাবেশে আসার আগেই মন্দির গেট দিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন। মঞ্চের বাম পাশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসেছিলেন সম্রাট। ওই দিন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকুসুদুর রহমান গণমাধ্যকর্মীদের বলেছিলেন, ‘সম্রাট ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা ৬০ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে এসেছি।

জামিনে মুক্তির পর সম্রাটকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা।

ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে ইসমাইল হোসেন সম্রাট ও তার সহযোগী আরেক যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ চারটি মামলায় বিচার চলছে।

২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে র্যাবের অভিযানে অবৈধভাবে ক্যাসিনো কারবারের বিষয়টি সামনে আসে। ওই ক্লাব পরিচালনা করতেন যুব লীগের সেই সময়ের ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তিনি ছিলেন ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ঘনিষ্ঠ। পরে বেরিয়ে আসে ঢাকায় ক্যাসিনো কারবারে সম্রাটের জড়িত থাকার তথ্য। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে বিদেশি মদ পাওয়া যায়। এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁদের ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন।

দুজনকে ঢাকায় আনার পর ইসমাইল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাব। সেখানে বন্যপ্রাণীর চামড়া, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পাওয়ার কথা জানানো হয়। বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ইসমাইল হোসেনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।

পরে ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে রমনা থানায় মামলা করা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং (অর্থ পাচার) আইনে মামলা করে। আর দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ১০ এপ্রিল অর্থ পাচার ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ঢাকার পৃথক দুটি আদালত থেকে জামিন পান সম্রাট। পরদিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় তাকে জামিন দেন আদালত।

১১ মে সকালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ইসমাইল হোসেনের জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান। এই মামলা তদন্ত করে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিল দুদক। তাতে ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।

শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে মানবিক কারণে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আদালত শর্ত দিয়ে বলেছেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে যেতে পারবেন না সম্রাট। তার পাসপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। সম্রাটের পক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী এহসানুল হক সমাজি। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, জামিন পাওয়ার পরে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন। তবে তিনি খুব অসুস্থ। আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকায় তিনি আদালতে আসেন অনেকটাই বাধ্য হয়ে। যদিও আদালত তাকে বিদেশে যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তবে আমরা আশা করছি আদালত তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ দেবেন।

সম্রাট এখন কোথায় থাকছেন? কী করছেন? এমনসব প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে এই আইনজীবী ঢাকা টাইমসকে বলেন, তিনি আমার একজন মক্কেল। মামলা সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। তিনি জামিন পেয়েছেন, আর নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন। দলীয় পদ পদবী ফেরত পাবেন সম্রাট?

গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরেই অসামাজিক কার্যকলাপ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। তৎকালীন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুন রশিদ তাকে বহিষ্কার করেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানোর পরে সম্রাটকে নিয়ে কথা বলতে অনেকটাই বিব্রত বোধ করেন দলের নেতাকর্মীরা।

সরাসরি সম্রাটকে নিয়ে কেউ মন্তব্য করতে চান না। বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের এক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তাকে (সম্রাট) নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’ সম্রাট কি যুবলীগের আগের পদে ফিরে যাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, তিনি যুবলীগ করতেন। এখন যুবলীগই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সম্রাটের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ঢাকাটাইমসকে বলেন, তার বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। একই ভাষ্য, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, সম্রাটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আর আমি তার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতেও চাই না।

(ঢাকাটাইমস/১৭ নভেম্বর/এএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :