জীবনে সুখের দেখা পাননি বিরাশির ছালেহা, মরবার আগে চান একটা ঘর

মো. মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫:৫৭ | প্রকাশিত : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:১৯

‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও’। আসমানীর দুর্দশা ফুটে উঠেছিল পল্লীকবি জসীমউদদীনের বিখ্যাত ‘আসমানী’ কবিতায়। ছালেহা বেগমের জীবনও কবিতার আসমানীর দুর্দশার চেয়ে কম কিছু নয়।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বুড়াইছ গ্রামের বাসিন্দা ৮২ বছর বয়সী ছালেহা বেগমের এই ধরাধামে কিছু নেই। পরের জমিতে করা জীর্ণ এক ঘরে বাস স্বামী হারা নিঃসন্তান এই নারীর। এক বেলা খাবার এই জোটে তো পরের বেলা উপোস।

ছালেহা বেগমের স্বামী মারা গেছেন ২৭ বছর আগে। স্বামীর সামান্য ভিটেবাড়িটিও বিক্রি করতে হয়েছিল অর্থাভাবে। হতদরিদ্র হলেও সরকারের দেওয়া নানা সামাজিক কর্মসূচির মধ্যে কেবল যৎসামান্য বিধবা ভাতায় পান অশীতিপর এই বৃদ্ধা।

সরেজমিন বুড়াইছ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভাঙা ঘরে ছালেহা বেগমের বাস। বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিক অক্ষমতাও ছালেহা বেগমকে পেয়ে বসেছে। রোগেশোকে দিনমান কাটে বিছানায়। সঙ্গী বলতে তার সঙ্গে থাকা দুটি বিড়াল। অসুস্থ হওয়ায় নিয়মিত সেবনের ওষুধও অর্থাভাবের কারণে তার কাছে যেন অমূল্য।

প্রতিবেদক কথা বলেন ছালেহা বেগমের সঙ্গে। কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘শুনেছি সরকার কত গরিবগেরে সাহায্য দেয়। কিন্তু আমাগের খবর কেউ নেয় না। শুনি যাগো ঘর নাই সরকার নাকি তাগো ঘর দেচ্ছে, আমাগেরে একটা ঘর দিলি একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পাতাম।’

‘এহন আর কাম-কাজ করতি পারিনে। শরীলি বিভিন্ন রোগে বাসা বাঁধিছে। প্রতিদিন ৫০/৬০ টাহার ওষুধ খাতি হয়। এই শীতের রাতি পুরন কাপুর দিয়ে ঘরের দরজা-জানালা ঘিরে রাহি। শান্তিতে একটু ঘুমাতি পারিনে।’

প্রচণ্ড শীতে তার কষ্টের বিষয়টি তুলে ধরেন ছালেহা বেগম। বলেন, শীত কেটে গেলেও বর্ষার দিনে তার মাথা গোঁজার ঠাঁই টিকিয়ে রাখতে পারবেন কি না জানেন না। কারণ, ঘরের টিনের বেড়া আর চালা শতচ্ছিন্ন। মেরামত না করলে যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে।

ছালেহা বেগম বলেন, ‘এবার ঝড়বৃষ্টির দিনে বেঁচে থাকতি পারবানি কি না জানিনে। এত কষ্ট এই বয়সে আর সহ্য হয় না। আল্লাহ নিয়ে গেলি বেঁচে যাতাম। সারা জীবনে একটু সুখের মুখ দেখলাম না।’

বুড়াইচ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আউয়াল ফকির আলাপকালে বলেন, ‘আমি ইউনিয়নের মেম্বার থাকার সময় ছালেহা বেগমকে একটা বিধবা ভাতা করে দিয়েছিলাম। আমি সুযোগ পেলে ছালেহা বেগমের পাশে থেকে উপকার করার চেষ্টা করবো।’

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আলী আকসাদ ঝন্টু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জমিজমা নেই এরকম ভূমিহীন হতদরিদ্র মানুষের জন্যই সরকার ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে, যদি তিনি ভূমিহীন হন তাহলে খাস জমিতে তাকে ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’

ছালেহা বেগমের দুর্দশার খোঁজ নেবেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক। ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে তার (ছালেহা) বিষয়ে জানলাম। আমি তার বাসস্থান পরিদর্শন করবো এবং তার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সরকারিভাবে যা যা করণীয় তা করবো।’

(ঢাকাটাইমস/১১জানুয়ারি/এমআই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

সালথায় ‘হত্যাচেষ্টা ও ছিনতাই’য়ের মামলায় কারাগারে ইমাম, মুক্তির দাবি পরিবারের

জাজিরায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ

র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু: মামলা নিয়ে ওসি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পরস্পর বিরোধী বক্তব্য

লংগদুতে ইউপিডিএফ সদস্যসহ দুইজনকে গুলি করে হত্যা

টাঙ্গাইলে ধান কাটার সময় বজ্রাঘাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু, আহত ৪

সাতক্ষীরায় ধানবোঝাই ট্রাক উল্টে ২ শ্রমিক নিহত, আহত ৭

সিলেটে বজ্রপাতে যুবকের মৃত্যু

শেরপুরে মোটরসাইকেল-অটোরিকশা সংঘর্ষে প্রাণ গেল দুই বন্ধুর

‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন বলেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি’

শ্রীপুরে যুবতির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :