শীতে যে নিয়মে মুরগির মাংস খেলে ওজন কমে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:২০

মুরগির মাংস প্রোটিনের এক চমৎকার উৎস। আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করতে সক্ষম ভিটামিন এবং মিনারেলে পরিপূর্ণ মুরগির মাংস। একটি হেলদি লাইফ স্টাইল-এর পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় মুরগির মাংস যোগ করা সুস্বাস্থ্যের পথে আপনাকে আরো একটি ধাপ এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। মুরগির মাংস সর্বদা একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত করার কারণ হল এটি মূলত একটি চর্বিহীন মাংস, যার মানে এটিতে খুব বেশি চর্বি নেই। নিয়মিত মুরগির মাংস খাওয়া আসলে আপনাকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। মুরগির মাংসে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আপনার শরীরের কোলেস্টেরল লেভেল কমাতেও সাহায্য করে।

মুরগির মাংস হোমোকিস্টাইনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্টের বিভিন্ন ধরনের কার্ডিওভাস্কুলার রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। হোমোকিস্টাইন একটি অ্যামিনো অ্যাসিড। উচ্চমাত্রায় এটি হার্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

১০০ গ্রাম কাঁচা মুরগির মাংসে পুষ্টি উপাদান রয়েছে: প্রোটিন ১৪.০৫ গ্রাম, কোলেস্টেরল ৭৯ মিলিগ্রাম, রেটিনোল ৭৫ মাইক্রো গ্রাম, ফ্যাট ২৮.৪ গ্রাম, সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ৮.৩৪ গ্রাম, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড ১৮.৩৯ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৩ মিলিগ্রাম, কপার ০.০৪৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৯৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২৫১ আইইউ, ফসফরাস ১১৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৪৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬৪ মিলিগ্রাম, জিংক ১.২৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি (১২) ০.২৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন ই ০.৩৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ২.৪ মাইক্রোগ্রাম।

মুরগিতে প্রোটিন, শক্তি, কার্বোহাইড্রেট এবং ভিটামিন সি রয়েছে যা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। মুরগির মাংসের ভিটামিন বি-৬ শরীরে বিপাকের মাত্রা উন্নত করে। শরীরে চর্বি না বাড়িয়েই খাবার হজম করতে পারে। রক্তনালী ঠিক রাখতেও এটি কাজ করে।

মুরগির মাংসে উচ্চ মাত্রায় ট্রাইফটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। ফলে এক বাটি চিকেন স্যুপ স্বস্তি এনে দিতে পারে। বিষণ্নবোধ হলে কয়েকটি চিকেন উইংস খাওয়া যেতে পারে। যা মস্তিষ্কে সেরেটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে চাপমুক্ত থাকতে সাহায্য করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্বল্প তেলে মুরগি খাওয়া ক্ষতি করে না, তবে অতিরিক্ত ফ্যাট এবং তেলযুক্ত মুরগি স্বাস্থ্য এবং হার্টের জন্য ক্ষতিকর। মুরগিতে গসিপাল উপাদান রয়েছে। এটি স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করতে উপকারী। মুরগির মাংসের কয়েকটি বিশেষ পদ খেয়েও ওজন কমানো সম্ভব। জেনে নিন মুরগির মাংস যেভাবে খেলে দ্রুত ওজন কমবে-

দই মুরগি

মুরগি কষানোর আগে দই ব্যবহার করতে পারেন। এমনকী হালকা কোনও পদ রান্নার জন্যেও দই ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে মাংস দ্রুত সিদ্ধ হয়। কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও থাকে না। খাবার দ্রুত হজম হয়। তবে এই ধরনের রান্নায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা। দুপুরে এই ধরনের পদের সঙ্গে একটা রুটি, বা সামান্য ভাত খেতে পারেন।

মুরগির সালাদ

দুপুরে রাখতে পারেন মুরগির সালাদ। রান্না করা মুরগি ছিড়ে নিয়ে কিছু সবজি যেমন শশা, গাজর, ক্যাপ্সিকাম, পেঁয়াজ কুঁচি, সিদ্ধ ব্রকলি এবং বিন দিয়ে তৈরি করতে পারেন সালাদ। এর সাথে যোগ করুন লবণ, গোল মরিচ, সরিষা গুঁড়া, সিরকা, অলিভ অয়েল এবং পছন্দমত মশলা। একটু ঝাল চাইলে সাথে দিন কাঁচামরিচ কুঁচি। এটা শুধু এভাবেও খেতে পারেন বা স্যান্ডউইচ বানিয়ে বা রুটির ভেতরে দিয়েও খেতে পারেন। দীর্ঘক্ষণ পেট ভর্তি থাকে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই পদ ওজন কমাতে সাহায্য করে।

মুরগির স্টু

হাড়সহ মুরগির মাংস রান্না করার জন্য এটা বেশ ভালো একটি রেসিপি। তলা ভারী একটি হাড়িতে হাড়সহ মুরগির টুকরো নিয়ে পানি এমন ভাবে দিতে হবে যেন মুরগির টুকরোগুলো ডুবে থাকে। এতে লবন দিয়ে চুলায় দিতে হবে। যখন মুরগির মাংস অর্ধেক সিদ্ধ হবে তখন এতে কাটা পেঁয়াজ ও পছন্দ মত সবজির টুকরো যোগ করুন যেমন গাজর, বরবটি, ফুলকপি ইত্যাদি। এর সাথে আদা, লেমন গ্রাস বা থাই পাতা, গোল মরিচ ও পছন্দমত মশলা যোগ করতে পারেন। মুরগির টুকরো ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।

মুরগির স্যুপ

ওজন কমানোর জন্য ডিনার ৮টার মধ্যে সেরে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত, রাতে ভারী খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত। সেক্ষেত্রে গরম গরম স্যুপ বানিয়ে খেতে পারেন। বাড়িতেই খুব সহজে বানিয়ে ফেলুন লেবু-মুরগির স্যুপ। স্বাদ বাড়াতে সামান্য মশলাও দিতে পারেন। লেবু-মুরগির স্যুপের সাথে সালাদ এবং রুটি বা লাল আটার পাউরুটি খেতে পারেন। অথবা স্যুপের সাথে খেতে পারেন অলিভ অয়েলে ভাঁজা সবজি। এছাড়া চাইলে মুরগির স্যুপের সাথে যোগ করলে পারেন কিছুটা পাস্তা এবং সবজি।

লেমন পেপার চিকেন

মাংসের ঝোলের পদ যদি একঘেয়ে লাগে, সেক্ষেত্রে বানিয়ে ফেলতে পারেন লেমন পেপার চিকেন। চিকেনের বড় পিসের মধ্যে অলিভ ওয়েল, লেবুর রস, গোল মরিচ, সামান্য লবণ মিশিয়ে বেক করুন। ডিনারে এই পদ খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভাত এড়িয়ে চলুন।

মুরগির কাবাব

কিছু পরিমাণ আদা, রসুন, কাঁচামরিচ, ৭-৮টি কাঠ বাদাম এবং লবণ মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে পেস্ট করে নিন। যদি মুরগির কিমা থাকে তাহলে সেটার সাথে মিশিয়ে নিন আর যদি কিমা না থাকে তাহলে হাড় ছাড়া মুরগির মাংস ছোট ছোট টুকরো করে কেটে সব একসাথে ব্লেন্ডারে দিয়ে পেস্ট করে নিন। এবার এই মিশ্রণটির সাথে পেঁয়াজ ও ধনেপাতা কুঁচি মিশিয়ে ভালো করে মেখে চ্যাপ্টা গোল আকৃতির বা লম্বা যেকোনো আকৃতির কাবাব বানিয়ে তলা ভারী ফ্রাই প্যানে ১ টেবিল চামচ বা নামমাত্র তেলে এবং অল্প আঁচে বাদামি করে ভাঁজুন।

গ্রিল মুরগি

পোড়া স্বাদযুক্ত গ্রিল মুরগিও হতে পারে একটা দারুন খাবার। বেক করার মতই মুরগি মেরিনেট করে বেক না করে গ্রিল প্যানে গ্রিল করতে হবে। বেক করার চেয়ে গ্রিলে একটু হয়তো বেশি সময় লাগতে পারে।

মুরগির মাংস রান্নার সময় যেসব বিষয় সতর্ক থাকা জরুরি

রান্না করার আগে কাঁচা মুরগি ধুয়ে ফেললে সংক্রমণের আশঙ্কা উল্টে বাড়ে। কারণ মুরগি ধোয়ার ফলে রান্নাঘরের চারপাশে বিপজ্জনক ব্যাক্টেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে। মুরগির মাংসে থাকা জীবাণু একমাত্র রান্না করলে তার পরই নষ্ট হয়ে যায়। ধুয়ে নিলে এই জীবাণু মোটেই নষ্ট হয় না। বরং জলের তলায় কাঁচা মাংস ধোয়ার সময় তার মধ্যে থাকা জীবাণু অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে বিপদ বাড়ায়।’’

মুরগির মাংস রান্নার সময় যেন ভাল ভাবে সেদ্ধ হয়, সে বিষয় সতর্ক থাকুন। মুরগি থেকে ব্যাক্টেরিয়া দূর করতে হলে উপায় হল মুরগীর মাংসকে সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করা। মুরগির মাংসকে রান্না করার জন্য নূন্যতম তাপমাত্রা হল ১৬৫ ডিগ্রি। তাই খাওয়ার আগে অবশ্যই ভাল করে মুরগির মাংস রান্না করতে হবে। মাংস সুন্দরভাবে সিদ্ধ হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য।

সব্জি কাটার সময় যে ছুরি বা চপার বোর্ড ব্যবহার করেছিলেন তাই দিয়ে মুরগি কাটছেন? ব্যবহারের পর সেগুলো ভাল করে জীবাণুমুক্ত করুন।

কাঁচা মাংস রেখেছিলেন এমন কোনও পাত্রে রান্না করা মুরগি একেবারেই রাখবেন না। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

বাসনপত্র এবং ছুরি ধোয়ার পাশাপাশি ভাল করে সাবান দিয়ে নিজের হাতও ধুয়ে নিন। তার পর অন্য কাজ করুন।

ঢাকাটাইমস/২২ জানুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :