পাতালরেল যুগে বাংলাদেশ: শেখ হাসিনা সারা বিশ্বের বিস্ময়

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
 | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৩:০০

পাতালরেলের যুগে পা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থায় বিপ্লব সৃষ্টি করবে এ ব্যবস্থা। স্মার্ট বাংলাদেশের গণপরিবহনও হবে স্মার্ট। যোগাযোগব্যবস্থায় গোটা পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের চিতলগঞ্জে ডিপো নির্মাণকাজের ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে পাতালরেল মহাপ্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু করবেন। পাতালরেল তৈরি হচ্ছে র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইনের অংশ হিসেবে। ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার লাইনের দুটি অংশ থাকবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার অংশ ভূগর্ভস্থ এবং নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়াল। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে লাগবে ২৪ মিনিট। বিমানবন্দর রুটে ১২ ও পূর্বাচল রুটে ৯টি স্টেশন থাকবে। পূর্বাচল রুটের নর্দ্দা ও নতুনবাজার স্টেশন থাকবে ভূগর্ভে এবং এ দুটি স্টেশন যাত্রীদের রুট পরিবর্তনে ইন্টারচেঞ্জ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা। বাকি ১২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার। ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের দুটো লাইন থাকবে। হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর থেকে মাটির নিচ দিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত এই পাতাল পথে রেলের স্টেশন থাকবে ১২টি। স্টেশনগুলোর নির্ধারিত জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে-কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, রামপুরা, আফতাবনগর, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার, নর্দা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ এবং বিমানবন্দর। আর এমআরটি লাইন-১ এর অপর অংশ নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত উড়ালপথে। স্টেশন থাকবে ৭টি। সেগুলোর নির্ধারিত জায়গা হলো-জোয়ার সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্ট্রাল, পূর্বাচল পূর্ব এবং পূর্বাচল টার্মিনাল। এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকি ১২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, এমআরটি লাইন-১ চালু হলে এই রুটে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে ২৪ দশমিক ৩০ মিনিট। আর নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল যেতে সময় লাগবে ২০ দশমিক ৩৫ মিনিট। এমআরটি লাইন-১ এর প্রতিটি পাতাল স্টেশন হবে তিনতলা। টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধা থাকবে প্রথম বেজমেন্টে। প্ল্যাটফরম থাকবে দ্বিতীয় বেজমেন্টে। আর উড়াল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার এবং প্ল্যাটফরম থাকবে তিনতলায়। যাত্রীদের চলাচলের জন্য উড়াল ও পাতাল-দুই পথের স্টেশনেই থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর সুবিধা। স্টেশনগুলোয় পর্যাপ্ত বাতাস ও অক্সিজেনের প্রবাহ ঠিক রাখতে থাকবে অতিরিক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।

এদিকে, দেশের প্রথম মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইন-৬-এর একাংশ ২৮ ডিসেম্বর চালু হয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলাচল করছে। এমআরটি-৬ দেশের প্রথম মেট্রোরেল এবং এমআরটি-১ দেশের প্রথম পাতাল রেল। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ৬টি মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকায় ১৩০ কিলোমিটার শক্তিশালী মেট্রো নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায় সরকার। তখন মেট্রো নেটওয়ার্কে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে।

পাতালরেল দেশবাসীকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নতুন যুগের সঙ্গে যুক্ত করবে। মানুষ কম খরচে শহরের বাইরে থাকতে পারবে এবং অফিস ও অন্যান্য কাজে সহজে ঢাকায় আসতে পারবে। প্রকল্প এলাকার বাণিজ্যিক উন্নয়ন ঘটবে এবং রুটের চারপাশের সুবিধাগুলোর মূল্য বাড়বে। ওইসব এলাকায় বসবাসকারী স্বল্প আয়ের লোকজন কম ভাড়ার জায়গায় চলে যাওয়ার গরজ অনুভব করবে এবং এতে মানুষ রাজধানীর শহরতলিতে বিকেন্দ্রীভূত হবে।

ঢাকা এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম মেগা সিটি। বিশ্বের বৃহৎ নগরীগুলোর মধ্যে ঢাকা সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিসম্পন্ন। জনসংখ্যার তুলনায় সড়কের সংখ্যা কম হওয়ায় যানজট অনিবার্য হয়ে ওঠে। মেট্রোরেল, পাতালরেল সেই দুর্বিষহ অবস্থা সহনশীল পর্যায়ে আনতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র বিকাশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম ও অতুলনীয়া। বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে সত্যিই এক উদাহরণ। এই উদাহরণ অগ্রগতির উদাহরণ। অর্থনীতি ও আর্থ সামাজিক বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে। বাংলাদেশ আজ বড় সম্ভাবনার দেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নের এই অগ্রগতিকে একটি ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

আওয়ামী লীগ ব্যবসা ও উন্নয়নবান্ধব সরকার। ব্যবসা-বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয়, উৎপাদন, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। দেশের শহর থেকে গ্রামগঞ্জ সবখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অথর্নীতি আজ চাঙ্গা হয়েছে। তলাবিহীন ঝুঁড়ি হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত বাংলাদেশ আজ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ মডেল ইকোনমিক কান্ট্রি।

বতর্মান সরকারের সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এমন কোনো খাত নেই যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি, মাতৃত্ব এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :