যেসব রান্নার তেল ডায়াবেটিস রোগীদের বিষ

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:২৫ | প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫০

অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার কারণে গোপনেই শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। ডায়াবেটিসও এমনই একটি রোগ, যার প্রধান কারণ আপনার অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। ব্লাড সুগার বাড়ার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। চোখ, কিডনি, লিভার, হার্ট ও পায়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। এমনকি ডায়াবেটিস প্রাণঘাতীও হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগ হলে মানুষের শরীর ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। শরীরে দুর্বলতা বাড়তে থাকে এবং শরীরে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। অত্যধিক ক্ষুধা ও তৃষ্ণা, ওজন হ্রাস, অত্যধিক প্রস্রাব, ঝাপসা দৃষ্টি, ধীরে ধীরে ক্ষত নিরাময় এবং চরম ক্লান্তি ব্লাড সুগার বাড়ার লক্ষণ।

ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। খাদ্যতালিকায় ভোজ্য তেলেরও বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ব্লাড সুগার বাড়ানোর পাশাপাশি ভোজ্য তেল ওজন বাড়ায় এবং আরও অনেক রোগের কারণ হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি, তাই সুগার রোগীদের রান্নার তেল খুব সাবধানে বাছাই করা উচিত।

তেল খাওয়ার অসুবিধে এড়াতে যদি তেল ছাড়া খাবার খান তাহলে ভুল করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তেলে ওমেগা ৩ ফ্যাটগুলো মস্তিষ্কের বিকাশ, হরমোন উৎপাদন, সেলুলার স্বাস্থ্য এবং ইমিউন সিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার এমন তেল খাওয়া উচিত যাতে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।

তেল যেমন প্রয়োজনীয় ফ্যাট সরবরাহ করে তেমনই ভিটামিন এ ডি, ই এবং কে শোষণ করতে সহায়তা করে। কিন্তু সব ধরনের তেলই এই সুবিধাগুলো পূরণ করতে সক্ষম নয়। বেশিরভাগ মানুষ খাবারে পরিশোধিত তেল ব্যবহার করেন কারণ এটি দামে সস্তা।

পরিশোধিত বা রিফাইন তেল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই রিফাইন ওয়েল শরীরে এলডিএল কোলেস্টেরল বাড়িয়ে ফ্যাট বেড়ে যায়, পরে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।

উচ্চ তাপমাত্রায় তেল পরিশোধিত হয়। যার কারণে তেলের প্রয়োজনীয় ও প্রাকৃতিক সব পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে এটি সেবন করলে শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা আমাদের শরীরে খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায় বলে জানা যায়। যার ফলে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমতে শুরু করে।

ডালডার মতো ভেজিটেবল ঘি হার্টের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায়। এসব তেল খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায় এবং ব্লাড সুগারের রোগীদের সমস্যা বাড়তে থাকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের খুব সাবধানে রান্নার তেল বাছা উচিত যাতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন তেল রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোন রান্নার তেল এড়িয়ে চলা উচিত।

স্বাস্থ্যগত উপকারিতার বাইরে ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজ ও চর্বির প্রতি খেয়াল রাখতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের এমন রান্নার তেল খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত যাতে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (PUFA) বেশি থাকে। পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড তেল স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। সয়া তেল, ভুট্টার তেল, সূর্যমুখী তেল, এবং তুলা বীজের তেল খাওয়া এড়িয়ে চলুন। এই তেলগুলো শরীর থেকে ভালো কোলেস্টেরল বের করে দেয়। এই সমস্ত তেলে PUFA এর পরিমাণ বেশি, তাই ডায়াবেটিক রোগীদের এই তেলগুলি এড়িয়ে চলা উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের ভুল করেও রিফাইন্ড তেল খাওয়া উচিত নয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে অলিভ অয়েল, তিলের তেল, রাইস ব্রান তেল, চীনাবাদামের তেল এবং নারকেল তেল খাওয়া উচিত। এই তেলগুলি প্রাকৃতিকভাবে চর্বি পোড়ায় এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। রাইস ব্রান তেলে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো। তিলের তেল ভিটামিন ই এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ যা হৃৎপিণ্ডের পাশাপাশি ত্বক এবং চুলের যত্ন নেয়। অলিভ অয়েল ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরের ফোলাভাব দূর করে। ডায়াবেটিস রোগীরা এসব তেল খেতে পারেন।

এছাড়া ওয়ালনাট তেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। গবেষণায় বলা হয়, ওয়ালনাট তেল টাইপ-২ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে বেশ সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। এগুলো ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভালো।

ক্যানোলার তেল বেশ উপকারী তেল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য। কারণ ক্যানোলার তেলের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, এর মধ্যে রয়েছে কম পরিমাণ স্যাচুরেটিড ফ্যাট।

ডায়াবেটিস রোগীরা অ্যাভোকেডোর তেল খেতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট; এটি ওলেইক এসিডের ভালো উৎস। এই তেল গ্লুকোজ প্রক্রিয়া করতে এবং আরো কার্যকরভাবে ইনসুলিনকে ব্যবহার করতে সাহায্য করে।

অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হৃদরোগের কারণে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুও হতে পারে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমাণ মতো তেল খাওয়া উচিত।

ঢাকাটাইমস/০৭ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

বারবার ফোটানো চা খেলেই মারাত্মক বিপদ! বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :