কুড়িগ্রামে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ‘উপজেলা প্রশাসন পাবলিক লাইব্রেরি’

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন ‘উপজেলা প্রশাসন পাবলিক লাইব্রেরি।’

উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে 'উপজেলা প্রশাসন পাবলিক লাইব্রেরি’ যাত্রা শুরু করে ১৫ আগষ্ট ২০২২ সালে। প্রতি দিন এই পাঠাগারটিতে পাঠকরা আসছেন বই পড়তে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সকল শ্রেণির পাঠকদের জন্য।

এক সময় এই চিলমারী নৌ-বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত। বাংলার আটটি বৃহৎ নদীবন্দরের অন্যতম ছিল চিলমারী নৌ- বন্দর। ভারতের কোচবিহার, আসাম, মেঘালয় এবং চীন ও মায়ানমার থেকে আসত পণ্যবাহী জাহাজ। আসাম ও কলকাতা রুটের মাঝে ছিলো চিলমারী নৌ- বন্দর।

পাটের জন্যও বিখ্যাত ছিল চিলমারী নৌ-বন্দরটি। এ বন্দরে পাটের কারবার শুরু হয় ত্রিশের দশকে। এসময় জুট ট্রেডিং কোম্পানিসহ প্রায় ৩০টি পাটকল ও কোম্পানি এখানে ব্যবসা বাণিজ্য করেছেন।

‘ওকি গাড়িয়াল ভাই হাকা গাড়ী তুই চিলমারীর বন্দরে’ বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের স্মৃতি বিজড়িত এই চিলমারীতে প্রশাসনের উদ্যোগে বেসরকারিভাবে একটি পাঠাগার চালু করা হয়। এর আগের পাঠাগার থাকলেও কিছুদিন পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এবারে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বই প্রেমিকরা। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ছুটছেন এই পাঠাগারে। এই প্রথমবারের মতো এমন ভাবে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে চিলমারী উপজেলা প্রশাসন পাবলিক লাইব্রেরীটি।

পাঠাগারটি সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকলেও অন্যদিনগুলোতে সকাল নয়টা থেকে বিকেল চার পর্যন্ত এই লাইব্রেরিটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।পাঠাগারে বই প্রেমিরা বিভিন্ন নিজেদের পড়ার বই উপহারও দিচ্ছেন। শুরু থেকে বেশকিছু বই নিয়ে পাঠাগারটির কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

থানাহাট এইউ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বই পড়তে আসা ৮ শ্রেণির শিক্ষাথী মোছা. শারমিন আক্তার বলেন, আমি এর আগে এমন পাঠাগার দেখিনি। এখানে এসে সাচ্ছন্দ্যে বই পড়তে পারছি। চেষ্টা করবো অবসর সময় পেলে প্রায় প্রতিদিন আসার।

চিলমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজর শিক্ষাথী সুরাইয়া আক্তার বলেন, আমি সময় পেলে বান্ধবীদের নিয়ে লাইব্রেরিতে বই পড়তে চলে আসি। আমি চাই এই লাইব্রেরিতে আরও বইয়ের সংখ্যা বাড়াতে।

থানাহাট এইউ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ শ্রেনীর ছাত্র জাহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের বই থাকলে আমরা আরও অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারব।

পাঠাগারটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপি উদ্বোধন করেন। এই লাইব্রেরিটি উপজেলা পরিষদে প্রবেশের পথেই দোতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায়। সেখানে দুটি কক্ষে চলেছে পাঠাগারটির কার্যক্রম। ছেলে মেয়েদের রয়েছে দুটি আলাদা কক্ষ। তাই নয় এটি পরিচালনা করতে বেসরকারিভাবে লাইব্রেরিয়ান পদে একজন কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্মানি দেয়া হয়।

উপজেলা প্রশাসন পাবলিক লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান সুমিত্রা রানী জানান, লাইব্রেরি উদ্বোধনের পর থেকেই এখন প্রতিদিন পাঠকরা আসছেন বই পড়তে। তবে পাঠকের মধ্যে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। আপাতত বইয়ের সংখ্যা সীমিত তবে, ইউএনও স্যার কে জানিয়েছি তিনি আরও কিছু বই দেবেন। লাইব্রেরীটি শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে। বাকী দিন গুলোতে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

এমন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগে প্রশংসায় পঞ্চমুখ পাঠাগারটির বাস্তব রুপ দেয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পাঠক,পাঠিকা সহ সুশিল সমাজের মানুষরা।

সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম বাবু বলেন,চিলমারীর মানুষ এমন একটি লাইব্রেরির স্বপ্ন দেখছিলো সেই আশাটি পুরুন করায়ায় ইউএনও স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি এই লাইব্রেরিটি যেন বন্ধ না হয়।লাইব্রেরিটি সরকারি ভাবে পরিচালনা করা হউক।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, আমার বদলির হয়েছে হয়তো আরো থাকলে লাইব্রেরিটির অনেক কিছু করা যেতো। আমি জেলা প্রশাসক স্যার অনুরোধ করবো এই লাইব্রেরিটি যেন বন্ধ না হয়। ভাওয়াইয়া সাংস্কৃতির রাজধানী ও আব্বাস উদ্দিনের স্মৃতি বিজড়িত চিলমারীতে শিক্ষার নিম্নহার ও অনগ্রসরতা মেনে নেওয়া যায়না। তাই শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই উপজেলা প্রশাসন পাবলিক স্থাপন করা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে আলোকিত করুক চিলমারী এবং এখানকার মাটি ও মানুষকে। এভাবেই বিশ্ব সভ্যতায় আলো ছড়াক চিলমারীতে। আমি ধন্যবাদ জানাই যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন।

(ঢাকাটাইমমস/১০ফেব্রুয়ারি/এসএ)