‘বাবা বেঁচে নেই, তাই সংসার চালাতে একটি চাকরি ভীষণ দরকার ছিল’

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৪| আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৫৭
অ- অ+

দুই বছর আগে আমার বাবা মারা গেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর পুরো সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়ে। সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য একটা চাকরি ভীষণ দরকার ছিল আমার। কিন্তু ঘুষ ছাড়া সামান্য ১২০ টাকায় চাকরি পাব, তা কখনো কল্পনাও করিনি। আমার এখন পুলিশে চাকরি হয়েছে, আমার পরিবার নিয়ে আর কষ্ট করতে হবে না।

বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়ে এভাবেই খুশিতে কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার শুভ গিরি (১৯)। তার চোখে আর মুখে ছিল বিজয়ের হাসি। তিনি এইবার মাদারীপুরে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। শুভ গিরি শিবচর উপজেলার সন্যাসীর চর ইউনিয়নের দৌলতপুর এলাকার মৃত সুভাষ চন্দ্র গিরি ও সনেকা রানীর ছেলে। সে এবছর খোয়াজপুর সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

সোমবার রাত ১০টার দিকে জেলা পুলিশ লাইনসের ড্রিল শেড মিলনায়তনে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় মনোনীত প্রার্থীদের মাদারীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়।

মাদারীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরকার ঘোষিত ২০২৩ সালের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পরীক্ষায় জেলা থেকে মাত্র ১২০ টাকা ফি দিয়ে ৪৫ টি পদের বিপরীতে ১ হাজার ১৪৮ জন চাকরি প্রত্যাশী অনলাইনে আবেদন করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ১ হাজার ২৩ জন চাকরী প্রত্যাশী নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখে যাত্রা শুরু হয়। পরে ১৮ তারিখে লিখিত পরিক্ষা ও ২৭ তারিখে মৌখিক পরীক্ষা শেষে মেধা তালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন কোঠা বিভাজন করে ৩৮ জন তরুণ ও ৭ জন তরুনীকে মনোনীত করা হয়।

ছেলের চাকুরিতে উত্তীর্ণ হওয়াতে খুশি হয়েছেন শুভর মা সনেকা রানী। তিনি বলেন, ওর বাবা মারা যাওয়ার পর মাদারীপুর শহরের একটি অফিসে চার হাজার টাকার বেতনের একটি চাকরি করত। ওর চাকরির সামান্য বেতন দিয়ে নিজের পড়াশোনা আর পরিবারডা চালাত। কখনো ছেলেডারে ভালো একটা জামা কিনে দিতে পারি নাই। আইজ ও চাকরি পাইছে, আমরা সবাই খুব খুশি।

চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও রাজবাড়ী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহউদ্দিন ও শরীয়তপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা, মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির।

নতুন কনস্টেবল নিয়োগে তরুণীদের মধ্যে প্রথম হয়ে চাকরি পাওয়া তৃষ্ণা বিশ্বাস বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। তিনি অনেক দিন ধরে অসুস্থ, তেমন কাজ করতেও পারেননা। যখন থেকে বড় হয়েছি নিজের টিউশনির টাকায় পড়াশোনা করেছি। কখনো ভাবি নি ঘুষ ছাড়া সরকারি চাকরি হবে। আজ আমার পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছে। আমি এখন দেশের জনগণের সেবা করতে চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, পুলিশের এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এখানে যারাই নির্বাচিত হয়েছে তারা তাদের নিজ যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে তাদের সরকারি ফিয়ের বাইরে কোনো টাকা খরচ হয়নি। যারা এই পদে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের কাছে আমাদের একটাই প্রত্যাশা, তারা যেন জনগণের সেবক ও জনগণের পুলিশ হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ওপারে কারফিউ, সুনামগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থান
খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখলের ভিডিও করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা